টটেনহামের সঙ্গে তাহলে হ্যারি কেইনের ১৯ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন হতে চলেছে! ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর একের পর এক প্রতিবেদন দেখে অন্তত সে রকমই মনে হচ্ছে।
এমনিতে আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত টটেনহামের সঙ্গে চুক্তি আছে কেইনের। চুক্তি নবায়ন না করলে এরপর তিনি হয়ে যাবেন ফ্রি এজেন্ট। তবে আসছে গ্রীষ্মকালীন দলবদলেই ইংলিশ অধিনায়ককে পেতে উঠেপড়ে লেগেছে বেশ কয়েকটি পরাশক্তি ক্লাব।
এত দিন কেইনের সম্ভাব্য নতুন ঠিকানা হিসেবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও রিয়াল মাদ্রিদের নাম শোনা গেলেও সে তালিকায় এবার যুক্ত হয়েছে বায়ার্ন মিউনিখ। জার্মানির সবচেয়ে সফল ক্লাবটি এরই মধ্যে কেইনের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির শীর্ষ দৈনিক ‘বিল্ড’–এর ফুটবল বিভাগের প্রধান ক্রিস্টিয়ান ফক।
এক প্রতিবেদনে তিনি লিখেছেন, ‘হুলিয়ান আলভারেজকে (ম্যানচেস্টার সিটি থেকে) ধারে বায়ার্ন মিউনিখে নিয়ে আসা দারুণ ব্যাপার হবে। এরিক চুপো-মোটিংকে চুক্তির মেয়াদ এক বছর বাড়ানোরও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। শুধু তা–ই নয়, হ্যারি কেইনকে এখনো পাওয়ার আশা আছে। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগও হয়েছে।’
‘এখনো পাওয়ার আশা’ বলতে সাংবাদিক ফক ২০১৮ সালের কথা বুঝিয়েছেন। ওই বছরের জুনে রাশিয়া বিশ্বকাপের ঠিক আগে টটেনহামের সঙ্গে শেষবার চুক্তি নবায়ন করেন কেইন। সে সময়ও তাঁকে প্রস্তাব দিয়েছিল বায়ার্ন। তবে সে প্রস্তাব নাকচ করে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ গোলদাতা থেকে যান টটেনহামেই।
এখন শোনা যাচ্ছে, কেইন নিজেও আর টটেনহামে থাকতে চান না। ২০০৯ সালে ক্লাবটির মূল দলে যোগ দেওয়ার পর অনেক প্রথমের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁর নাম। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এক ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ গোল, টটেনহাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা, ক্লাবটির হয়ে ৩০০ ম্যাচ খেলার মাইলফলক, টানা ৮ মৌসুম ক্লাবের সর্বোচ্চ গোলদাতা, লন্ডন ডার্বিতে সর্বোচ্চ গোলের মালিক এই স্ট্রাইকার। তবে ব্যক্তিগত অর্জনের পাল্লা ভারী হলেও দলীয় অর্জনে শুধুই শূন্যতা।
শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলে ১৪ বছর খেলেও কোনো ট্রফি জিততে পারেননি কেইন। টটেনহামের চেয়ারম্যান ড্যানিয়েল লেভিও শিরোপা জেতার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী দল গড়তে খুব একটা তৎপর নন। বারবার কোচ বদলানোর কারণেও কৌশলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে খেলোয়াড়দের। গত দেড় মাসে তিন কোচের অধীনে খেলছেন তাঁরা। সব মিলিয়ে ক্লাবের বাজে অবস্থা ও শিরোপা জিততে না পারার হতাশা ভর করাতেই লন্ডনের ক্লাবটি ছাড়তে চাইছেন কেইন।
এ মৌসুমেও দুর্দান্ত ছন্দে আছেন কেইন। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এখন পর্যন্ত করেছেন ২৮ গোল। এরপরও টটেনহাম আছে পয়েন্ট তালিকার ৮ নম্বরে। মানে, লন্ডনের ক্লাবেই থেকে গেলে আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ বা ইউরোপা লিগের কোনোটিতেই খেলা হবে না কেইনের। অথচ তাঁর যে পরিসংখ্যান, তাতে এই মৌসুমে অনেক কিছুই প্রাপ্য ছিল।
কিন্তু কেইন পড়ে গেছেন আর্লিং হলান্ডের আড়ালে। ম্যানচেস্টার সিটি স্ট্রাইকার ৩৬ গোল করে ‘গোলমেশিন’ তকমা নিয়েছেন। ইউরোপের শীর্ষ লিগগুলোর মধ্যে হলান্ডই একমাত্র খেলোয়াড়, যিনি এ মৌসুমে কেইনের চেয়ে বেশি গোল করেছেন। কেইন ছাড়াও ২৮টি করে গোল করেছেন পিএসজির কিলিয়ান এমবাপ্পে ও ফেনেরবাচের এনার ভ্যালেন্সিয়া।
ফক তাঁর প্রতিবেদনে আরও লিখেছেন, কেইন যদি এবারও বায়ার্নও ‘না’ বলে দেন, সেটার বিকল্পও ভেবে রেখেছে জার্মান ক্লাবটি। তাদের পছন্দের ফরোয়ার্ডদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় আছেন আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টের কোলো মুয়ানি।
এর আগে ব্রিটিশ দৈনিক ‘টাইমস’ জানিয়েছিল, কেইনকে বিক্রি করতে রাজি হয়েছে টটেনহাম। ইংলিশ অধিনায়ককে ছাড়তে আকাশচুম্বী দাম বেঁধে দিয়েছে তারা। অঙ্কটা ১১ কোটি ৪৩ লাখ ইউরো, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১ হাজার ২৮৯ কোটি ১৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।