ম্যাচটা হয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণই। শুরু থেকেই গোপালগঞ্জের শেখ মনি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে বসুন্ধরা কিংসের চোখে চোখ রেখেই লড়াই করেছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। বুটে বুটে টক্করটা ভালোই হয়েছে দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে। একটা সময় মনে হচ্ছিল, কিংস মৌসুমে প্রথম পয়েন্ট হারাতে যাচ্ছে কি না! কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই ম্যাচে ৩–০ গোলের বড় ব্যবধানেই জয়ী টানা চারবারের লিগজয়ীরা। ৭৯ মিনিটে প্রথম গোল করা কিংস পরের দুই গোল করেছে ম্যাচের যোগ করা সময়ে। তিন গোলই দুই ব্রাজিলিয়ানের।
প্রিমিয়ার লিগে টানা ৪ ম্যাচ জিতে ১২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকল যথারীতি বসুন্ধরা কিংসই। শেখ জামাল চার ম্যাচে পেয়েছে মাত্র ৩ পয়েন্ট। দিনের অন্য ম্যাচে রাজশাহীতে ফর্টিস এফসি ও রহমতগঞ্জ ২-২ গোলে ড্র হয়েছে। এবারের লিগে এখনো পর্যন্ত চার ম্যাচেই ড্র করে অপরাজিত পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জ।
কিংসের ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার দরিয়েলতন গোমেজ আজ প্রথমার্ধে ছিলেন বেশ নিষ্প্রভ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জোড়া গোল করেছেন ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার। কিংসের অন্য দুই ব্রাজিলিয়ান রবসন দা সিলভা ও মিগুয়েইল ফেরেইরা অবশ্য সুযোগ তৈরি করেছেন ম্যাচজুড়েই। শেখ জামালের রক্ষণের অগোছালোভাবের সুযোগ নিয়েছেন তাঁরা। সঙ্গে ছিলেন রাকিব হোসেন।
বারবার শেখ জামালের রক্ষণে ঢুকে পড়ছিলেন। কিন্তু গোলটাই হচ্ছিল না। উল্টো ধানমন্ডির ক্লাবটি ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার হিগর লেইতে আর ফরোয়ার্ড ফয়সাল আহমেদ ফাহিমকে দিয়ে পাল্টা আক্রমণ সাজিয়েছে, কিন্তু অ্যাটাকিং থার্ডে গিয়ে সেই আক্রমণগুলো ব্যর্থ হয়েছে।
দ্বিতীয়ার্ধে জয়ের খোঁজে বেশ অলআউটই মনে হয়েছিল কিংসকে। কোচ অস্কার ব্রুজোন শুরুতে উজবেকিস্তানের মিডফিল্ডার বাবুরবেক ইউলদাশোভকে নিচে খেলালেও দ্বিতীয়ার্ধে তাঁকে ওপরের দিকে তুলে দেন। প্রথমার্ধে তারিক কাজী বেঞ্চে থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে তিনি নেমে রক্ষণ সামাল দিয়েছেন ভালোই। আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলার জন্য কোচ ব্রুজোন ওপরে তুলেছিলেন রাইটব্যাক বিশ্বনাথ ঘোষকেও। সাদউদ্দিন, তপু বর্মণ রক্ষণে দ্বিতীয়ার্ধে ছিলেন আরও আঁটসাঁট।
কিংস দ্বিতীয়ার্ধে একের পর এক আক্রমণে উঠে শেষ পর্যন্ত সফল হয় ৭৯তম মিনিটে। এই গোলের কারিগর মূলত রাকিব হোসেনই। ডান দিক দিয়ে জয়নাল আবেদীন দিপুকে বোকা বানিয়ে তিনি গোলমুখে ফেলেন দারুণ এক ক্রস। বক্সের মধ্যে দরিয়েলতনকে পাহারায় রেখেছিলেন তাজউদ্দিন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শরীরের ঝটকায় তাজকে ফাঁকি দিয়ে দরিয়েলতন প্রায় ফাঁকায় দাঁড়িয়ে শেখ জামাল ধানমন্ডির গোলকিপার মাহফুজ হাসান প্রীতমকে পরাস্ত করেন। এই মাহফুজ হাসান অবশ্য পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেছেন। কিংসের বেশ কয়েকটি আক্রমণ তিনি বাঁচিয়েছেন।
শেষ জামাল গোল খেয়ে ম্যাচে ফেরার সুযোগ পেয়েছিল। এক মিনিটের ব্যবধানে দুবার ব্রা হিগর লেইতের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। প্রথমবার ৮৪ মিনিটে, পরেরটি ৮৫ মিনিটে। তাঁর দূরপাল্লার শট কিংস গোলকিপার মেহেদী হাসানকে (শ্রাবণ) পরাস্ত করলেও অল্পের জন্য বাইরে দিয়ে চলে যায়। প্রথমার্ধেও হিগরের একটি ফ্রিকিক অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। প্রথমার্ধে ফয়সাল আহমেদ দারুণভাবে বামপ্রান্ত দিয়ে কয়েকজনকে কাটিয়ে বক্সে বল ফেললেও কোনো লাভ হয়নি শেখ জামালের। বলের কাছেই পৌঁছাতে পারেননি শেখ জামালের কোনো খেলোয়াড়।
কিংস দ্বিতীয় গোলটি পায় যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে। দরিয়েলতন করেন দারুণ সুযোগসন্ধানী এক গোল। এ মৌসুমে এ নিয়ে চার ম্যাচে সাত গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার দৌড়ে অনেকটা এগিয়ে তিনি। মিগুয়েলের থ্রু থেকে বল ধরে খুব সহজেই ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোলটি পান দরিয়েলতন। তবে এ ম্যাচের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তটি এসেছে যোগ করা সময়ের শেষ লগ্নে। রবসনের দারুণ এক ফ্রি–কিকে আসে রবসনের গোল। চার ম্যাচে রবসন পেলেন তাঁর তৃতীয় গোলটি। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে এটি তাঁর ৫০তম গোল।