আজকের ম্যাচের আগপর্যন্ত অভিষেকের পর থেকে ইন্টার মায়ামির জার্সিতে টানা ৮ ম্যাচ খেলেছেন লিওনেল মেসি। দলকে একটি শিরোপা এনে দেওয়ার পাশাপাশি অন্য একটির ফাইনালেও তুলেছেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা। সব মিলিয়ে এই ৮ ম্যাচে তিনি মাঠে ছিলেন ৭১৪ মিনিট।
টানা ম্যাচ খেলে ক্লান্ত মেসিকে তাই মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) আজকের ম্যাচে বিশ্রাম দেওয়ার গুঞ্জন ছিল। ইঙ্গিতটা দিয়েছিলেন খোদ ইন্টার মায়ামি কোচ জেরার্দো মার্তিনোই। ম্যাচের আগে বলেছিলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি সবাই মেসির খেলা দেখতে চায়। কিন্তু ভুল কাজ করে আমি ঝুঁকি নিতে চাই না।’
মেসিকে শুরু থেকে খেলানোর ঝুঁকি না নিলেও স্কোয়াডের বাইরে রাখার ঝুঁকিও নিতে পারেননি মায়ামি কোচ। মেসিকে বেঞ্চে রেখে একাদশ সাজান মার্তিনো। তাতে অবশ্য কোনো ক্ষতি হয়নি। বেঞ্চ থেকে মাঠে নেমে এমএলএস অভিষেকে ঠিকই জাদু দেখান মেসি। নিউইয়র্ক রেড বুলসের বিপক্ষে ইন্টার মায়ামির ২-০ ব্যবধানের জয়ে দ্বিতীয় গোলটি এসেছে মেসির পা থেকেই। অন্য গোলটি করেছেন ডিয়েগো গোমেজ। এ নিয়ে মায়ামির জার্সিতে ৯ ম্যাচে মেসির গোল এখন ১১।
নিউইয়র্কের মাঠে মেসিবিহীন ইন্টার মায়ামির শুরুটা ভালো ছিল না। বলের দখলে এগিয়ে থাকলেও সুযোগ তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছিল তারা। ম্যাচের প্রথম ৩০ মিনিটে লক্ষ্য দূরে থাক, কোনো শটই নিতে পারেনি মায়ামি। এ সময় বল দখলে পিছিয়ে থাকলেও সুযোগ তৈরিতে ইন্টার মায়ামির চেয়ে স্বাগতিক নিউইয়র্কই বরং বেশি এগিয়ে ছিল। তারাও অবশ্য সেসব সুযোগকে পরিণতি দিতে পারেনি। অন্য দিকে আধা ঘণ্টা পেরোনোর পর ধীরে ধীরে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে নিজেদের মেলে ধরতে শুরু করে ইন্টার মায়ামি।
তেমনই এক সুযোগ কাজে লাগিয়ে দলকে এগিয়ে দেন গোমেজ। ডি-বক্সের বেশ বাইরে থেকে দারুণ এক পাসে গোমেজকে খুঁজে নেন নোয়াহ এলিয়েন। এরপর নিখুঁত ফিনিশিংয়ে লক্ষ্যভেদ করে ইন্টার মায়ামিকে লিড এনে দেন এই প্যারাগুয়েন মিডফিল্ডার। ম্যাচে সমতা ফেরানোর সুযোগ অবশ্য প্রথমার্ধেই পেতে পারত নিউইয়র্ক। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে নিজেদের ডি-বক্সে ইন্টার মায়ামির মিডফিল্ডার ডেভিড রুইজের হাতে বল লাগলে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন রেফারি, তবে ভিএআরে গিয়ে বদলে যায় সে সিদ্ধান্ত। রিপ্লেতে দেখা যায় বল রুইজের হাতে নয়, কাঁধে লেগেছে।
একাদশে না থাকলেও বিরতির পরই গা গরম করতে শুরু করেন মেসি। মাঠে এ সময় রেড বুলের আধিপত্য বেশি থাকাতেই হয়তো মেসিকে বেঞ্চে বসিয়ে রাখার ঝুঁকি নিতে পারেননি মার্তিনো। অবশেষে ম্যাচের ৬০ মিনিটে লিওনার্দো কাম্পানাকে তুলে নিয়ে মেসিকে মাঠে নামান মার্তিনো। এর ফলে যাঁরা টিকিট কেটে মেসির এমএলএস অভিষেক দেখতে এসেছিলেন, তাঁদের সেই আসাটাও পূর্ণতা পায়। মেসির সঙ্গে এ সময় মাঠে নামেন বুসকেতসও।
মেসি নামার পর ম্যাচের গতি ও দৃশ্যপটে পরিবর্তন আসে। আক্রমণের নিয়ন্ত্রণটা চলে আসে ইন্টার মায়ামির হাতে। মাঠে নেমে দারুণ কিছু সুযোগ তৈরি করেন মেসি। যদিও সেগুলো পরিণতি পাচ্ছিল না। ৮৭ মিনিটে ডি-বক্সের ঠিক বাইরে বিপজ্জনক জায়গায় ফ্রি কিক আদায় করে নেন মেসি। যদিও মেসির ফ্রি কিক প্রতিপক্ষের রক্ষণ দেয়ালে বাধা পেয়ে ফিরে আসে।
তবে ফ্রি কিক থেকে না পারলেও গোলটা ঠিকই পেয়েছেন মেসি। ৮৯ মিনিটে ডি-বক্সের ভেতর প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বল বাড়ান বেঞ্জামিন ক্রিমাশ্চিকে। পরে ফিরতি বল টোকা দিয়ে জালে জড়িয়ে দলকে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে দেন মেসি। শেষ পর্যন্ত দুই গোলের দারুণ এক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে মায়ামি।
এ জয়ে এমএলএসের ইস্টার্ন কনফারেন্সের তলানি থেকে এক ধাপ ওপরে উঠে এল ইন্টার মায়ামি। ২৩ ম্যাচে ৬ জয় ও ৩ ড্রয়ে তাদের পয়েন্ট এখন ২১।