লিওনেল মেসির সঙ্গে নেইমারের বন্ধুত্বের কথা কারও অজানা নয়। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশ আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের দ্বন্দ্বমুখর সম্পর্কের মধ্যে এ দুজনের বন্ধুত্ব বরবারই শান্তির উদাহরণ হয়ে সামনে এসেছে। ২০২১ সালের কোপা আমেরিকার ফাইনাল শেষে মেসিকে জড়িয়ে নেইমারের কান্না কিংবা ড্রেসিংরুমে দুজনের আড্ডার ছবি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বেশ। এমনকি মেসির বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজি যাওয়ার ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা ছিল নেইমারের।
বিশ্বকাপ জয়ের পর বন্ধু মেসিকে শুভেচ্ছা বার্তাও পাঠিয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান এই তারকা। তবে বন্ধুত্বের এসব দৃষ্টান্ত ছাপিয়ে গেছে নেইমারের নতুন এক মন্তব্যে। সম্প্রতি ব্রাজিলিয়ান সংবাদমাধ্যম কেইজটিভির পক্ষ থেকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তাঁর ছেলে হলে কী নাম রাখবেন? এক শব্দের উত্তরে নেইমার বলেন,‘মেসি’।
কদিন আগেই বাবা হওয়ার খবর দিয়েছিলেন নেইমার। এরপর পিএসজি তারকার প্রেমিকা ব্রুনা বিয়ানকার্দির ইনস্টাগ্রামে পোস্ট দিয়ে জানান তাঁরা এক কন্যাসন্তানের বাবা–মা হতে চলেছেন। ইনস্টাগ্রাম পোস্টে বিয়ানকার্দি লিখেছিলেন, ‘আমরা এই মুহূর্তটির অপেক্ষায় ছিলাম। কন্যা, তোমাকে সরাসরি দেখার তর সইছে না। তুমি আমাদের সবচেয়ে দুর্দান্ত উপহার।’ এবার কন্যাসন্তানের বাবা হলেও ভবিষ্যতে যদি ছেলের বাবা হন, তবে মেসির নামে তার নাম রাখার কথাই হয়তো বলতে চেয়েছেন নেইমার।
২০১৩ সালে নেইমার বার্সেলোনা যাওয়ার পর থেকেই মূলত মেসির সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বের শুরু। বার্সার হয়ে মাঠে দারুণ এক জুটি জমিয়ে তোলেন দুজনে। কিন্তু ২০১৭ সালে নেইমার বার্সা ছেড়ে পিএসজি চলে গেলে সাময়িক ছেদ পড়ে দুজনের সম্পর্কে। শারীরিক দূরত্ব বাড়লেও দুজন অবশ্য মানসিকভাবে একে–অপরের কাছাকাছিই ছিলেন।
মাঝে মেসি একবার নেইমারকে বার্সায় ফেরানোর উদ্যোগও নিয়েছিলেন, যদিও শেষ পর্যন্ত সেই প্রচেষ্টা আলোর মুখ দেখেনি। তবে মেসি না পারলেও নেইমার ঠিকই পেরেছেন দুজনকে ফের এক বিন্দুতে মেলাতে। ২০২১ সালে মেসিকে বাধ্য হয়ে বার্সা ছাড়তে হলে এগিয়ে আসে পিএসজি। আর মেসির জন্য প্যারিসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সহজ করে দিয়েছিলেন নেইমারই।
মেসির পিএসজি–যাত্রা অবশ্য শেষ পর্যন্ত ভালো ফল আনেনি। হতাশা নিয়েই এবারের দলবদলে পিএসজি ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেন মেসি। পিএসজিতে মেসি–অধ্যায় নিয়ে নেইমার বলেছেন, ‘আমি ওর পিএসজিতে আসার বিষয়টা আগেই জেনেছিলাম। বার্সেলোনায় শেষ দুই সপ্তাহ খুব অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটিয়েছিল মেসি। আমি ওই সময় ওকে অনেকবার জিজ্ঞাসা করেছি, সে বার্সেলোনা ছেড়ে কোথায় যাবে। কিন্তু সে কিছুই বলতে পারছিল না। পরে পিএসজির সঙ্গে কথা পাকা হওয়ার পর সে আমাকে তা জানায়। মেসি প্যারিসে দুই বছর মোটেও আনন্দ নিয়ে থাকতে পারেনি।’
মেসি–নেইমার–এমবাপ্পের মতো তারকা থাকার পরও পিএসজির ব্যর্থতার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নেইমার বলেছেন, ‘গ্যালাকটিকোও রিয়াল মাদ্রিদকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতাতে পারেনি। সুতরাং এমন হতেই পারে। আমাদের তিনজনকেই বিশ্বসেরা বলা হয়। পিএসজিতে আমাদেরকে নিয়ে একটা দুর্দান্ত দল গড়া হয়েছিল। আমাদের ব্যর্থতাটা পুরোপুরি ফুটবলীয়।’
বিস্তারিত বলতে গিয়ে নেইমার দুর্ভাগ্যের কথাই বলেছেন, ‘দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের দলে সমন্বয়টা ঠিক হয়নি। আমরা সবকিছুই জিততে চেয়েছি, কিন্তু আসল জিনিসই জিতিনি। আমরা নিজেরা কিন্তু ঠিক ছিলাম। কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু ফুটবলে অনেক সময় অনেক কিছুই ঘটে, যেটা প্রত্যাশিত নয়। আমাদের ব্যর্থতাটা তেমনই একটা জিনিস। ফুটবল তো আর কেক তৈরির রেসিপি নয়।’