ম্যানচেস্টার সিটির ইংলিশ উইঙ্গার জ্যাক গ্রিলিশের বাসায় চুরি হয়েছে গত বছর
ম্যানচেস্টার সিটির ইংলিশ উইঙ্গার জ্যাক গ্রিলিশের বাসায় চুরি হয়েছে গত বছর

কীভাবে চুরি হয় ফুটবলারদের বাসায়

কথায় আছে, ‘চোরের দশ দিন, গৃহস্থের এক দিন।’ অর্থাৎ অসাধুতা মানে চুরি একদিন না একদিন ধরা পড়বেই। কিন্তু ইউরোপের ফুটবলারদের ক্ষেত্রে কথাটা আপাতত খাটছে না। ফুটবলারদের বাসায় চুরি-ডাকাতির ঘটনা যেভাবে ঘটছে, দুষ্কৃতকারীরা সে তুলনায় অতটা ধরা পড়ছে না।

গত ডিসেম্বরে ম্যানচেস্টার সিটি তারকা জ্যাক গ্রিলিশের বাসায় চুরি হয়। একই মাসে চুরি হয় ওয়েস্ট হামের কুর্ট জুমার বাসায়ও। বিভিন্ন সময়ে ভুক্তভোগীদের এই তালিকায় নাম উঠেছে রাহিম স্টার্লিং, থিয়াগো সিলভা, আনহেল দি মারিয়া, মাউরো ইকার্দি, দানি আলভেজ, প্রেসনেল কিম্পেম্বে, এরিক ম্যাক্সিম চুপো-মোটিং, মারকিনিওসদেরও। নগদ টাকা থেকে অলংকারসহ বিভিন্ন বিলাসবহুল দ্রব্য নিয়ে গেছে চোরেরা।

ফুটবলারদের বিলাসবহুল বাসায় চুরিগুলো কীভাবে সংঘটিত হয়, তা অনুসন্ধান করেছে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম এএস।

টার্গেট

নজর রাখার কাজটা বেশির ভাগ সময় বাসা থেকেই সারে দুষ্কৃতকারীররা। কিছু কিছু অপরাধী চক্র দেশের বাইরে থেকেও এই কাজ করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে দুষ্কৃতকারীরা। ফুটবলাররা মূল্যবান কোনো সামগ্রীসহ ছবি পোস্ট করলে অপরাধী চক্রের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন তাঁরা। লক্ষ্য স্থির হওয়ার পর প্রয়োজনে দেশের বাইরে থেকে এসেও দুষ্কর্ম ঘটায় অপরাধী চক্র।

সদাইপাতির তালিকা

এএস এই অংশের নাম দিয়েছে ‘শপিং লিস্ট’, মানে যে বাসায় দুষ্কর্মটি সাধন করা হবে, সেই বাসায় কী কী আছে এবং কী নিতে হবে, সেসব বিষয় আগে থেকেই ঠিকঠাক করে নেওয়া। অপরাধী চক্র এসব জেনে নিয়েই ফুটবলারদের বাড়িতে অপকর্ম করতে ঢোকে। মূল্যবান সামগ্রী কী কী আছে, সেসব আগে জেনে তারপর অভিযান চালানো হয়। অন্যভাবে বললে, কোন বাসায় কী আছে, তা না জেনে কেউ চুরি করতে কিংবা ডাকাতি করতে যায় না। কারণ, বাসায় গিয়ে খোঁজাখুঁজি করে মূল্যবান সামগ্রী বের করার জন্য সময় থাকে খুব কমই।

চুরি হয়েছে থিয়াগো সিলভার বাসাতেও

বাসার নিরাপত্তাব্যবস্থা

কী কী নেওয়া হবে, তা নির্ধারণের পর গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো বাড়ির নিরাপত্তাব্যবস্থা। বাড়ির আশপাশ ঘুরে এবং প্রযুক্তির সাহায্যে অপরাধী কিংবা অপরাধীর দল আগে নিরাপত্তাব্যবস্থাটা বুঝে নেয়। নিরাপত্তা কতটা শক্ত, সেটি ভাঙতে কেমন সময় লাগবে এবং সেটা কতটা নিরাপদ—এসব বিষয় হিসাব করা হয়। অপরাধীদের এই দল কিন্তু পেশাদার। কারও কারও প্রযুক্তিগত জ্ঞান চমকে দেওয়ার মতোও। নিরাপত্তাব্যবস্থা খুব শক্ত হলে কিংবা ভাঙতে সময় লাগলে অনেকেই আর ঝুঁকি নেয় না। তবে দুঃসাহসী হলে ভিন্ন কথা। এখানে সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

রেকি করা

এক বা একাধিক অপরাধী বাসার চারপাশটা খুব ভালো করে খেয়াল রাখেন। বাসার লোকজন কখন ঘুমায়, কখন বের হয়—এসবের পাশপাশি সে বাসার আশপাশের বাসার লোকজনের চলাফেরাও খেয়াল করা হয়। মোটামুটি বাসাটি এবং আশপাশের সবকিছুর গতিবিধি খুব ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নেওয়া হয়, যেন পরিকল্পনায় কোনো গড়বড় না হয়। এমনকি বাসায় বসবাসকারীরা কে কখন কী করেন, সাপ্তাহিক ছুটি কোথায় কাটান—এসবেও নজর রাখা হয়। সাধারণত এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ন্যূনতম দুই সপ্তাহ সময় লাগে।

ড্রোন

চোর-ডাকাতের দল, বিশেষ করে পেশাদার অপরাধী চক্র বাসায় ঢোকার আগে ড্রোনের সাহায্যও নেয়। বাসার আশপাশে কোনো কিছু চোখ এড়িয়ে গেলে ড্রোন সেই ভুল ধরিয়ে দেয়। কিংবা বাসায় ঢোকার পর বাইরের লোকজনের গতিবিধিতেও ড্রোনের মাধ্যমে নজর রাখা হয়।

চোররা ছাড়েনি দি মারিয়াকেও

পরিকল্পনা

নজর রাখা, নিরাপত্তাব্যবস্থা যাচাই এবং রেকি করার পর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়। বাসার কোন পথ দিয়ে ঢুকতে হবে, বের হতে হবে কোন দিক দিয়ে, বাসায় কতক্ষণ থাকতে হবে—এসব। এমনকি বাসায় ঢুকে কোন কামরায় কতবার পা ফেলে কাজ সারতে হবে, সেসবও থাকে পরিকল্পনায়। ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিকল্পনা খুব কম ক্ষেত্রেই পাল্টানো হয়। কারণ, তাতে ঝুঁকি বাড়ে।

বাসায় ঢোকা

বেশির ভাগ বাসার সামনেই থাকে রাস্তা। সেই রাস্তা থেকে বাসায় ঢোকার কাজটা বেশির ভাগ পেশাদার অপরাধীই এড়িয়ে যায়। কারণ, ক্যামেরা থাকে রাস্তায়। অন্য কোনো পথ কিংবা বাসার যে অংশে নিরাপত্তাব্যবস্থা অতটা ভালো নয়, সেই অংশটা বেছে নেওয়া হয় ঢোকার জন্য। বাসার পাশে বনাঞ্চল আছে কিংবা গলফ কোর্স—এমন জায়গা তাদের অপকর্ম সাধনের জন্য সুবিধাজনক। তবে রাস্তা দিয়ে ঢুকতে হলে ছদ্মবেশও নেয় অপরাধী চক্র। টেকনিশিয়ানস কিংবা অন্য পেশার ছদ্মবেশে তারা বাসায় ঢোকে।

বাসার ভেতরে...

সাধারণত বাসায় কেউ না থাকা অবস্থায় অনুপ্রবেশ করে অপরাধী চক্র। দুষ্কৃতকারী একাধিক হলে বাসার ভেতরে বিভিন্ন কামরা থেকে মূল্যবান সামগ্রী নেওয়ার কাজটি তারা ভাগ করে নেয়। কখনো সঙ্গে অস্ত্র থাকে, কখনো না–ও থাকতে পারে। বাধা এলে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বাসায় কেউ থাকলে তাঁকে আটক করে এক কোণে ফেলে রাখা হয় কিংবা মূল্যবান সামগ্রী তাঁকে ব্যবহার করে বের করা হয়।

ইংলিশ ফরোয়ার্ড রাহিম স্টার্লিংও শিকার চুরির

চুরির মাল বিক্রি

কখনো কখনো চুরির আগেই কাজটি করা হয়। অর্থাৎ যা চুরি করা হবে, সেসব আগেই বিক্রির কথাবার্তা পাকা করে ফেলা হয়। উদাহরণস্বরূপ, কোনো ফুটবলারের কাছে দামি ঘড়ির সংগ্রহ থাকলে জেনে নেওয়া হয়, সেসব ঘড়ির জন্য ক্রেতা কত দাম দেবে। এভাবে বোঝা যায়, চুরি কিংবা ডাকাতিটা লাভজনক হচ্ছে কি না। একজন বিশেষজ্ঞ এই কাজ করেন, যিনি সরাসরি চুরি-ডাকাতিতে অংশ নেন না।