ট্রফি নিয়ে বসুন্ধরা কিংসের বাঁধনহারা উদ্‌যাপন। আজ কিংস অ্যারেনায়
ট্রফি নিয়ে বসুন্ধরা কিংসের বাঁধনহারা উদ্‌যাপন। আজ কিংস অ্যারেনায়

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল

আতশবাজির উৎসবে কিংসের টানা পঞ্চম শিরোপা বরণ

গত সপ্তাহে ময়মনসিংহে তিন ম্যাচ হাতেই রেখেই টানা পঞ্চম প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা নিশ্চিত করেছিল বসুন্ধরা কিংস। শেষ তিন ম্যাচের প্রথমটি আজ তারা খেলেছে নিজেদের মাঠ কিংস অ্যারেনায় বাংলাদেশ পুলিশের বিপক্ষে।

ম্যাচটার গুরুত্ব ছিল না কিংসের কাছে। তবে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে মর্যাদার প্রশ্ন তো ছিলই। কিন্তু এমন ম্যাচেই জিততে পারেনি কিংস। পুলিশের বিপক্ষে এগিয়ে গিয়েও ২-১ গোলে পিছিয়ে পড়ে। তবে কিংস হারেনি, ড্র করেছে ২-২ গোলে।

বাফুফে আগেই ঘোষণা করেছিল, এই ম্যাচ শেষে প্রিমিয়ার লিগ ট্রফি কিংসের হাতে তুলে দেওয়া হবে। প্রধান অতিথি থাকবেন ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান, থাকবেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিনও।

বসুন্ধরা কিংস অধিনায়ক বরসন দা সিলভা এবং কোচ অস্কার ব্রুজোনের হাতে ট্রফি তুলে দেন ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান

কিন্তু সালাহউদ্দিন ছিলেন না। থাইল্যান্ডে এএফসির কংগ্রেসে যোগদান শেষে আজই তিনি দেশে এসেছেন। তবে আনন্দের কমতি ছিল না কিংস অ্যারেনায়। কিংসের খেলোয়াড়, কর্মকর্তা, সমর্থকেরা ট্রফি বরণ করেন আতশবাজির উৎসবে।

প্রধান অতিথির হাত থেকে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি নেন কিংসের ব্রাজিলিয়ান অধিনায়ক রবসন দা সিলভা ও স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন। তারপরই কিংস খেলোয়াড়েরা ট্রফি নিয়ে উৎসবে মেতে ওঠেন।

অভিষেকের পর থেকে টানা পঞ্চম শিরোপা লেখা টি–শার্ট গায়ে ছিল সবার, যেটি এর আগে ময়মনসিংহেও ছিল। গ্রুপ ছবি তোলেন ফুটবলাররা। এরপর ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান সাংবাদিকদের কাছে তাঁর প্রতিক্রিয়া দেন। সেটি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় আতশবাজি, যা টানা কয়েক মিনিট চলতে থাকে। এ সময় আকাশের রং হয়ে যায় লাল।

কিংসের শিরোপা উৎসবের এমন দিনে ম্যাচ ছিল গৌণ। কারণ, কিংসের হার–জিতে কিছু আসত–যেত না। এ কারণেই কি না, ময়মনসিংহে আগের ম্যাচে শিরোপা নিশ্চিত করা কিংসের যে একাদশ খেলেছিল, সেটি থেকে আজকের একাদশে আটটি বদল আনেন কোচ অস্কার ব্রুজোন। শেখ মোরছালিন, রবসন ও দরিয়েলতন ছিলেন শুধু আগের একাদশের। এদিন একাদশে আসেন আনিসুর রহমান, ইয়াছিন আরাফাত, টুটুল হোসেন, গফুরভ, সোহেল রানা, রফিকুল ইসলাম, এমফন ওদোহ ও ইব্রাহিম।

ট্রফি বুঝে পাওয়ার দিনে পুলিশ এফসির সঙ্গে ২–২ গোলে ড্র করেছে বসুন্ধরা কিংস

শুরু থেকে ঠিক চেনারূপে দেখা যাচ্ছিল না কিংসকে। হতে পারে আগের ম্যাচেই লক্ষ্যে পৌঁছে যাওয়ায় তেড়েফুঁড়ে খেলার তাড়াও ছিল না। পুলিশ দল পাল্টা চোখ রাঙিয়ে আসছিল কিংসের রক্ষণে। পুলিশের অধিনায়ক লেফটব্যাক ইসা ফয়সাল বেশ কয়েকবার কিংসের বক্সে বল ফেলেন। মাঝমাঠে খেলা সংগঠিত করছিলেন সাবেক ক্রিকেটার হালিম শাহর ছেলে শাহ কাজেম। ভেনেজুয়েলার ফরোয়ার্ড এডওয়ার্ড মরিও ছিলেন দারুণ তৎপর।

কিন্তু প্রথম গোলটা করেছে কিংস। ৪৩ মিনিটে মোরছালিন থেকে বল পান দরিয়েলতন। তাঁর ক্রসে নাইজেরিয়ার স্ট্রাইকার এমফনের দারুণ হেডে এগিয়ে যায় কিংস। ৪৭ মিনিটে ম্যাচে ফেরার সুবর্ণ সুযোগ হারায় পুলিশ। মরিওর শট আটকান কিংস গোলকিপার। ফিরতি বল ফাঁকায় পেয়ে বাইরে মারেন এম এস বাবলু।

তবে পরের সুযোগটা আর হাতছাড়া করেনি পুলিশ। স্কোর হয় ১-১। ৪৯ মিনিটে মরিও ছোট্ট করে বল দেন মাহদি ইউসুফ খানকে। মাহদি জায়গা বানিয়ে দারুণ শটে পরাস্ত করেন কিংস গোলকিপার আনিসুর রহমানকে। ইংল্যান্ডপ্রবাসী এই ফরোয়ার্ড এর আগে কিংসে ছিলেন। আজ নিজের সাবেক দলের বিপক্ষেই গোল করলেন।

অবস্থা অনুকূলে নয় দেখে রাকিব আর তপুকে মাঠে নামান কিংস কোচ। ৬৯ মিনিটে কিংস গোল খেয়ে বসেছে। গোলদাতা ভেনেজুয়েলার ফরোয়ার্ড মরিও। কাজেমের ঠেলে দেওয়া বল নিয়ে বক্সে ঢুকে বাঁ পায়ের কোনাকুনি শটে মরিওর লক্ষ্যভেদ।

বসুন্ধরা কিংস খেলোয়াড়দের গোল উদ্‌যাপন

কিন্তু গোলটা পুলিশ ধরে রাখতে পেরেছে মাত্র এক মিনিটে। রবসনের ঠেলে দেওয়া বল দরিয়েলতন আলতো করে জালে ঠেলেন, ম্যাচ হয়ে যায় ২-২। শেষ পর্যন্ত কেউ আর গোল পায়নি। ড্রটাই কিংসের কাছে জয়ের সমান। তবে কিংসের এসব নিয়ে ভাবার সময় কোথায়! টানা পঞ্চম প্রিমিয়ার লিগে জেতার উৎসবেই ছিল তাদের যাবতীয় আগ্রহ।