চলতি মৌসুমে চেলসির ত্রাতা কোল পালমার
চলতি মৌসুমে চেলসির ত্রাতা কোল পালমার

চেলসি যেভাবে কোল পালমার স্পোর্টিং ক্লাব

‘আমি যদি একই বা কাছাকাছি পজিশনে খেলা কোল পালমারের সতীর্থ হতাম, তবে আমি কালকের ম্যাচের জন্য উজ্জীবিত হয়ে মাঠ নামতাম। আমি দেখিয়ে দিতাম যে এটা কোল পালমার ফুটবল ক্লাব নয়, বরং চেলসি ফুটবল ক্লাব। আমি নিশ্চিতভাবেই তা করতাম।’

আর্সেনালের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে এই কথাগুলো বলেছিলেন চেলসি কোচ মরিসিও পচেত্তিনো। এভাবেই অহমে আঘাত করে দলের ফরোয়ার্ড লাইনের খেলোয়াড়দের জাগিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন পচেত্তিনো। কিন্তু কে জানত যে দলকে বোমা মেরেও জাগানো সম্ভব নয়, সে দলকে কথা দিয়ে জাগানোও অসম্ভব! ফলে পচেত্তিনোর কথাগুলো ছিল উলুবনে মুক্তো ছড়ানোর মতোই।

আর্সেনালের মাঠে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ার পথে চেলসি ফরোয়ার্ডরা কোনো ছাপই রাখতে পারেননি। যে কয়েকটি সুযোগ সামনে এসেছিল তা-ও হেলায় নষ্ট করেছেন, যা সব মিলিয়ে চেলসিকে উপহার দিয়েছে আর্সেনালের বিপক্ষে সবচেয়ে বাজে হার। ১৯৮৬ সালের পর লন্ডনের কোনো দলের বিপক্ষে এটি চেলসির সবচেয়ে বড় হারও বটে। সেবার কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্সের কাছে ৬-০ গোলে হেরেছিল চেলসি।

চলতি মৌসুমে নিজেদের বাজে দিনগুলোতে চেলসির পারফরম্যান্স ছিল বিব্রতকর ও হতশ্রী। এই ম্যাচগুলোয় দলটি ছিল পুরোপুরি ভঙ্গুর এবং এলোমেলো। কখনো কখনো প্রতিপক্ষ নিজেদের সেরা অবস্থায় না থাকায় বেঁচে গেলেও আর্সেনালের বিপক্ষে কোনো ছাড় মেলেনি। ম্যাচের শুরু থেকে চেলসির ওপর রীতিমতো ছড়ি ঘুরিয়েছে গানাররা। বাজে দিনগুলোতে চেলসির হতশ্রী পারফরম্যান্স নিয়ে পচেত্তিনো বলেছেন, ‘যখন আমাদের খারাপ দিন আসে, আমরা খুবই বাজে ফুটবল খেলি।’

আর্সেনালের কাছে বিধ্বস্ত হওয়ার পর চেলসি অধিনায়ক কনর গালাঘারের হতাশা

সত্যি কথা হচ্ছে, চলতি মৌসুমে দলের প্রয়োজনে কখনোই নিজেদের সেরাটা উপহার দিতে পারেননি চেলসির বেশির ভাগ খেলোয়াড়। গতকাল রাতেও হয়েছে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। দলের খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষাও ছিল দৃষ্টিকটু। জেতার কোনো আকাঙ্ক্ষাই যেন নেই। পচেত্তিনো নিজেও বলেছেন, কাই হাভার্টজের তৃতীয় গোলের পরই হাল ছেড়ে দেয় তাঁর দল এবং খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সকে ব্যাখ্যা করার কোনো ভাষাও তাঁর জানা নেই।

ম্যাচ শেষে চেলসিকে ‘কোল পালমার ফুটবল ক্লাব’ বলার বিষয়টি মনে করিয়ে দিলে পচেত্তিনো বলেন, ‘সে হচ্ছে আমার দলের একমাত্র খেলোয়াড়, যে দলের সবগুলো লাইনে সংযোগ তৈরি করে। যখন এমন খেলোয়াড়কে আপনি পাবেন না, তবে তার শূন্যতা পূরণ করা কঠিন।’

পালমার এ মৌসুমে চেলসির হয়ে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন, সেটি উঠে এসেছে পরিসংখ্যানেও। চলতি মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে চেলসির হয়ে ২৯ গোলে অবদান রেখেছেন পালমার। যেখানে ২০টি গোলের সঙ্গে আছে ৯টি সহায়তা। স্কাই বেটের পরিসংখ্যান বলছে, পালমারের এই অবদানকে বাদ দিলে চলতি মৌসুমে অবনমন অঞ্চলে নেমে যেত চেলসি। তাদের হিসাবে পালমারের গোল ও গোলে সহায়তাকে বাদ দিলে চেলসির পয়েন্ট হবে ২৬, যা দলটিকে নামিয়ে দিত ১৮ নম্বর স্থানে।

এ ছাড়া আর্সেনাল ম্যাচের আগপর্যন্ত এক হিসাবে দেখা গেছে, পালমারকে একাদশে রেখে চলতি মৌসুমে চেলসি গড়ে ম্যাচপ্রতি ২.২টি করে গোল করেছে এবং তাঁকে একাদশের বাইরে রেখে চেলসি গোল করেছে মাত্র ১.৩টি করে। এমনকি তাঁকে ছাড়া এ সময়ে দলের জয়ের হারও ৪৩.৫ শতাংশ থেকে নেমে যায় ৩৭.৫ শতাংশে।

পচেত্তিনোর হতাশা

পালমারের গোল প্রিমিয়ার লিগে চেলসিকে এনে দিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ১৩ পয়েন্ট। অর্থাৎ শুধু গোলগুলোকে বাদ দিলেও চেলসি নেমে যাবে পয়েন্ট টেবিলের ১৫ নম্বরে। চেলসিতে পালমারের পারফরম্যান্সের এই প্রভাব দলের বাকি খেলোয়াড়দের দুরবস্থাকেও যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।  

চলতি মৌসুমে চেলসির সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশা ছিল বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন তারকা এনজো ফার্নান্দেজ এবং মোইজেস কাইসেদোর কাছ থেকে। কাইসাদোকে লিভারপুলের সঙ্গে রীতিমতো যুদ্ধ করে নিয়ে এসেছিল স্টামফোর্ডের দলটি। কিন্তু এই দুই ফুটবলারই প্রত্যাশা পূরণে পুরোপুরিভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। মাঝেমধ্যে ফার্নান্দেজের ঝলক দেখা গেলেও তা দলকে খুব একটা পথ দেখাতে পারেনি। আক্রমণভাগেও পালমারকে সঙ্গ দিতে পারেননি কেউই।

লিগে চেলসির হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০ গোল করেছেন নিকোলাস জ্যাকসন। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সময়ে জ্যাকসনের সহজ গোল হাতছাড়া করাও বেশ ভুগিয়েছে দলকে। আর্সেনালের বিপক্ষেও তাঁর সুযোগ হাতছাড়া করার কারণে ভুগেছে চেলসি, যা পুরো মৌসুমের পারফরম্যান্সের প্রতিচ্ছবিও। মিডফিল্ড ও আক্রমণভাগের মতো রক্ষণেও চেলসি ছিল নড়বড়ে।

যার খেসারত দিয়ে দলটি এখন অবস্থান করছে পয়েন্ট তালিকার ৯ নম্বরে। যেখানে আছে ভুলে যাওয়ার মতো কিছু ম্যাচও। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত দলের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করে চেলসি চাইলে পালমারকে আলাদা করে ধন্যবাদ দিতেই পারে। ম্যাচ টাইম পেতে ম্যানচেস্টার সিটি ছেড়ে পালমার চেলসিতে না এলে মৌসুমটা আরও বিভীষিকাময় হতে পারত তাদের।