এশিয়াড ফুটবলে এক ড্র নিয়ে ফিরছে বাংলাদেশ দল
এশিয়াড ফুটবলে এক ড্র নিয়ে ফিরছে বাংলাদেশ দল

চীনের সঙ্গে চমকে দেওয়া এক লড়াই বাংলাদেশের

চীনের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক ম্যাচ খেলল বাংলাদেশ। যাকে বলে লড়াকু ম্যাচ!

হাংজু এশিয়ান গেমসের ফুটবলে চীনের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র হওয়া ম্যাচটিতে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দল যেভাবে খেলেছে, তাতে প্রশংসা করার মতো অনেক কিছুই আছে। হয়তো বাংলাদেশ ম্যাচটা জেতেনি, কিন্তু তারপরও এবারের এশিয়ান গেমসে নিজেদের সেরা ম্যাচটাই কাল খেলেছে হাভিয়ের কাবরেরার দল। এই প্রথমবারের মতো এশিয়াডে স্বাগতিক দেশের বিপক্ষে অজেয় থেকে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ।

চীনের বিপক্ষে এই গোলশূন্য ড্র কেন বিশেষ কিছু! চীন এবারের এশিয়াডে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচেই ৯ গোল করেছে। ভারতকে হারিয়েছে ৫-১ গোলে, মিয়ানমারকে ৪-০ গোলে। সেই দলের বিপক্ষে একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে দুই ম্যাচেই ১-০ গোলে হেরে যাওয়া বাংলাদেশ যদি গোলশূন্য ড্রও করে, সেটি দুর্দান্ত ফল। ম্যাচের কিছু পরিসংখ্যানে চোখ বোলালেও চমকে যেতে পারেন ফুটবলপ্রেমীরা।

মাহাত্ম্যের বিচারে ২০১৮ সালে কাতারের বিপক্ষে জয়ের ম্যাচটি এগিয়ে থাকলেও মাঠে পারফরম্যান্সে চীনের বিপক্ষে ম্যাচটি সেই ম্যাচের সঙ্গে ভালোই টক্কর দেবে। যদিও কাবরেরার শিষ্যদের এমন একটি লড়াই দেখার সুযোগ বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের হয়নি। বাংলাদেশ থেকে যে ম্যাচটি কোনোভাবেই দেখা যায়নি।

এবার আসুন ম্যাচের কয়েকটি পরিসংখ্যানের দিকে চোখ ফেরানো যাক। বল দখলের লড়াইয়ে চীনের চেয়ে কাল এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ! চীনের বল দখলের শতকরা হার যেখানে ৪৬, সেখানে বাংলাদেশ বল ধরে খেলেছে ৫৪ ভাগ সময়। চীন যদিও আক্রমণ বেশি করেছে; কিন্তু আক্রমণে বাংলাদেশও কম যায়নি। চীন ও বাংলাদেশ দুই দলেরই পোস্টে শট আটটি করে। লক্ষ্যে শট চীন নিয়েছে দুটি, বাংলাদেশ একটি। শক্তিশালী একটা দলের বিপক্ষে যা বেশ ভালোই বলতে হবে।

চীনের সঙ্গে লড়াকু ড্র বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–২৩ দলের

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দলের সহকারী কোচ হাসান আল মামুন গতকালের ম্যাচটি নিয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত। এশিয়াড ফুটবলে নিজেদের ইতিহাসে চীনের বিপক্ষে ম্যাচটিকেই তিনি বাংলাদেশের সেরা বলে দাবি করেছেন, ‘আমি এশিয়াডে বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস পুরোপুরি বলতে পারব না। আমিও খেলোয়াড় হিসেবে এশিয়াড ফুটবলে খেলেছি। কিন্তু আমি জোর দাবি করতে পারি, কাল আমরা নিজেদের ইতিহাসের সেরা খেলাটা খেলেছি।’

কীভাবে এমন দাবি করছেন, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন মামুন, ‘চীন একটু হাইলাইনে খেলে। কোচ কাবরেরার লক্ষ্য ছিল সেটিই। সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। আমাদের খেলোয়াড়েরা প্রেসিং করেছে। যখনই বলের দখল নিয়েছে, তখনই দ্রুতগতিতে আক্রমণে উঠেছে। চীনা দলের দুই উইং খুবই শক্তিশালী। প্রথম ম্যাচে ভারতকে নাস্তানাবুদ করেছে দুই উইং দিয়েই। কাল আমাদের উইং ব্যাকরা তাদের উইংকে জায়গা নিয়ে খেলতে দেয়নি। পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করেছে দারুণভাবে।’

এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–২৩ ফুটবল দল

মামুনের আক্ষেপও আছে এই ম্যাচ নিয়ে, ‘এমন চমৎকার ম্যাচেও পুরোনো রোগ থেকে আমরা বের হতে পারিনি। গোলের সামনে গিয়ে এলোমেলো করে ফেলার ব্যাপারটা এ ম্যাচেও ছিল। ফাহিম দারুণ খেলেছে, ওদের রক্ষণকে ব্যতিব্যস্ত রেখেছিল। কিন্তু সে-ও জায়গামতো বল পেয়েও ঠিকমতো গোলে শট নিতে পারেনি। আমাদের ফরোয়ার্ডদের আরও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে মাঠে। গোলটা কিন্তু আমরা করতে পারছি না।’

মামুনের চোখে এবারের এশিয়াডের সেরা আবিষ্কার বেশ কয়েকজন। তবে তিনি গোলকিপার মিতুল মারমার কথা আলাদা করেই বলতে চান, ‘তিন ম্যাচেই মিতুল ছিল অসাধারণ। ভারতের বিপক্ষে সে কেমন খেলেছে, সবাই জানেন, চীনের বিপক্ষেও বেশ কয়েকটি গোল সে ঠেকিয়েছে। মিতুল শুধু বলস্টপার নয়, সে বল প্লেও করতে পারে। আমাদের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়েরা মিতুলকে পেছনে নিয়ে খেলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, নিরাপদ বোধ করে। জাতীয় দলে আনিসুর রহমান জিকোর মধ্যে এ ব্যাপারটা আছে। মিতুলের মধ্যেও আছে। আমরা জাতীয় দলে জিকোর দারুণ এক প্রতিদ্বন্দ্বীকে পেয়ে গিয়েছি।’

ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের পরপরই কোচ কাবরেরা বলেছিলেন, এবারের এশিয়াডে জাতীয় দলের বেশ কয়েকজন ভালো বিকল্প খেলোয়াড়ের সন্ধান তিনি পেয়েছেন। হাসান আল মামুনের কণ্ঠেও একই কথা, ‘তিনটি ম্যাচেই বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ যেভাবে খেলেছে, তাতে আশাবাদী হওয়া যায়। কোচ কাবরেরা একটা দর্শনে জাতীয় দলকে খেলাচ্ছেন, এশিয়াডের অপেক্ষাকৃত নবীন ও কম অভিজ্ঞ খেলোয়াড়েরাও তাঁর সেই দর্শনে অভ্যস্ত হয়েছে। সেই দর্শন বুঝতে পেরেছে, ভালো করেছে। মালদ্বীপের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ আর কিছুদিন পরই। সেই ম্যাচ দুটির আগে এশিয়াড থেকে আমরা কিছু ভালো খেলোয়াড় পেলাম, যেটি খুবই স্বস্তির।’

এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ প্রথম জয় পেয়েছিল ১৯৮২ সালে, দিল্লি এশিয়াডে, মালয়েশিয়ার বিপক্ষে। সে ম্যাচে বাদল রায় ও আশিস ভদ্রের দেওয়া গোলে বাংলাদেশ জিতেছিল ২-১ গোলে। তখন এশিয়াড ফুটবল ছিল জাতীয় দলের প্রতিযোগিতা। জাতীয় দল এরপর জয় পেয়েছিল ১৯৮৬ সালে সিউলে, নেপালের বিপক্ষে (১-০)। এশিয়াড অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে যাওয়ার পর জয় আসে ২০১৪ সালে ইনচনে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে, ১-০ গোলে।

তবে সব ছাপিয়ে গেছে ২০১৮ সালে জাকার্তায় কাতারকে ১-০ গোলে হারিয়ে পাওয়া সেই ঐতিহাসিক জয়টি। কাতার তখন এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন। তাদের বিপক্ষে সেই জয় প্রথমবারের মতো এশিয়াডের দ্বিতীয় রাউন্ডের নিয়ে যায় বাংলাদেশকে, যা ছিল দারুণ এক সাফল্য।
ম্যাচের শেষ দিকে জয়সূচক গোলটি করেছিলেন জামাল ভূঁইয়া। কাতার ম্যাচের পর এশিয়াডে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেরা ম্যাচ বলাই যেতে পারে চীনের বিপক্ষে ম্যাচটাকে।