ইংল্যান্ডের ফুটবলে কোচদের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রসঙ্গ এলে একসময় স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন আর আর্সেন ওয়েঙ্গারের মধ্যে লড়াইয়ের বিষয়টি সামনে আসত। সময়ের পরিক্রমায় সেটা এখন রূপ নিয়েছে পেপ গার্দিওলা-ইয়ুর্গেন ক্লপ লড়াইয়ে।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের প্রতি মানুষের আগ্রহ বজায় থাকার অন্যতম কারণও গার্দিওলা-ক্লপ। গত ছয় মৌসুম প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা–দৌড়েও সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটি আর ক্লপের লিভারপুলের মধ্যে। তবে ২০২৩-২৪ মৌসুম শেষে ক্লপ লিভারপুল ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ায় দুজনের লড়াই আর দেখা যাবে না।
প্রায় ৯ বছর লিভারপুলের ডাগআউটে দাঁড়ানো ক্লপ ক্লাবটিকে সম্ভাব্য সব শিরোপা এনে দিয়েছেন। অ্যানফিল্ডে নিজের শেষ মৌসুমেও নিশ্চয় দলকে লিগ শিরোপা জেতাতে চাইবেন। দলের খেলোয়াড়েরাও তাঁর বিদায়টা স্মরণীয় করে রাখতে চাইবেন। ২২ ম্যাচে ৫১ পয়েন্ট নিয়ে এ মুহূর্তে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষেও আছে লিভারপুল। এক ম্যাচ কম খেলে ৪৬ পয়েন্ট নিয়ে ম্যানচেস্টার সিটি আছে দুইয়ে। তবে ক্লপের দাবি, লিভারপুল ছাড়ার ঘোষণা তাঁর দলের লিগ জেতার জন্য বাড়তি প্রেরণা নয়; বরং গার্দিওলার সিটির হুমকিই প্রতিটি ম্যাচ জয়ের প্রেরণা।
গত ২৬ জানুয়ারি ক্লপের লিভারপুল ছাড়ার ঘোষণার পর দুটি ম্যাচ খেলেছে তাঁর দল। দুই ম্যাচেই প্রতিপক্ষকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছে অল রেডরা। এফএ কাপে চতুর্থ রাউন্ডে নরউইচ সিটির বিপক্ষে জিতেছে ৫-২ ব্যবধানে, প্রিমিয়ার লিগে চেলসিকে হারিয়েছে ৪-১ ব্যবধানে। সেটাও দলের প্রাণভোমরা মোহাম্মদ সালাহকে ছাড়াই।
ক্লাব ছাড়ার ঘোষণার কারণেই খেলোয়াড়েরা আরও বেশি মরিয়া হয়ে খেলছেন কি না, আজ আর্সেনালের বিপক্ষে ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে ক্লপকে এ প্রশ্ন করা হয়েছিল। জবাবে ৫৬ বছর বয়সী জার্মান কোচ বলেছেন, ‘এক সপ্তাহ আগে আমি যে ঘোষণা দিয়েছি, সেটা যদি না দিতাম, তাহলে কি ভিন্ন কিছু হতো? আমি শুধু সামান্য পার্থক্য দেখতে পাচ্ছি। সেটা হলো এখন মানুষ বলতে পারছে “ক্লপের জন্য (খেলোয়াড়েরা সর্বস্ব দিয়ে খেলছে)”। এটাই একমাত্র ব্যাপার। আর কিছুই বদলায়নি। আমার মনোভাব একই রকম আছে।’
তবে লিভারপুলকে প্রিমিয়ার লিগ জিতিয়েই অ্যানফিল্ড ছাড়তে চান, সেই আশাবাদও ব্যক্ত করেছেন ক্লপ, ‘অবশ্যই আমি লিগ জিততে চাই। সত্যিই কি আমাদের সেই সুযোগ আছে? এখন মনে হচ্ছে, আমরা (লিগ জয়ের) কাছাকাছি আছি। কিন্তু এখনো অনেক ম্যাচ বাকি। আমাদের সব ম্যাচ খেলতে হবে এবং জিততে হবে। এটা একদম পাগলাটে ব্যাপার। আমি এটা নিয়ে ভাবতে পরি না। আমি স্বপ্নদ্রষ্টা নই।’
মৌসুম শেষে তাঁর বিদায়ের খবর যদি খেলোয়াড়দের বাড়তি অনুপ্রেরণা জুগিয়ে থাকে, সেটাকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন ক্লপ, ‘যদি বলেন এটা বিশ্বের সব লিভারপুল সমর্থকের জন্য ভালো, তাহলে আমিও বলব খুব ভালো। তবে প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যাওয়া কঠিন কিছু নয়। আমি বলতে চাইছি, এটা আগের বছরগুলোর চেয়ে আলাদা নয়। যদি আমরা মাঠে আরও বেশি দিতে পরি, তাহলে তো ভালোই। কিন্তু আমি নিশ্চিত নই, আদৌ সেটার দরকার আছে কি না। আমরা এরই মধ্যে শতভাগ দিয়ে খেলছি।’
মাঠের লড়াইয়ে গার্দিওলা-ক্লপ প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও বরাবরই একে অপরকে সম্মান দিয়ে কথা বলেন। ক্লপের লিভারপুল ছাড়ার খবর কানে আসার পরও তাঁকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন গার্দিওলা, ‘আমি তাঁকে কাছ থেকে চিনি না। কিন্তু জানি, তিনি একজন দুর্দান্ত কোচ এবং অসাধারণ মানুষ। সবাই তাঁকে মিস করবে। ব্যক্তিগতভাবে আমিও তাঁকে মিস করব।’ ক্লপের কারণেই ভালো কোচ হতে পেরেছেন, অতীতে এমন কথাও বলেছেন গার্দিওলা।
এবার ক্লপও অনেকটা সেই সুরে সুর মিলিয়ে বললেন, ম্যানচেস্টার সিটির হুমকিই লিভারপুলকে প্রতিটি ম্যাচ জিততে প্রেরণা জোগায়, ‘আমার মনে হয়, গত কয়েক বছরে আমরা শিখেছি, সিটির আশপাশে থাকতে চাইলে আপনাকে সব ম্যাচ জিততে হবে। কারণ, ওরাও সে চেষ্টাই করে। সিটির আধিপত্য দেখানোর এটাই সময়। ওরা হয়তো ভাবছে, এ মৌসুমে ওদের সেরা খেলাটা খেলতে পারছে না। কিন্তু ওদের যেখানে থাকার কথা, সেখানেই আছে।’