ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো গত জানুয়ারিতে আল নাসরে যোগ দিয়েছিলেন বছরে ২০ কোটি ইউরো পারিশ্রমিকে। যে চুক্তি তাঁকে ক্রীড়া ইতিহাসের সবচেয়ে পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত ক্রীড়াবিদে পরিণত করেছিল। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে সৌদি আরবের প্রো লিগের দল আল ইত্তিহাদে নাম লিখিয়েছেন করিম বেনজেমা। রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে চুক্তির এক বছর বাকি থাকতেই সৌদি ক্লাব ফুটবলে যোগ দিয়েছেন বেনজেমা। অর্থের হাতছানি উপেক্ষা করতে পারেননি। আরেক সৌদি ক্লাব আল হিলাল তো লিওনেল মেসির পিছু ছুটেছে। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের প্রস্তাবটা ছিল রীতিমতো অবিশ্বাস্য—বছরে ৪০ কোটি ইউরো। যদিও মেসি সেই অর্থের হাতছানি উপেক্ষা করেছেন। গত সপ্তাহে জানিয়েছেন, তিনি যোগ দিতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের দল ইন্টার মায়ামিতে।
কিন্তু সৌদি ক্লাবগুলোর বিশাল অঙ্কের অর্থের হাতছানি কতজন উপেক্ষা করতে পারবেন, সেটি নিয়ে প্রশ্ন আছে। শোনা যাচ্ছে, ইউরোপের শীর্ষ লিগে খেলা বেশ কয়েকজন তারকা ফুটবলারকেই নাকি লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে সৌদি আরবের কয়েকটি ক্লাব। এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমার।
সৌদি আরবে খেলতে গেলেই প্রচুর টাকা—এমন একটা ধারণা তৈরি হয়েছে জনসাধারণের মধ্যে। তবে এমন ধারণা একেবারেই সত্যি নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ‘দ্য আথলেটিক’র খবর অনুযায়ী সৌদি প্রো লিগে পেট্রোডলারের ঝনঝনানি আছে ঠিকই, কিন্তু সৌদি লিগে খেলে খেলোয়াড়দের ঠিকমতো বেতন না পাওয়া, চুক্তির বরখেলাপ ইত্যাদি ঘটনাও প্রচুর আছে। অ্যাথলেটিক জানাচ্ছে, ফিফার ‘ডিসপিউট রেজল্যুশন’ চেম্বারে গত এক বছরে সৌদি লিগ থেকে ৫০টি এমন অভিযোগ জমা পড়েছে। বিশ্বব্যাপী পেশাদার ফুটবলারদের সংগঠন ফিফপ্রো সৌদি লিগে খেলতে যাওয়ার ব্যাপারে ফুটবলারদের সতর্কও করে দিয়েছে। এই সংগঠনটি বিশ্বব্যাপী ৬৫ হাজার পেশাদার ফুটবলারের অধিকার নিয়ে কাজ করে।
অ্যাথলেটিক সৌদি লিগে খেলা নটিংহ্যাম ফরেস্টের সাবেক ইংলিশ ফুটবলার লুইস গ্র্যাবানের পরিণতির খবর দিয়েছে। গ্র্যাবান একসময় বোর্নমাউথেও খেলেছেন। গত বছর তিনি সৌদি প্রো লিগের দল আল আহলিতে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁর দাবি, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ১ লাখ ১৫ হাজার পাউন্ড সাইনিং বোনাস ও দুই মাসের বেতন পাননি। দুই মাসের বেতন বাবদ তাঁর বকেয়া আরও ১ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড। এক বছরের চুক্তির তিন মাস যেতে না যেতেই তাঁকে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে।
আল আহলি ক্লাব সৌদি আরবের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের অধিকৃত অন্যতম ক্লাব। এই ফান্ডের অধীনে যে কটি ক্লাব আছে, তারা হচ্ছে আল নাসর, আল হিলাল ও আল ইত্তিহাদ। সৌদি পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড পরিচালিত হয়ে সৌদি রাজপরিবারের অর্থে। এটি বর্তমানে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম শীর্ষ ক্লাব নিউক্যাসল ইউনাইটেডেরও স্বত্বাধিকারী। আল আহলি ক্লাবের বিরুদ্ধে খেলোয়াড়দের সঙ্গে চুক্তিভঙ্গের চারটি অভিযোগ ফিফার কাছে গেছে গত ১৮ মাসে। ক্লাবটিকে শাস্তিও দেওয়া হয়েছে। আগামী দুই বছর এই ক্লাব নতুন করে কোনো খেলোয়াড় রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে না।
আল আহলিই শুধু নয়, খেলোয়াড়দের সঙ্গে চুক্তির বরখেলাপের অভিযোগ উঠেছে রোনালদোর আল নাসরের বিরুদ্ধেও। গত নভেম্বরে আল নাসর বাধ্য হয়েছে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার পেত্রোকে ২.৬ মিলিয়ন ডলার জরিমানা দিতে। ইংল্যান্ডে এ ধরনের সমস্যার সমাধানে খেলোয়াড়দের ইউনিয়ন ভূমিকা পালন করে। দুনিয়ার অন্যান্য উন্নত ফুটবল খেলুড়ে দেশেও খেলোয়াড়দের ইউনিয়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু সৌদি আরবে খেলোয়াড়দের পক্ষে দাঁড়ানোর কোনো সংগঠনই নেই। সে কারণেই বিশব্যাপী পেশাদার ফুটবলারদের সংগঠন সে কারণেই ফুটবলারদের সৌদি আরবের ‘বিশাল অঙ্কে’র প্রস্তাব পেলে ভেবেচিন্তে তা গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছে।