লিওনেল মেসিকে দুয়ো দিয়ে তারা আসলে ‘ফুটবলকেই অপমান করেছে’। এই ‘তারা’ হলো পিএসজির সমর্থক। কথাটা বলেছেন ফ্রান্সকেই বিশ্বকাপ জেতানো সাবেক মিডফিল্ডার ইমানুয়েল পেতিত।
ফরাসি সংবাদমাধ্যম ‘আরএমসি স্পোর্টস’–এ একটি অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ফ্রান্স ও পিএসজির সাবেক উইঙ্গার জেরোম রথেন। সেখানেই কথাটা বলেছেন ফ্রান্সের হয়ে ১৯৯৮ বিশ্বকাপজয়ী সাবেক এ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার।
গত রোববার ঘরের মাঠে লিঁওর কাছে ১–০ গোলে হারে পিএসজি। পিএসজির হয়ে লিগ আঁ–তে সেটি ছিল মেসির ৫০তম ম্যাচ। এই ম্যাচ শুরুর আগে পিএসজির একাদশ ঘোষণার সময় স্পিকারে মেসির নাম বলামাত্রই দুয়ো দেন গ্যালারির দর্শক।
পিএসজিতে মেসির দুয়োর শিকার হওয়া নতুন কিছু নয়। গত বছরও এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন, আর এবারও দুয়ো শুনতে হলো টানা তিন ম্যাচে।
ক্লাবের হয়ে আর্জেন্টাইন তারকার ফর্মও সাম্প্রতিক সময়ে ভালো যাচ্ছে না। তবু ৫২ বছর বয়সী পেতিতের কাছে বিষয়টি ভালো লাগেনি। ’৯৮ বিশ্বকাপ ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে গোল করা সাবেক এই ফুটবলার মনে করেন, মেসিকে ছন্দে ফেরাতে তাঁর ক্লাবের সতীর্থদের ভূমিকা রাখতে হবে। তবে সবার আগে দুয়ো নিয়ে মুখ খুলেছেন পেতিত। স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘যখন এটা (দুয়ো) শুনলাম, আমার মনে হয়েছে ফুটবলেরই অপমান।’
পেতিত মনে করেন, মৌসুম শেষেই মেসির পিএসজি ছেড়ে যাওয়া উচিত। ফরাসি ক্লাবটির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এটা কোনো ফুটবল ক্লাব নয়। এটা অবসর–পূর্ববর্তী ক্লাব, এমনকি কথাটা ২০ বছর বয়সী খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রেও খাটে। পিএসজিতে থেকে কেউ উন্নতি করতে পারেনি, সেটা কি মেসির ভুল? সে জাদুকর, তাকে ছন্দে রাখার দায়িত্বটা বাকি খেলোয়াড়দের...শুধু পিএসজির সমর্থকেরাই বুঝতে পারছে না, তাদের দলটা হতে হতো মেসিকে কেন্দ্র করে, যেটা নেই, কোনো দিনও হবে না। কারণ, দলবদলের বাজারে তাদের ম্যানেজমেন্ট জঘন্য।’
এমন সব মন্তব্যের মধ্যেই পেতিত একটি কথা স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘মেসিকে দুয়ো দেওয়া ফুটবলেরই অপমান। লিওর প্রতি আমার পরামর্শ হলো, ক্লাবটি ছেড়ে দাও।’ মেসির খেলার ধরন নিয়েও কথা বলেছেন মোনাকো, আর্সেনাল, বার্সেলোনা ও চেলসিতে খেলা পেতিত। আর্সেনালের হয়ে প্রিমিয়ার লিগজয়ী পেতিত ব্যাখ্যা করেন, ‘মাঠে মেসির হাঁটা নিয়ে সমালোচনা করেন অনেকেই।
কিন্তু আমরা যারা মেসিকে জানি, সেই তারা শুরুর দিনগুলো থেকে বার্সায় নিজের সেরা সময়েও মাঠে সে হেঁটেছে। আর্জেন্টিনা কিন্তু মেসিকে কেন্দ্র করেই বিশ্বকাপ জিতেছে। কিংবা বার্সায় তার দিনগুলো, সবাই কিন্তু তাকে কেন্দ্র করেই খেলেছে। এসব জিদানের সঙ্গে আমার খেলার দিনগুলো মনে করিয়ে দেয়। জিদানকে রক্ষণ সামলাতে বলিনি কখনো, সেটা আমাকে করতে হতো “অর্কেস্ট্রা” চালু রাখতে।’
আগামী ৩০ জুন পিএসজির সঙ্গে চুক্তি শেষ হচ্ছে মেসির। তবে কাতারি মালিকাধীন ফরাসি ক্লাবটি তাঁকে রেখে দিতে চাচ্ছে। কিন্তু চুক্তি নবায়ন করলে আগামী মৌসুমে তাঁর যে বেতন হবে, সেটা দিতে গেলে ক্লাবের আর্থিক হিসাব-নিকাশ ঠিক রাখতে সমস্যা হবে। সে ক্ষেত্রে অন্য ফুটবলারদের বেতন কমাতে হবে ক্লাবকে।
এ কারণে তারা চাইছে মেসির বেতন ৩০ শতাংশ কমাতে। কিন্তু মাসে ৩৩ লাখ ৭০ হাজার ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৯ কোটি টাকা) পারিশ্রমিক পাওয়া আর্জেন্টাইন তারকা তাতে রাজি নন। চাওয়া অনুযায়ী পারিশ্রমিক না পেলে মেসি প্যারিস ছেড়ে চলে যাবেন বলেও খবর দিয়েছে বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যম।
ফরাসি সংবাদমাধ্যম ‘লেকিপ’ জানিয়েছে, পিএসজিতে মেসির দিন ফুরিয়ে আসছে। দুই পক্ষের সম্পর্ক বিচ্ছেদে গড়ানোর পথে। অথচ কাতার বিশ্বকাপের সময় মেসির বাবা ও পিএসজি সভাপতি নাসের আল খেলাইফি একমত হয়েছিলেন, অন্তত এক বছর আর্জেন্টাইন তারকার চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হবে। কিন্তু প্রায় পাঁচ মাস পর সেই নতুন চুক্তির গুঞ্জনের অস্তিত্ত্ব খুঁজে পাওয়াই দায়।
এদিকে বার্সেলোনা মেসিকে ফেরাতে চায়। পিএসজির সঙ্গে এ নিয়ে যোগাযোগও করেছে কাতালান ক্লাবটি। যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) ক্লাব ইন্টার মিয়ামিও নাকি মেসিকে কিনতে আগ্রহী।