বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে মুখোমুখি ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া
বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে মুখোমুখি ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া

অ্যাশেজের পর এবার বিশ্বকাপের অচেনা মঞ্চে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া

ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া।

যেকোনো খেলায় অন্য রকম এক দ্বৈরথ। এবার দুই দেশের নারী ফুটবল দলের দেখা হয়ে যাচ্ছে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। ইংল্যান্ডের জন্য মঞ্চটি বেশ পরিচিত। এ নিয়ে টানা তৃতীয়বার বিশ্বকাপের শেষ চারে তারা। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া এবারই প্রথমবার উঠল মেয়েদের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। বিশ্বকাপেও এর আগে কখনোই মুখোমুখি হয়নি দুই দল। মাটিল্ডাদের সামনে সিংহীরা—মঞ্চটা বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল।

আগামী বুধবার বাংলাদেশ সময় বিকেল চারটায় সিডনির স্টেডিয়াম অস্ট্রেলিয়ায় মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। ধারণা করা হচ্ছে, মাঠে বসেই ম্যাচটি দেখবেন প্রায় ৮০ হাজার দর্শক। এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার নারী ফুটবল দল একটা বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে দেশটিতে। ফ্রান্সকে কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারে হারিয়েছে স্বাগতিকেরা। প্রায় দুই দশকের মধ্যে আর কোনো খেলা টেলিভিশনে এত বেশি দেখা হয়নি। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ তো ভেঙে ফেলতে পারে সে রেকর্ডও!  

এ বছর এরই মধ্যে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার লড়াই উত্তাপ ছড়িয়েছে। পুরুষ ও নারী অ্যাশেজ—দুই সিরিজই হয়েছে রোমাঞ্চকর। তবে দুটি সিরিজই ড্র করে অ্যাশেজ ধরে রেখেছে অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়ার নেট বল দল আবার বিশ্বকাপ ফাইনালে হারিয়েছে ইংল্যান্ডকে। এবার অপেক্ষা বিশ্বকাপ ফুটবলে দুই দলের লড়াই দেখার।

প্রথমবার সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া

ইংল্যান্ডের ডাচ কোচ সারিনা ভিগমান অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়াইয়ের মাহাত্ম্য ঠিক সেভাবে জানেন না। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি শুধু বলেছেন, ‘সত্যিই বড় ম্যাচ হবে। তবে যেহেতু বেশ কয়েকটি প্রশ্ন করা হলো আমাকে এ নিয়ে, তাহলে যা ভেবেছিলাম তার চেয়েও বড় কিছু হবে। আমার খেলোয়াড় ও স্টাফকে জিজ্ঞাসা করে দেখব এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার ব্যাপারে।’

অবশ্য বুধবার মাঠে ঢুকেই এ ব্যাপারে টের পাওয়ার কথা ইংল্যান্ড কোচের। স্বাভাবিকভাবেই এ ম্যাচে ফেবারিট মেয়েদের ইউরোর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড, যারা অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে র‍্যাঙ্কিংয়েও ছয় ধাপ এগিয়ে। তবে শুধু অস্ট্রেলিয়ার দল নয়, যেকোনো খেলায় ইংল্যান্ডের আর যেকোনো দলের মতোই এখানেও থাকবে মাঠের বাইরের আরেক প্রতিপক্ষ—দর্শক।

কোচ বুঝুন বা না বুঝুন, অধিনায়ক মিলি ব্রাইট ঠিকই জানেন দুই দেশের দর্শকদের কাছে এ ম্যাচের মানে কী। কলম্বিয়ার বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও কোয়ার্টার ফাইনালে জেতার পর তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় না এ ম্যাচের জন্য মুখিয়ে না থেকে পারবেন আপনি। এখন পর্যন্ত মেয়েদের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট এটি, এ ম্যাচে অংশ নেওয়াটা কী দারুণই না হবে!’

ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ তো অস্ট্রেলিয়ার দর্শকও

এরপর ব্রাইট যোগ করেছেন, ‘আমরা এখানে শুধু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আসিনি, কাজ সারতে এসেছি। আমাদের মানসিকতা ও চারিত্রিক দৃঢ়তায় প্রতিটি ম্যাচেই সেটি দেখিয়েছি আমরা।’

ব্রাইটের সতীর্থ লরা হেম্প অবশ্য আরেকটু রোমাঞ্চিত। শুরুতে তিনি বলেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়া, নিয়ে আসো! স্টেডিয়াম ঠাসা দর্শক থাকবে, অনেক অস্ট্রেলীয় সমর্থক থাকবে। তবে আমরা জানি, নিজেদের সেরাটা খেললে আমরা অপ্রতিরোধ্য।’

এ ম্যাচেও ইংল্যান্ড লরা জেমসকে পাবে না। শেষ ১৬-এর ম্যাচে লাল কার্ড দেখে দুই ম্যাচ নিষিদ্ধ আছেন তিনি। অবশ্য কলম্বিয়ার বিপক্ষে ইংল্যান্ড যে তাঁকে খুব একটা মিস করেছে, সেটি বলা যাবে না।

ইংল্যান্ড যেমন আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে, অস্ট্রেলিয়ারও সেটির অভাব নেই। বিশেষ করে স্বাগতিক দর্শকদের সমর্থক বেশ উজ্জীবিত করছে তাদের। বিশ্বকাপে অচেনা হলেও অস্ট্রেলিয়া এ ম্যাচে নামবে সুখস্মৃতি নিয়েই। গত এপ্রিলে প্রীতি ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ২-০ গোলে হারিয়েছিল তারা, তাতেই টানা ৩০ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ডটা থেমেছিল ইংল্যান্ডের।

অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের দ্বৈরথের সঙ্গে ঠিক পরিচিত নন ভিগমান

অধিনায়ক স্যাম কারও পুরো ফিট হয়ে উঠেছেন। যদিও কোচ টনি গুস্তাভসন তাঁকে শুরু থেকে খেলাবেন কি না, তা নিশ্চিত নয়। তবে আত্মবিশ্বাস ঠিকই ফুটে উঠেছে গুস্তাভসনের কথায়, ‘আমরা যা করছি, তার একটা ধারাবাহিকতা আছে, এটি ভালো ব্যাপার। আমরা খেলার ধরন নিয়ে পরিষ্কার মনোভাব পোষণ করি, ফলে ট্যাকটিক্যালি প্রস্তুত হতে আমাদের খুব বেশি অনুশীলনের প্রয়োজন নেই। এটা মূলত মানসিক ও শারীরিক দিক দিয়ে সেমিফাইনালের জন্য প্রস্তুত হওয়া। এই খেলোয়াড়েরা একটা মিশনে আছে।’

আর দলের সহ-অধিনায়ক স্টেফ কেটলি বলছেন, ‘আমাদের দলের মূল অংশের ভারসাম্য দারুণ, আমরা এ পরিস্থিতির মূল্যটা জানি। আর এমন তরুণ কয়েকজন আছে, যারা বুঝছে না। সেটিও একটা আশীর্বাদ। তাদের আত্মবিশ্বাস পাচ্ছি, আর আমরা পরিণতরা এমন একটা পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।’