বছরখানেক ধরে প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার ছবি পোস্ট করতেন। সুদূর যুক্তরাষ্ট্র থেকে সবার কাছে দোয়া চাইতেন। কিন্তু আর নিজের জন্য দোয়া চাইবেন না স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অন্যতম উদ্যোক্তা সাইদুর রহমান প্যাটেল। ক্যানসারের কাছে হার মেনে আজ বিকেলে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে তাঁর অবদান অম্লান হয়ে থাকবে। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠনে সাইদুর রহমান প্যাটেল রেখেছিলেন অনন্য ভূমিকা। মুক্তিযুদ্ধের জন্য তহবিল সংগ্রহে ভারতে ঘুরে ঘুরে প্রীতি ম্যাচ খেলেছে স্বাধীন বাংলা দল। আর সেই দলকে সংগঠিত করেন সাইদুর রহমান প্যাটেল।
স্বাধীন বাংলা দল গঠনের বিবরণ সাইদুর রহমান দিয়ে গেছেন এভাবে, ‘মে মাসের মাঝামাঝি। আমরা তখন কলকাতায় সুবোধ সাহার বাসায়। হঠাৎ চিন্তা আসে ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে কীভাবে স্বাধীনতাযুদ্ধে অবদান রাখতে পারি। মনে মনে তখনই একটা ফুটবল দল গঠনের ইচ্ছা জাগে। সে দলের খেলা থেকে যে অর্থ আসবে, তা দিয়ে দেওয়া হবে মুক্তিযুদ্ধের তহবিলে। স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গড়তেও বিরাট ভূমিকা রাখবে সেটি।’
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্য শেখ আশরাফ আলী প্যাটেলের মৃত্যুতে স্বজন হারানোর ব্যথায় কাতর, ‘প্যাটেলের চলে যাওয়া আমার জন্য অনেক কষ্টের। আমি গেন্ডারিয়ায় থাকতাম। সেই সুবাদে ও ছিল আমার প্রিয় ছোট ভাই। ও-ই আমাকে প্রস্তাব দিয়েছিল স্বাধীন বাংলা দলে যোগ দিতে। ওর কথাতেই আমি যোগ দিই ঐতিহাসিক এই দলে। স্বাধীন বাংলা দলের মূল উদ্যোক্তা ছিল প্যাটেল। ইতিহাস ওকে স্মরণ রাখবে চিরকাল।’
গত জানুয়ারিতে দেশের সাধারণ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন প্যাটেল। কিন্তু নির্বাচনের আগেই যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান চিকিৎসা নিতে। প্রায় এক বছর সেখানে চিকিৎসা নিলেও আর দেশে ফেরা হলো না। ছেলে–মেয়েদের লেখাপড়ার স্বার্থে ১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। ফেরেন ২০১৩ সালে। সেই থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া–আসার মধ্যেই ছিলেন।
সাইদুর রহমান প্যাটেলের জন্ম ১৯৫১ সালের ৭ অক্টোবর ঢাকার কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদে। তাঁর এক বছর বয়সে পরিবার আবাস গড়ে গেন্ডারিয়ার দীননাথ সেন রোডে। সেই সুবাদে তিনি হয়ে যান গেন্ডারিয়ার ছেলে। তরুণ বয়স থেকে রাজনীতি করতেন। পাশাপাশি খেলেছেন ফুটবলও। ঢাকার শীর্ষ ফুটবলে খেলেন ইস্টএন্ডের জার্সিতে। ১৯৬৮ সালে দ্বিতীয় বিভাগে ফরাশগঞ্জের হয়ে, ’৭০ সালে নাম লেখান প্রথম বিভাগে দল পিডব্লুডিতে।
প্যাটেলের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন।