এবার প্রিমিয়ার লিগে চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে তো বসুন্ধরা কিংস!
গত বছর ডিসেম্বরের শেষের দিকে এ প্রশ্নটি বড় হয়ে উঠেছিল। বেশির ভাগ ফুটবল বোদ্ধারই উত্তর ছিল, ‘মনে হয় না!’ আসলে স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে আবাহনী লিমিটেডের কাছে কিংস ৩-০ গোলে উড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়েছিল ‘না’–পন্থীদের সংখ্যা।
মৌসুমের শুরুতে স্বাধীনতা কাপে শিরোপা খোয়ানোর পর কমলাপুর স্টেডিয়ামের বাজে টার্ফের কারণে ফেডারেশন কাপে অংশগ্রহণই করেনি তারা। ঘরোয়া ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আসর প্রিমিয়ার লিগের শুরুটাও হয়েছিল নবাগত স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘের বিপক্ষে হার দিয়ে। এতে প্রিমিয়ার লিগে কিংসের শিরোপা হারানোর পক্ষে জনমত যায় আরও বেড়ে। অথচ কাল দুই ম্যাচ হাতে রেখেই লিগ শিরোপা উদ্যাপন করেছে করপোরেট ক্লাবটি।
প্রিমিয়ার লিগে এটি তাদের হ্যাটট্রিক শিরোপা। এই তথ্যটা ব্যাখ্যা করলে তাদের হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নের মাহাত্ম্য যায় আরও বেড়ে। ২০১৮ সালে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফুটবলে নাম লেখানোর পর তিনটি লিগে অংশগ্রহণ করে তারা তিনটিতেই চ্যাম্পিয়ন। এতেই তো স্পষ্ট কিংসের নতুন রাজা হয়ে ওঠার গল্প।
বসুন্ধরার এমন দাপটের পর একটি প্রশ্ন উঠেই যায়, করপোরেট ক্লাবটি টাকা খরচ করে ভালো দল গঠন করেই কি একের পর এক চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাচ্ছে? যারা দেশের ফুটবলের খোঁজখবর রাখেন, তাঁরা বলবেন, না। যদি টাকা খরচ করে শক্তিশালী দল গঠন করে চ্যাম্পিয়নই হওয়া যেত, তাহলে ২০১৬-১৭ মৌসুমে লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা ছিল চট্টগ্রাম আবাহনীর আর এর পরের মৌসুমে সাইফ স্পোর্টিংয়ের। টাকার থলে নিয়ে নেমে শক্তিশালী দল গঠন করেও সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কাজটি করতে পারেনি তারা।
কে না জানেন, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য সবার আগে প্রয়োজন চ্যাম্পিয়ন মানসিকতা। যেটা আসে সাংগঠনিক দক্ষতা থেকে। আর সে সাফল্যের যদি ধারাবাহিকতা চান, তার সঙ্গে যোগ করতে হবে সাফল্যের ক্ষুধা। যে সংগঠকেরা ভালো খেলোয়াড়ের সঙ্গে সঙ্গে যোগ করবেন ভালো অনুশীলন মাঠ, ভালো কোচিং স্টাফ, আবাসন, মেডিকেল টিম ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা। এই সমীকরণ মিলিয়েই দেশের ফুটবলে নতুন রাজা হয়ে উঠেছে কিংস।
বাংলাদেশের ফুটবলে এবার প্রথমবারের মতো ইউরোপিয়ান কোনো দেশের জাতীয় দলে খেলা ফুটবলার উপহার দিয়েছে কিংস। বাংলাদেশে আলো ছড়াতে না পারলেও বসনিয়া জাতীয় দলে খেলা স্তোয়ান ভ্রানিয়েসের যোগ্যতা নিয়ে তো কোনো প্রশ্ন নেই। মাসখানেক আগে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভ্রানিয়েস বলেছিলেন, ‘বসুন্ধরা কিংসে ইউরোপিয়ান ক্লাবের সুযোগ-সুবিধা পেয়েছি।’ ভালো সুযোগ–সুবিধা দিতে পারে বলেই দলটিতে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের আধিক্যের সঙ্গে ভালো মানের বিদেশির স্থায়িত্ব হয়।
চলতি চুক্তি শেষ হওয়ার আগে পরবর্তী দুই মৌসুমের জন্য চুক্তি বাড়ানোর গল্পও লিখেছে তারা। যেটি করা হয়েছে দলের প্রাণভোমরা ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রবসন রবিনিওর সঙ্গে। কিংসের গল্প জানলে যেকোনো ব্যবসা সফল সিনেমার গল্পের মতো মনে হয়। একটা ভালো গল্প। দারুণ কিছু অভিনেতা। এক চিমটি কৌতুক। সঙ্গে বিয়োগাত্মক কোনো ঘটনা। বক্স অফিস মাতিয়ে দেওয়া সিনেমার সাধারণ সূত্র নাকি এটিই।
দলের নিয়মিত অধিনায়ক তপু বর্মণের কথা শুনলে এমনটাই মনে হবে। চোটের কারণে বর্তমানে মাঠের বাইরে থাকা সেন্টারব্যাক তপু প্রথম আলোকে বলছিলেন, ‘টাকা খরচ করলে যে চ্যাম্পিয়ন হবেন, তা না। এর আগে অন্য একটি ক্লাবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো দল গঠন করার পরেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি আমরা। কিন্তু কিংসে এমন সব সুযোগ–সুবিধা, আমাদের কোনো কিছু নিয়ে ভাবতে হয় না। যেকোনো সমস্যাতেই ক্লাব আমাদের পাশে থাকে। এতে ক্লাবের প্রতি আমাদের কমিটমেন্টও বেড়ে যায়। তাই দলটি বারবার চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে।’ কিংসের তিনটি লিগ শিরোপা জয়ের শেষ দুই মৌসুমে খেলেছেন তপু।
শুরু থেকেই ক্লাবের টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করে আসছেন জোবায়ের নিপু। খুব কাছ থেকে দেখে থাকেন দলের অন্দর মহল—‘আমি অনেক ক্লাবেই খেলেছি ও কোচিং করিয়েছি। কিংসের মতো পেশাদার ক্লাব আমাদের দেশে নেই। কোনো কিছুতে কোনো কার্পণ্য নেই। এখানে কোচ ও খেলোয়াড়দের সম্মান আছে। তাই আমরা সর্বোচ্চটা উজাড় করে দিতে পারি।’