২০২২ সালের বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ হয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন
২০২২ সালের বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ হয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন

সতীর্থদেরও আনন্দের ভাগ দিলেন সাবিনা

দোহা থেকে ঢাকায় এসে কাল সকালে হোটেলের অভ্যর্থনা কক্ষে বসে এই প্রতিবেদককে ইমরানুর রহমানের সহাস্য জিজ্ঞাসা, ‘আচ্ছা, ২০২২ সালের বর্ষসেরা কে?’

প্রথম আলোর ক্রীড়া পুরস্কারে পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম আগে ঘোষণা করা হয় না। বাংলাদেশের দ্রুততম মানবকে সেটি জানানোর পর নিজেই অনুমান করলেন, ‘আই থিঙ্ক ইটস সাবিনা খাতুন।’ তারপর নিজেই বলতে থাকেন সাবিনা কেন ২০২২ সালের বর্ষসেরা হতে পারেন, ‘২০২২ সালে বাংলাদেশের মেয়েরা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে। যার নেতৃত্ব দিয়েছেন সাবিনা খাতুন। এ কারণেই আমার মনে হয় পুরস্কারটা সাবিনা জিতবে।’

ইমরানুর তখনো জানতেন না ২০২৩ সালের বর্ষসেরার পুরস্কারটা পেতে যাচ্ছেন তিনি নিজেই। কিন্তু দোহা থেকে তাঁকে প্রথম আলোর উদ্যোগে ঢাকায় আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে আসার কারণটা নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছিলেন। এরপর কৌতূহলবশত ২০২২ সালের বর্ষসেরাও অনুমান করলেন। ভুল হয়নি ইমরানুরের অনুমান।

সাবিনা খাতুনের হাতে ২০২২ বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদের পুরস্কার তুলে দেন হাবিবুল বাশার

পড়ন্ত বিকেলে সোনারগাঁও হোটেলের বলরুমে জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার যখন ২০২২ সালের বর্ষসেরার পুরস্কার ঘোষণা করেন, ততক্ষণে হলভর্তি অতিথিরাও বুঝে যান কিছুক্ষণের মধ্যে পুরস্কারটা নিতে মঞ্চে যাচ্ছেন কে। হ্যাঁ, সাবিনা খাতুনই। আর সাবিনার নাম ঘোষণার পর অনুষ্ঠানের সঞ্চালক প্রথম আলোর প্রধান ক্রীড়া সম্পাদক উৎপল শুভ্র বলে দিলেন সবার মনের কথাটা, ‘সাবিনাকে তো আমার বাংলাদেশের নারী ফুটবলের কিংবদন্তি বলতে ইচ্ছে করছে।’

সাতক্ষীরার সদর উপজেলার পলাশপুর গ্রামের সাবিনাকে এই ২৮ বছর বয়সেই বাংলাদেশের নারী ফুটবলের কিংবদন্তি বলতে কেউ আপত্তি করবেন বলে মনে হয় না। বাংলাদেশের নারী ফুটবল আজ যে উচ্চতায় উঠেছে, তার মুখ তো সাবিনাই। ২০২২ সালে বাংলাদেশকে প্রথমবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতিয়েছেন অধিনায়ক হিসেবে। ফুটবল দলীয় খেলা হলেও নেপালে অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টে ৫ ম্যাচের তিনটিতেই ম্যাচসেরা সাবিনা। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারের সঙ্গে ৮ গোল করে জেতেন সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কারও।

সাবিনাই প্রথম কোনো ফুটবলার, যিনি প্রথম আলোর ক্রীড়া পুরস্কারের বর্ষসেরা হওয়ার আনন্দ নিয়ে ঘরে ফিরেছেন। তবে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ভোলেননি সতীর্থদের অবদানের কথা বলতেও, ‘আমার এই অর্জনের পেছনে ভূমিকা রেখেছে সতীর্থরা। তাদের সবাইকে কৃতজ্ঞতা।’

২০২২ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেন সাবিনা খাতুন

সাফ জিতে ফেরার পর সেদিন ঢাকার বাস্তায় সাবিনাদের দেখতে জনতার ঢল নেমেছিল। সেটি মনে করে বলেন, ‘সাফ ফাইনালের আগে দেশবাসীর কথা মনে পড়েছিল। দেশবাসীর সমর্থন পেয়েছি আমরা। দেশের মানুষ আমাদের ভালোবাসা দিয়েছেন। তাঁদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা।’ সঙ্গে বললেন, সবার সমর্থন ও ভালোবাসা পেলে এ বছর জিততে পারেন সাফ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ধরে রাখার চ্যালেঞ্জও।

নিজের কথা শেষ হতেই মঞ্চে সাবিনা ডেকে নেন সাফজয়ী তাঁর সতীর্থদেরও। সবাই মিলে একসঙ্গে ছবি তোলেন। যাঁর ফেসবুক পোস্টে সাফজয়ী নারী ফুটবলাররা দেশে ফিরে ছাদখোলা বাসে সংবর্ধনা পেয়েছিলেন, সেই সানজিদা আক্তারকে কিছু বলতে বললে রীতিমতো লজ্জায় লাল সম্প্রতি কলকাতা ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে খেলে আসা এই ফুটবলার। কিছুই বলব না বলে শেষ পর্যন্ত দিলেন ছোট্ট প্রতিক্রিয়া, ‘আজ (অধিনায়ক) আমাদের অধিনায়ক পুরস্কৃত হয়েছে। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় গর্বের।’

প্রয়াত সৈয়দ গাজী আর মমতাজ বেগমের পাঁচ কন্যার মধ্যে চতুর্থ সাবিনা বাংলাদেশের প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবে বিদেশি লিগে খেলেছেন। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ফুটবলের প্রেমে মজেন ছোটবেলাতেই। এরপর দিনে দিনে ছাপিয়ে গেছেন নিজেকে।

২০২২ সালের বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদের পুরস্কার নিতে এসে সতীর্থদেরও মঞ্চে ডেকে নেন সাবিনা খাতুন

জাতীয় দলের হয়ে ৫৩ ম্যাচে করেছেন ৩৪ গোল। জেলা পর্যায় থেকে ঢাকার মহিলা লিগ মিলিয়ে তাঁর গোল তিন শর বেশি। সাবিনার নামের পাশে তাই ‘গোলমেশিন’ তকমাটা বেশ মানানসই। অধ্যবসায়ের দীর্ঘ কণ্টকাকীর্ণ পথ পেরিয়ে সিটি গ্রুপ–প্রথম আলোর ক্রীড়া পুরস্কারে ২০২২ সালে বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি সাবিনার নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার ক্ষুধা নিশ্চয়ই আরও বাড়াবে।