লিভারপুল–সিটি মহারণে কেউ জেতেনি
লিভারপুল–সিটি মহারণে কেউ জেতেনি

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ

ক্লপ–গার্দিওলার ‘শেষ’ লড়াইয়ে কেউ জিতলেন না, আর্সেনালই শীর্ষে

লিভারপুল ১–১ ম্যানচেস্টার সিটি

প্রেক্ষাপট তো সবারই জানা। মৌসুম শেষে লিভারপুল ছাড়ছেন ইয়ুর্গেন ক্লপ। তাতে পেপ গার্দিওলার সঙ্গে ক্লপের যে দীর্ঘ দ্বৈরথ, সেটারও ইতি ঘটতে চলেছে।

সে হিসেবে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে দুজনের দল আজই শেষবার মুখোমুখি হলো। তবে লিগে শেষ দেখায় ক্লপ–গার্দিওলা কেউই জিতলেন না। অ্যানফিল্ডে ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে ১–১ গোলে ড্র করল লিভারপুল। প্রথমার্ধে জন স্টোনসের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল সিটি। বিরতির পরপরই পেনাল্টি থেকে ম্যাক অ্যালিস্টারের গোলে সমতায় ফেরে লিভারপুল।

লিভারপুল–সিটি পয়েন্ট ভাগাভাগি করুক, নিশ্চয় সেই কামনায় এই মহারণ দেখতে বসেছিলেন আর্সেনাল সমর্থকেরা। কারণ, দুদলের কেউ জিতলেই গানারদের শীর্ষস্থান হারাতে হতো। শেষ পর্যন্ত লন্ডনের ক্লাবটির সমর্থকদের মনে আশাই পূরণ হলো। এ ম্যাচ ড্র হওয়ায় গোল পার্থক্যে এগিয়ে থেকে শীর্ষেই থাকল আর্সেনাল।

সমতা ফেরানো গোলের পর ম্যাক অ্যালিস্টারের গর্জন। আজ অ্যানফিল্ডে

গতকাল ব্রেন্টফোর্ডকে হারিয়ে শীর্ষ ওঠা আর্সেনালের পয়েন্ট ৬৪। আজকের ম্যাচের আগে এবারের লিগ মৌসুমে হারের পরিস্থিতি থেকে ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে সবচয়ে বেশি ২২ পয়েন্ট তুলে নিয়েছিল লিভারপুল। আজ ড্রয়ের পর তা বেড়ে হলো ২৩ আর মোট পয়েন্ট হলো আর্সেনালের সমান ৬৪। কিন্তু আর্সেনালের গোল ব্যবধান লিভারপুলের চেয়ে ৭টি বেশি। তাই মিকেল আরতেতার দলই আপাতত পয়েন্ট তালিকার চূড়ায় থাকছে। তিনে থাকা সিটির পয়েন্ট ৬৩।

এবারের লিগ মৌসুমে প্রথম লড়াইয়েও ড্র করেছিল লিভারপুল–সিটি। গত নভেম্বরে ইতিহাদ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচের ফলও আজকের মতোই; ১–১! সেই ম্যাচেও প্রথমার্ধে পিছিয়ে পড়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে দাঁড়িয়েছিল অলরেডরা।

তবে আজকের ম্যাচে যে পরিমাণ আক্রমণ–পাল্টা আক্রমণ হয়েছে, তাতে আরও একাধিক গোল প্রত্যাশিত ছিল। দুদল লক্ষ্যে শট নিয়েছে সমান ৬টি করে মোট ১২টি, গোলের সুযোগ তৈরি করেছে ২৯টি।

কিন্তু ম্যাচজুড়ে দুদলের ফরোয়ার্ডদের ফিনিশিংয়ে দুর্বলতা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। লিভারপুলের কলম্বিয়ান উইঙ্গার লুইস দিয়াজের ছিল দৃষ্টিকটু, আবার কিছু ক্ষেত্রে ভাগ্য সিটির সহায় হয়নি। ফিল ফোডেনের প্রচেষ্টা ক্রস বারে আর জেরেমি ডোকুর শট পোস্টে লেগে না ফিরলে অ্যানফিল্ড হয়তো স্তব্ধ হয়ে যেত। এতগুলো সুযোগ সৃষ্টির পরও ম্যাচে মাত্র দুটি গোল হওয়ায় ফুটবলপ্রেমীরা আক্ষেপ করতেই পারেন।

লিভারপুল আজ যে একাদশ নিয়ে ম্যাচ শুরু করেছিল, সেটার গড় বয়স ছিল ২৫ বছর ১৩৩ দিন, যা গত ৬ বছরের মধ্যে লিগে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে তাদের সবচেয়ে কম বয়সী দল।

ম্যাচ শেষে ক্লপ–গার্দিওলার আলিঙ্গন

হ্যামস্ট্রিং চোট থেকে পুরোপুরি সেরে না ওঠায় এমন ম্যাচেও মোহাম্মদ সালাহকে নিয়ে ঝুঁকি নেননি ক্লপ। দলের প্রাণভোমরাকে বসিয়ে রেখেছিলেন তিনি। পরে সালাহকে নামিয়েছেন ম্যাচের ৬০ মিনিট দমিনিক সোবোলসলাইয়ের বদলি হিসেবে। মাঠে নামার পর থেকে বাকিটা সময় দারুণ কিছু সুযোগ সৃষ্টি করেন সালাহ। কিন্তু জয়সূচক গোলটা এনে দিতে পারেননি।

আজ গোল মিসের পসরা সাজিয়ে বসা দিয়াজই প্রথমবার সিটির জালে বল পাঠিয়েছিলেন। ম্যাচের ১৯ মিনিটে অসাধারণ দলীয় বোঝাপড়ায় আক্রমণে ওঠে লিভারপুল। ম্যাক অ্যালিস্টার দারুণ পাস বাড়িয়েছিলেন দারউইন নুনিয়েজকে। বল নিয়ে কিছু দূর ছুটে বক্সে ঢোকার পর বাঁ পাশে থাকা দিয়াজকে বল দিয়েছিলেন। ম্যাচে দিয়াজ ওই একবারই ‘পারফেক্ট ফিনিশিং’ দিলেও নুনিয়েজের অফসাইডে থাকায় গোলটি বাতিল হয়ে যায়।

মোহাম্মদ সালাহকে ম্যাচের ৬০ মিনিটে নামানো হয়

২১ মিনিটে ফিল ফোডেন সিটিকে প্রায় এগিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু জো গোমেজ শেষ মুহূর্তে ফোডেনের শটে পা লাগালে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পরের মিনিটে বের্নার্দো সিলভা হলান্ডের উদ্দেশে দারুণ ক্রস বাড়িয়েছিলেন। তবে হলান্ডকে বলের নাগালে যেতে দেননি ফন ডাইক। হেডে কর্নারের বিনিময়ে বল বিপদমুক্ত করেন লিভারপুল অধিনায়ক।

তবে এরপর সিটিকে আর থেমে রাখা যায়নি। ২৩ মিনিটে কেভিন ডি ব্রুইনার নিচু করে নেওয়া কর্নার থেকে ডি বক্সের ডান প্রান্তে বল পেয়ে সিটিকে এগিয়ে দেন জন স্টোনস। এ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এটি স্টোনসের প্রথম গোল। গোল করতে বড় ম্যাচগুলোকেই যেন বেছে নেন সিটির ২৯ বছর বয়সী এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। এ ম্যাচের আগে তিনি গোল করেছিলেন গত বছরের এপ্রিলে আর্সেনালের বিপক্ষে। স্টোনসের গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় সিটি।

দ্বিতীয়ার্ধে লিভারপুল যে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া হয়ে লড়বে, সেটা আন্দাজ আগে থেকেই করা যাচ্ছিল। বিশেষ করে সিটির ডিফেন্ডার নাথান আকে প্রথমার্ধে বেশ কয়েকবার হার্ভি এলিয়টের সঙ্গে গতিতে পেরে না ওঠায় বোঝা যাচ্ছিল, দিনটি আজ আকের নয়।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সেই আকেই ম্যাচের সবচেয়ে বড় ভুল করে বসেন। বলের নিয়ন্ত্রণ ঠিকঠাক নিতে না পেরে ব্যাক পাস বাড়ান গোলকিপার এদেরসনের উদ্দেশে। কিন্তু বল এদেরসনের কাছে পৌঁছানোর আগেই ছোঁ মেরে কেড়ে নেন নুনিয়েজ। তাঁর সামনে তখন শুধুই এদেরসন। উরুগুইয়ান ফরোয়ার্ড বল নিয়ে ডি বক্সে ঢুকতেই উপায় না দেখে তাঁকে বাজেভাবে ফাউল করেন এদেরসন। নুনিয়েজ লুটিয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি মাইকেল অলিভার।

এদেরসনের এই এক ফাউলেই তিন যন্ত্রণা সঙ্গী হয়। নুনিয়েজকে ফেলে দিতে গিয়ে নিজেই আঘাত পান। ব্রাজিলিয়ান গোলকিপার শাস্তিস্বরূপ দেখেন হলুদ কার্ড। এরপর আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ জেতা ম্যাক অ্যালিস্টারের পেনাল্টি ঠেকাতেও ব্যর্থ হন। কিছুক্ষণ পর ব্যথা বেড়ে গেলে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন এদেরসন। তাঁর বদলি হিসেবে নামেন জার্মান গোলকিপার স্তেফান ওর্তেগা।

ডি বক্সে নুনিয়েজকে ফাউল করার সময় এদেরসন নিজেই আঘাত পায়

এরপর জয়সূচক গোল পেতে দুদলই সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে খেলে। কিন্তু ৭৩ মিনিটে ফোডেনের প্রচেষ্টা ক্রসবারে আর ৮৯ মিনিটে ডোকুর শট পোস্টে লেগে ফিরলে সিটিকে হতাশ হতে হয়। শেষ দিকে লিভারপুলের আরেকটি গোল অফসাইড বাতিল হয়।

তবে আরেকটি আলোচিত ঘটনা ঘটার তখনো বাকি। যোগ করা সময়ের সপ্তম মিনিটে ম্যাচের ‘ভিলেনে’ পরিণত হওয়া আকে নিজেদের বক্সে সালাহকে চ্যালেঞ্জ জানালে গেলে সালাহ পড়ে যান। লিভারপুল খেলোয়াড়েরা পেনাল্টির আবেদন জানালেও রেফারি অলিভার তাতে সাড়া দেননি। খেলা চলাকালীনই ভিএআর যাচাইয়ের পর অলিভারের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়।

পরের মিনিটে আরেকটি পেনাল্টির আবেদন জানায় লিভারপুল। এবার ডোকু নিজেদের বক্সে কিছুটা উঁচুতে ওঠা বল বিপদমুক্ত করতে গেলে ছুটে আসেন ম্যাক অ্যালিস্টার। এ সময় ডোকুর বুট ম্যাক অ্যালিস্টারের বুকে লাগলে আঘাত পেয়ে তিনি মাঠে লুটিয়ে পড়েন। রেফারি অলিভার অবশ্য ভিএআর মনিটরে চেকই করতে যাননি। লিভারপুলের তাই পেনাল্টিও পাওয়া হয়নি।