এ মুহূর্তে ইউরোপিয়ান ফুটবলে ক্লাবগুলোর সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষের নাম সম্ভবত চোট। টানা ম্যাচ খেলার চাপে মৌসুমের শুরু থেকে একের পর এক চোটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ক্লাবগুলো। ইউরোপের শীর্ষ ক্লাবগুলো এরই মধ্যে হারিয়ে ফেলেছে অনেক তারকা ফুটবলারকে। এর মধ্যে কারও কারও মৌসুমই শেষ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে চোট থেকে পরিত্রাণের আশায় আর্সেনাল কোচ মিকেল আরতেতা তো প্রার্থনায় বসার কথাও বলেছেন।
ইউরোপের অন্য ক্লাবগুলোর মতো আর্সেনালকেও চোটের কারণে বেশ ভুগতে হচ্ছে। গতকাল রাতেও চেলসির বিপক্ষে ম্যাচ শেষ না করে মাঠ ছাড়তে দেখা গেছে ডেকলান রাইস ও বুকায়ো সাকাকে। ৩১ আগস্টের পর গতকালই প্রথম ম্যাচ খেলতে দেখা গেছে মার্টিন ওডেগার্ডকে।
নরওয়ের হয়ে খেলার সময় এই চোটে পড়েন ওডেগার্ড। একইভাবে ব্রাজিল দলে খেলতে গিয়ে চোটে পড়েছিলেন গাব্রিয়েল মার্তিনেল্লিও। একই কারণে ইউরিয়েন টিম্বার, টমাস পার্টি, বেন হোয়াইট ও তাকেহিরো তোমিয়াসুকেও পাচ্ছে না গানাররা।
এমন অবস্থায় অন্য কোচদের মতো আরতেতারও বড় ভয়ের নাম আন্তর্জাতিক বিরতি। জাতীয় দলের খেলতে গিয়েই চোটে পড়তে দেখা যাচ্ছে অনেক খেলোয়াড়কে। ফলে আরেকটি আন্তর্জাতিক বিরতি শুরুর আগমুহূর্তে প্রার্থনার মধ্য দিয়েই যেন পরিত্রাণ চাইলেন আরতেতা, ‘আমি যেটা প্রার্থনা করছি, সেটা হলো আন্তর্জাতিক বিরতির পর আমরা যেন পুরোপুরিভাবে শারীরিকভাবে সক্ষম দলটিকে ফিরে পাই। তারা যেন খেলার জন্য প্রস্তুত থাকে এবং সবাই যেন ফিট থাকে। কারণ, আট সপ্তাহ ধরে এটা আমাদের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে আছে।’
মুখে প্রার্থনার কথা না বললেও ইউরোপের অন্য কোচদের অবস্থাও আরতেতার চেয়ে ভিন্ন নয়। সাম্প্রতিক সময়ে চলতে থাকা চোটের ধারায় সর্বশেষ যোগ হয়েছে বার্সেলোনা তারকা লামিনে ইয়ামালের নামও। গতকাল রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে হারা ম্যাচে স্কোয়াডেই ছিলেন না এই উইঙ্গার।
এখন স্পেনের হয়ে আন্তজার্তিক বিরতিতে গিয়ে আরও বড় ধরনের চোটে পড়েন কি না, সেই আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। জানা গেছে, বার্সেলোনা নাকি লামিনে ইয়ামালকে অনুরোধ করেছেন তিনি যেন চোট থেকে বাঁচতে স্পেনের হয়ে খেলতে না যান। এই খবরই বলে দিচ্ছে, চোটে সৃষ্টি হওয়া উদ্বেগ কতটা গভীরভাবে দলগুলোর মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক বিরতিতে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে ক্লাবগুলোর এমন উদ্বেগ অবশ্য অবান্তর নয়। ইয়ামালের কথাই ধরা যাক, এর আগেও স্পেনের হয়ে খেলার সময় চোট শঙ্কা নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন এই স্প্যানিশ, যার প্রভাব পড়েছিল বার্সা দলেও। ফলে সেরা খেলোয়াড়কে নিয়ে এ ধরনের পরিস্থিতি নিশ্চিতভাবেই এড়াতে চাইবে যেকোনো দল। তাই এ পরিস্থিতিতে বার্সা কোচ হান্সি ফ্লিকও যদি প্রার্থনায় বসেন, তা মোটেই অযৌক্তিক হবে না।
আরতেতা ও ফ্লিকের চেয়ে অবস্থা ভিন্ন নয় পেপ গার্দিওলা ও কার্লো আনচেলত্তির মতো কোচদেরও। সাম্প্রতিক সময়েও একাধিক খেলোয়াড়কে চোটের কারণে হারিয়ে বিপাকে আছে সিটি। টানা ৪ ম্যাচ হেরে চাপে থাকা গার্দিওলা আগেই বলেছিলেন, গত ৯ বছরের এমন চাপে আর পড়েননি তিনি।
এরই মধ্যে ব্যালন ডি’অর জয়ী রদ্রি, জেরিমি ডকু ও অস্কার ববদের হারানোয় একাদশ সাজাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে গার্দিওলাকে। একই সমস্যা রিয়াল মাদ্রিদেরও। একের পর এক চোটে পুরো রক্ষণভাগই এখন যেন ধ্বসে পড়েছে। যে কারণে পরিকল্পনা না থাকার পরও জানুয়ারিতে খেলোয়াড় কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।
সব মিলিয়ে অর্ধেক মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই চোটের এই মিছিল ইউরোপিয়ান ফুটবলের জন্য অশনিসংকেত হয়ে এসেছে, যা আরও ত্বরান্বিত হচ্ছে আন্তজার্তিক বিরতির ম্যাচগুলো দ্বারা, যেখানে অসহায়ের মতো দেখে যাওয়া ছাড়া ক্লাব কোচদের কিছু করারও থাকে না। ফলে আরেকটি আন্তজার্তিক বিরতির ম্যাচের আগে খেলোয়াড়দের সুস্থতা কামনায় প্রার্থনা করা ছাড়া আরতেতা–ফ্লিকদের আর কীই–বা করার আছে!