জিততেই ভুলে গেছে চেলসি
জিততেই ভুলে গেছে চেলসি

চেলসিকে করতে হবে ‘অসাধ্য–সাধন’, নাপোলিকে ডাকছে ‘প্রথম’

কোয়ার্টার ফাইনালের ফিরতি লেগে স্টামফোর্ড ব্রিজে অতিথি রিয়াল মাদ্রিদ। নাপোলির প্রতিপক্ষ মিলান।

সপ্তাহ দুয়েক আগে টড বোয়েলির ওই ফোনটা ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের কাছে না গিয়ে কার্লো আনচেলত্তির কাছেও যেতে পারত।

একসময় চেলসির কোচ ছিলেন আনচেলত্তি। প্রিমিয়ার লিগও জিতিয়েছেন। এর আগে-পরেও কোচ হিসেবে তাঁর বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার। ক্লাবের খারাপ সময়ে তাঁর মতো একজনকেই তো সবার আগে মনে পড়ার কথা চেলসির মালিকের। হয়তো পড়েও ছিল। কিন্তু লাভ কী! আনচেলত্তি এখন রিয়াল মাদ্রিদের কোচ। ওটা ছেড়ে তো আর চেলসির দায়িত্ব নেবেন না। গ্রাহাম পটারকে ব্যর্থতার দায়ে বরখাস্ত করার পর বোয়েলি তাই শরণ নিলেন ল্যাম্পার্ডের।

লড়াই হবে। এর জন্য আমাদের পারফরম্যান্স পরের ধাপে নিয়ে যেতে হবে। যদি সেটা করতে পারি, দলের যে সামর্থ্য, আমরা পারব। স্টামফোর্ড ব্রিজে এমন অনেক রাতের সাক্ষী তো আমি নিজেই।
ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড, চেলসি কোচ
সমর্থকেরাই আমাদের শক্তি। ওরা যদি আরও একবার আমাদের পাশে থাকে, নেপলসের দেয়ালের দখল আমাদেরই থাকবে। আমরা সবাই তখন ম্যারাডোনা হয়ে যাব।
লুসিয়ানো স্পাল্লেত্তি, নাপোলি কোচ

ল্যাম্পার্ড চেলসির কিংবদন্তি। চেলসির ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলোয়াড়দের একজন। পরে কোচ হয়েও ফিরেছিলেন ২০১৯ সালে। কিন্তু ১৯ মাসের সেই সময়টা খুব একটা সুখকর ছিল না। ব্যর্থতার দায় নিয়েই তখন সরে যেতে হয়েছিল তাঁকে। তবে চেলসি আছে তাঁর মনপ্রাণ জুড়ে। এই মৌসুমের বাকি সময়টার জন্য যখন তাঁকে আবার কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাব দিলেন বোয়েলি, ‘না’ করতে পারেননি ল্যাম্পার্ড।

প্রথম লেগের ফল এবং আমাদের পারফরম্যান্সে আমরা সন্তুষ্ট। কিন্তু খেলা এখনো শেষ হয়নি। স্টামফোর্ড ব্রিজে আরও ৯০ মিনিট আমাদের লড়তে হবে, ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।
কার্লো আনচেলত্তি, রিয়াল মাদ্রিদ কোচ

‘হ্যাঁ’ বলে আসলে যেন জেনেশুনে বিষ পানই করলেন ল্যাম্পার্ড। চেলসির এখন এমন বাজে সময় চলছে, এই দলকে টেনে তোলার কাজটা বিশ্বের সেরা কোচদের জন্যও কঠিন হওয়ার কথা। ল্যাম্পার্ডও দিশা পাচ্ছেন না কোনো। উলভসের কাছে লিগে হার দিয়ে শুরু, তারপর রিয়াল মাদ্রিদের মাঠে চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে ২-০ গোলে হার, এরপর আবার লিগে হার ব্রাইটনের কাছে। সেই চেলসি আজ আবার নিজের মাঠে রিয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি হবে।

দুই দলের জন্যই কঠিন ম্যাচ। এখনো দুই দলেরই সমান সুযোগ পরের রাউন্ডে যাওয়ার। আমার একমাত্র আক্ষেপ, আমরা প্রথম লেগে আরও একটা গোল করতে পারলাম না!
স্টেফানো পিওলি, মিলান কোচ

কার্লো আনচেলত্তি স্টামফোর্ড ব্রিজে ফিরছেন ঠিকই, তবে প্রতিপক্ষ হয়ে! প্রিমিয়ার লিগে ১১ নম্বরে থাকা চেলসি রিয়ালের বিপক্ষে এই ব্যবধান ঘুচিয়ে সেমিফাইনালে যাবে, এমন স্বপ্ন দেখা সবচেয়ে আশাবাদী চেলসি সমর্থকের জন্যও খুবই কঠিন। অন্য কোনো প্রতিপক্ষ হলে তবু কথা ছিল। চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে খেলা আর খালি হাতে জঙ্গলে গিয়ে বাঘের মুখে পড়া একই কথা। এটা জানেন বলেই ল্যাম্পার্ড আগেই বলে রেখেছেন, ‘ফুটবলের সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স দেখা যায় চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল মাদ্রিদের খেলায়।’

তাহলে কি চেলসির কোনোই আশা নেই? ল্যাম্পার্ড কিছুটা প্রেরণা নিতে পারেন গত মৌসুমের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই। স্টামফোর্ড ব্রিজে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে ৩-১ গোলে হারের পর সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে গিয়ে রিয়ালের বিপক্ষে একসময় ৩-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল চেলসি। শেষ পর্যন্ত সেই ম্যাচেও রিয়াল পরে ২ গোল করে ব্যবধান ৩-২ করেছিল এবং দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৪ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে উঠে গিয়েছিল সেমিফাইনালে। কিন্তু বার্নাব্যুতে গিয়ে যদি রিয়ালকে ৩ গোল দেওয়া যায়, স্টামফোর্ড ব্রিজে কেন নয়! এই সাহসই হতে পারে আজ চেলসির সবচেয়ে বড় শক্তি।

প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে খেলতে চায় নাপোলি

চেলসি-রিয়ালের ডামাডোলে রাতের অন্য ম্যাচটা নিয়ে আলোচনা কিছুটা কমই হচ্ছে। তবে নাপোলি-মিলানের মধ্যে ইতালিয়ান ডার্বিটাই হতে পারে তুলনামূলক বেশি আকর্ষণীয় ও উপভোগ্য। এই মৌসুমে ইউরোপে সবচেয়ে চমক দেখানো দলের নাম সম্ভবত নাপোলি। অসাধারণ খেলে যারা সিরি ‘আ’তে ৩০টি করে ম্যাচ শেষে দ্বিতীয় স্থানে থাকা লাৎসিওর চেয়ে ১৪ পয়েন্ট এগিয়ে। ২৩ বছর পর লিগ জেতার খুব কাছাকাছি থাকা দলটা স্বপ্ন দেখছে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগে সেমিফাইনালে খেলার এবং আরও বড় কিছু করারও। সেই স্বপ্নের পথে আজ নাপোলির বাধা এমন একটা দল, যারা ইউরোপে সাতবারের চ্যাম্পিয়ন।

একটু বিস্ময়কর লাগতে পারে, যে নাপোলি লিগে এমন অপ্রতিরোধ্য, তারাই মিলানের কাছে পরপর দুটি ম্যাচে হেরে গেছে। সিরি ‘আ’তে ৪-০ গোলে, তারপর চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে ১-০ গোলে। সান সিরোর সেই প্রথম লেগে অবশ্য খেলতে পারেননি এই মৌসুমে নাপোলির সবচেয়ে ফর্মে থাকা স্ট্রাইকার ভিক্টর ওশিমেন।

আজ মিলানের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জও হবে এই মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩০ ম্যাচে ২৫ গোল করা নাইজেরিয়ান এই স্ট্রাইকারকে সামলানোই।