ফুটবলপাগল জার্মানদের জন্য গতকাল ইউরো শুরুর দিনটি ছিল নানা দোলাচলে অবিমৃশ্য অনুভূতিতে ভরা। নিজেদের মাটিতে এত বড় টুর্নামেন্টে অপেক্ষাকৃত নতুন কোচ ইউলিয়ান নাগলসমান ও নতুন অধিনায়ক ইলকায় গুন্দোয়ান দলকে কত দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন?
মিউনিখের আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় কাল জার্মানি–স্কটল্যান্ডের উদ্বোধনী ম্যাচ শুরু হয় স্থানীয় সময় রাত ৯টায়। মাঠে বসে খেলা দেখার সুযোগ পেয়েছেন ৬৬ হাজার দর্শক। যাঁরা টিকিট পাননি, তাঁদেরও আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল এই ম্যাচ। গত কয়েকটি মহাদেশীয় ও বৈশ্বিক আসরে দলের দুর্দশার স্মৃতি মাথায় থাকলেও এবার নিজেদের মাটিতে ইউরো হওয়ায় বড় কিছুর আশায় বুক বেঁধেছেন জার্মানরা। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৫–১ গোলের জয়ে ক্রুস–ভির্টৎস–মুসিয়ালাদের কাছে প্রত্যাশা আরও বেড়ে গেছে।
গত ৬ বছরে জার্মানি ফুটবল দল বড় টুর্নামেন্টগুলোয় (বিশ্বকাপ, ইউরো, নেশনস লিগ) ব্যর্থ হওয়ায় অনেককেই বলতে শুনেছি, জার্মান ফুটবলের ঐতিহ্য শেষ। তবে গত রাতে দাপুটে জয় দেখার পর ভক্ত–সমর্থকেরা আবারও আশান্বিত হচ্ছেন। এবারের দল নিয়ে আশাবাদী জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ারও।
কাল আলিয়াঞ্জ অ্যারেনার গ্যালারিতে বসেই উদ্বোধনী ম্যাচ দেখেছেন স্টাইনমায়ার। খেলা শেষে তিনি বলেছেন, ‘জার্মানিতে এই ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ পুরো দেশকে আনন্দে ভাসাচ্ছে। আমি মনে করি, খেলোয়াড়েরা আজ (কাল) ভালো পারফর্ম করেছে এবং আমরা কিছুটা আশা করতে পারি যে এই সাফল্য অব্যাহত থাকবে।’
জার্মানিতে সাপ্তাহিক ছুটি থাকে শনি ও রোববার। গতকাল শুক্রবার ছিল ছুটির আগের রাত। জার্মান-স্কটল্যান্ড ম্যাচ শেষ হয় রাত ১১টা বাজার কিছুক্ষণ আগে। ফুটবলপ্রেমীরা জার্মানির সব বড় শহরেই পাবলিক ফ্যান অ্যারেনাগুলোয় গভীর রাত পর্যন্ত বিজয়োল্লাস করেন। অনেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। জার্মানির পতাকা হাতে ভেঁপু বাজিয়ে পুরো শহর ঘুরতে থাকেন।
জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করতে পারা যেকোনো দলের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। জার্মান কোচ নাগলসমান এই জয়কে তাই ‘ভালো ও গুরুত্বপূর্ণ’ বলেছেন। ৫–১ গোলের জয় দলের প্রতি সবার আস্থা ফেরাতে পারবে বলে বিশ্বাস তাঁর।
জার্মান সংবাদমাধ্যমগুলো ২১ বছর বয়সী দুই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার জামাল মুসিয়ালা ও ফ্লোরিয়ান ভির্টৎসকে ‘সফল অভিষেকের নায়ক’ বলেছে। ইউরোয় দুজনেরই এটা ছিল প্রথম ম্যাচ। গোল পেয়েছেন দুজনই। সেটাও ম্যাচের ২০ মিনিটের মধ্যে।
বড় পর্দায় খেলা দেখতে কাল ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেই বিভিন্ন পাবলিক অ্যারেনায় জড়ো হতে থাকেন ফুটবলপ্রেমীরা। সবচেয়ে বড় জমায়েত হয়েছিল রাজধানী বার্লিনের বান্ডেনবুর্গ–সংলগ্ন ফ্যান অ্যারেনায়। একসঙ্গে ৫০ হাজার দর্শক সেখানে ম্যাচ উপভোগ করেন। আর মিউনিখের অলিম্পিক পার্কের পাবলিক অ্যারেনার বড় পর্দায় খেলা দেখতে আসা দর্শকেরা রেফারি শেষ বাঁশি শোনার সঙ্গে সঙ্গে উচ্চস্বরে গাইতে থাকেন, ‘ভিয়ার আলে গেমাইনসাম’ (বাংলা অর্থ—আমরা সবাই একসঙ্গে)।
এবারের আগে সর্বশেষ ১৯৮৮ সালে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করেছিল জার্মানি। সর্বশেষ শিরোপা জিতেছিল ১৯৯৬ সালে। ২৮ বছরের আক্ষেপ জার্মানরা এবার ঘরের মাঠে ঘোচাতে পারবে কি না, সেই উত্তরটা না হয় সময়ের হাতেই তোলা থাক।