ম্যাচের ফল সবারই জানা—লাইপজিগ ২: ৩ জুভেন্টাস।
এমন ৫ গোলের ম্যাচ অহরহই দেখা যায়। তবু গত রাতে হয়ে যাওয়া চ্যাম্পিয়নস লিগের এই ম্যাচ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার ঝড় ওঠার কারণ অবিশ্বাস্যভাবে জুভেন্টাসের ঘুরে দাঁড়ানো। বলা যায়, জুভেন্টাস এখন ‘এভাবেও ফিরে আসা যায়’-এর সর্বশেষ সংযোজন।
রেড বুল অ্যারেনায় প্রায় সবকিছুই যে ‘তুরিনের বুড়ি’দের বিরুদ্ধাচরণ করছিল! প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে ইতালির ক্লাবটির এমন ঘুরে দাঁড়ানোর কারণ যে দৃঢ় মনোবল, তা না বললেও চলছে। জার্মান ক্লাব লাইপজিগের মাঠে জুভেন্টাসকে ম্যাচের শুরু থেকে কতটা কঠিন সময় পার করতে হয়েছে, তা মিনিট ধরে ধরে বিস্তারিত লিখলেই বরং সহজবোধ্য হবে।
৬ মিনিট: চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন জুভেন্টাস অধিনায়ক ব্রেমের।
১২ মিনিট: চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন জুভেন্টান মিডফিল্ডার নিকো গঞ্জালেজ।
৩০ মিনিট: বেঞ্জামিন সেসকোর গোলে পিছিয়ে পড়ে জুভেন্টাস।
৫০ মিনিট: ম্যাচে সমতা আনেন জুভেন্টাসের দুসান ভ্লাহোভিচ।
৫৯ মিনিট: লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন জুভেন্টাস গোলকিপার মিশেল দি গ্রেগরিও।
৬৫ মিনিট: সেসকো পেনাল্টি থেকে গোল করলে জুভেন্টাস ২–১ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।
ম্যাচের ২৫ মিনিট (যোগ করা সময় ধরলে ৩৪ মিনিট) বাকি থাকতে এক খেলোয়াড় কম নিয়ে ১ গোলে পিছিয়ে থাকা—এমন পরিস্থিতিতে জুভেন্টাসের পক্ষে বাজির ধরার লোক খুঁজে পাওয়াই দায়। কিন্তু এরপর সার্বিয়ান স্ট্রাইকার দুসান ভ্লাহোভিচ আর বদলি নামা ফ্রান্সিসকো কনসেইসাও যা করেছেন, তাতে লাইপজিগে নেমে এসেছে রাজ্যের নীরবতা।
১০ জনের জুভেন্টাস ম্যাচের ৬৮ মিনিটে ২–২ সমতা এনেছে ভ্লাহোভিচের গোলে, যে গোলে বল বানিয়ে দিয়েছেন পর্তুগিজ তরুণ কনসেইসাও। ৮২ মিনিটে সেই কনসেইসাওয়ের গোলেই ৩–২ ব্যবধানে এগিয়ে যায় জুভেন্টাস। ব্যবধানটা শেষ পর্যন্ত ধরে রেখে তুলে নেয় অবিশ্বাস্য জয়।
জুভেন্টাসের এই জয়ের চেয়ে বেশি আলোচনায় ম্যাচের নায়ক কনসেইসাও। ১২ মিনিটে গঞ্জালেজের বদলি নেমেছিলেন ২১ বছর বয়সী এই উইঙ্গার। তাঁর আরেকটি পরিচয় পোর্তোর সদ্য সাবেক কোচ সের্জিও কনসেইসাওয়ের ছেলে। পর্তুগাল দলে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পাশে খেলার সুযোগ সুযোগ মিলেছে এ বছরই। জাতীয় দলের হয়ে ৬ ম্যাচ খেলে করেছেন ১টি গোল।
সেই কনসেইসাও পোর্তো থেকে ধারে জুভেন্টাসের হয়ে খেলতে গিয়ে কাল ২১ বছর আগের স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছেন। জুভেন্টাস ইতিহাসের দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগ ম্যাচে বদলি নেমে গোল ও গোলে সহায়তা করেছেন তিনি। প্রথমবার এটি করতে পেরেছিলেন মার্কো দি ভাইয়ো, ২০০৩ সালে অলিম্পিয়াকোসের বিপক্ষে।
ম্যাচের আধঘণ্টার বেশি বাকি থাকতে এক খেলোয়াড় কম নিয়ে পিছিয়ে পড়ার পর যেকোনো কোচই বড়জোর ড্রয়ের প্রত্যাশা করবেন। খেলা প্রতিপক্ষের মাঠে হওয়ায় তা জয়তুল্যই। কিন্তু জুভেন্টাসের নতুন কোচ থিয়াগো মোত্তা যেন ভিন্ন ধাতুতে গড়া। তিনি নাকি যেকোনো মূল্যে জয় পেতেই লাইপজিগে গিয়েছিলেন!
ম্যাচ শেষে এক সাংবাদিক মোত্তাকে বলেন, ‘(গোলকিপার) লাল কার্ড দেখার পর আমরা আশা করেছিলাম অন্য কোচদের মতো আপনিও ম্যাচ ড্রয়ের কথা ভাববেন।’ মোত্তার জবাব, ‘মোটেও না। পরিস্থিতি যেমনই হোক, আমরা জিততেই এসেছিলাম।’
পরে স্কাই ইতালিয়াকে ৪২ বছর বয়সী এই বলেন, ‘আমার ছেলেরা সর্বস্ব নিংড়ে দিয়েছে। আমি তাদের বলেছিলাম, পরিস্থিতি সন্দেহজনক মনে হলে ভিএআর তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে। তোমরা শুধু খেলায় মনোযোগী হও। একটি গুরুত্বপূর্ণ দলের জার্সি পরার পর ছেলেদের মানসিকতা এমনিতেই বদলে যায়। ওরা আজ (গত রাতে) মাঠে যা দেখিয়েছে, তা কোচিং স্টাফ, মাঠে খেলা দেখতে আসা ভক্ত ও যারা বাড়িতে বসে (টিভিতে) খেলা দেখেছে, তাদের জন্য গর্বের।’
জুভেন্টাসের কোচ হওয়ার আগে ২ মৌসুম ইতালির আরেক ক্লাব বোলোনিয়ার দায়িত্বে ছিলেন ব্রাজিলে জন্ম নেওয়া ইতালিয়ান বংশোদ্ভূত মোত্তা। তাঁর কোচিংয়েই সিরি ‘আ’–এর ২০২৩–২৪ মৌসুমে পঞ্চম হয়ে ৬০ বছর পর চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা করে নেয় বোলোনিয়া।