গভীর আবেগে জাতীয় সংগীত গেয়ে অনুশীলনে নামল মালদ্বীপ। গতকাল সন্ধ্যায় বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় ফ্লাডলাইটের আলোয় প্রায় দেড় ঘণ্টার অনুশীলনে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সেরেছেন দ্বীপ দেশটির ফুটবলাররা। রাতে একই ভেন্যুতে অনুশীলন করেছে বাংলাদেশও।
মালেতে প্রথম লেগের ম্যাচ ১-১ গোলে ড্র হয়েছে। আজ সন্ধ্যা পৌনে ছয়টায় কিংস অ্যারেনায় ফিরতি লেগ। অ্যাওয়ে গোলের সুবিধা থাকলে এ ম্যাচে বাংলাদেশের গোলশূন্য ড্র করলেই চলত। কিন্তু আজ ড্র হলে ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে গড়াবে, সেখানেও ফলাফল না হলে টাইব্রেকার। ২০২৬ বিশ্বকাপ প্রাক্–বাছাইয়ের ফিরতি লেগটা তাই দুই চেনা প্রতিপক্ষের জন্য হয়ে দাঁড়িয়েছে অলিখিত এক ফাইনাল। এই ম্যাচ যে দল হারবে, তারা আগামী প্রায় এক বছর ফিফা-এফসির ম্যাচ পাবে না।
দুই দেশের ফুটবলের জন্যই আজকের দিনটি তাই মহাগুরুত্বপূর্ণ। জিতলে আগামী মাসেই বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশ দল অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে প্রথম ম্যাচ খেলবে মেলবোর্নে। একে একে পাবে ৬টি ম্যাচ। হারলে ফিফা প্রীতি মাচ খেলা ছাড়া উপায় থাকবে না। এমন ম্যাচ জীবনবাজি রেখে লড়াই করা যায়।
এ কারণেই কিনা বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় কাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া বললেন, ‘এটি আমাদের জন্য ম্যাচ অব দ্য ইয়ার। বড় ম্যাচ, ফাইনাল অব দ্য ইয়ার।’
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ দল তুলনামূলক ভালো ফুটবল খেলছে। তার ওপর ঘরের মাঠে খেলা বাড়তি সুবিধাই। কোচ হাভিয়ের কাবরেরার সঙ্গে সুর মিলিয়ে জামাল বলেছেন, ‘এই মাঠ বসুন্ধরা কিংস ও শেখ রাসেলের হোম মাঠ। শুধু এই দুদলের খেলোয়াড়েরাই নয়, এখানে আমাদের অন্যরাও খেলে। ফলে আমাদের জন্য নিজেদের মাঠে খেলা একটা বাড়তি সুবিধাই।’
অবশ্য চেনা পরিবেশে খেললে প্রত্যাশার অদৃশ্য একটা চাপও থাকে। তবে জামাল বলেছেন, জয়ের বিকল্প তাঁরা ভাবছেন না, দিতে চান না কোনো অজুহাত। মালেতে ৮৭ মিনিটে গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ে অতিরিক্ত সময়ে ম্যাচে ফিরেছে বাংলাদেশ। দুদলের তুমুল লড়াইয়ের পর বাংলাদেশ দল ঢাকা ফিরেছে কিছুটা আশাবাদী মন নিয়ে।
কোচ কাবরেরাও তাই ভালো কিছুর প্রত্যাশায়, ‘অনেক দিন পর আমরা মালেতে ড্র করেছি, যেটা আমাদের আত্মবিশ্বাস দেবে। এখন আমরা চ্যালেঞ্জের জন্য তৈরি। ঘরে খেলব, অনেক দর্শকের সামনে খেলব। আমরা উজ্জ্বীবিত।’
বাংলাদেশের বড় সমস্যা গোল করার মতো খেলোয়াড়ের অভাব। দলে নেই শেখ মোরছালিনের মতো ফুটবলার। নিষেধাজ্ঞামুক্ত হলেও তাঁকে নেননি কোচ। মালের ম্যাচে একাদশে খেলা বিকল্প ফরোয়ার্ড ফয়সাল আহমেদের গোল মিস নিয়ে কথা উঠেছে। কোচ-অধিনায়ক অবশ্য আশাবাদী ফয়সাল গোল পাবেন।
গোলকরার ক্ষমতায় মালদ্বীপের ফুটবলাররাই এগিয়ে। দলের কোচ আলী সুজাইন এগিয়ে রাখছেন তাঁর দলকেও, ‘অনেকে মনে করতে পারেন, ঘরের মাঠে মালদ্বীপকে হারাবে বাংলাদেশ। তবে আমি মনে করি, আমরা জিততে পারি। ভালো মাঠে আমরা ভালো ফুটবল খেলতে পারি। এই মাঠ আমাদের মালের চেয়েও ভালো। ফলে এখানে আমরা ভালো খেলব। এটা আমাদের জন্য বাড়তি সুবিধা, বাংলাদেশের জন্য নয়।’
প্রতিপক্ষের মাঠ এতটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে কথা বলতে কোচদের কমই দেখা যায়। ব্যতিক্রম আলী সুজাইন। ছোট ছোট পাসে বিল্ডআপ ফুটবল খেলতে অভ্যস্ত মালদ্বীপ। মালের ম্যাচেও সেটা দেখা গেছে। গত জুনে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে যে মালদ্বীপ ৩-১ গোলে উড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের কাছে, তার চেয়ে মালেতে ঢের ভালো খেলেছে দলটি।
তবে বাংলাদেশ যেমন মালদ্বীপকে তাদের মাঠে কখনো হারাতে পারেনি, মালদ্বীপও বাংলাদেশের মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে জেতেনি। ঢাকায় তারা বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলছে ২০ বছর পর। দুদলের আগের ১৭ ম্যাচে মালদ্বীপ ৬টি ম্যাচ জিতেছে। বাংলাদেশের ৫ জয়, আর ড্র হয়েছে ৬টি ম্যাচ। মহাগুরুত্বপূর্ণ ষষ্ঠ জয়টা কি আজ পাবে বাংলাদেশ?