এরিক টেন হাগের সঙ্গে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর শীতল সম্পর্কের কথা কারও অজানা নয়। টেন হাগের একাদশে উপেক্ষিত থাকতে হচ্ছিল বলেই চুক্তি বাতিল করে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে রোনালদো তাঁর দ্বিতীয় অধ্যায় শেষ করেছেন বলে মনে করা হয়।
২০২২ কাতার বিশ্বকাপের পর রোনালদো সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসরে নাম লেখালেও ইউনাইটেড কোচ টেন হাগের ওপর পুরোনো ক্ষোভ রয়েই গেছে। সম্প্রতি সেই পুষে রাখা ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী তারকা। সেসব সমালোচনার পাল্টা জবাব দিয়েছেন টেন হাগ।
ইউনাইটেডের সাবেক ডিফেন্ডার ও তাঁর একসময়ের সতীর্থ রিও ফার্ডিনান্ডের পডকাস্ট অনুষ্ঠানে ক্লাবটির বর্তমান বেহাল অবস্থার জন্য রোনালদো টেন হাগকে দায়ী করে বলেন, ‘কোচ বলেছেন, তাঁর দল (প্রিমিয়ার) লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো বিখ্যাত ক্লাবের কোচ হিসেবে আপনি এ ধরনের কথা বলতে পারেন না। মানসিক দৃষ্টিকোণ থেকে আপনি বলতে পারেন, আমার দলের হয়তো প্রিমিয়ার লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার সামর্থ্য নেই। কিন্তু আপনি না পারার কথা বলতে পারেন না। আপনার দলকে চেষ্টা করতে করবে, আপনাকে চেষ্টা করতে হবে।’
ইউনাইটেডকে আবারও গৌরবাম্বিত করতে হলে সবকিছু ঢেলে সাজানোরও পরামর্শ দেন রোনালদো। এর অর্থ দাঁড়ায়, টেন হাগকে তিনি আর রেড ডেভিলদের ডাগআউটে দেখতে চান না, ‘আমার মতে, এটা এখনো বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাব। তবে তাদের সবকিছু পুনর্নির্মাণ করা প্রয়োজন। সে জন্য সময় দিতে হবে, তাদেরকে বদলাতে হবে। তারাও জানে, এটাই একমাত্র উপায়।’
রোনালদোর এসব কথার জবাব দিতে গিয়ে তাঁকে পাল্টা আক্রমণ করেছেন টেন হাগ। সাউদাম্পটনের বিপক্ষে প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে রোনালদোর সমালোচনা প্রসঙ্গ উঠলে ৫৪ বছর বয়সী এই ডাচ কোচ বলেন, ‘ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড প্রিমিয়ার লিগ জিততে পারবে না—এমন কথা সে বলেছে, আমি নই। আপনারা যদি ওর কথাগুলো ভালো করে পড়ে থাকেন, তাহলে বুঝতে পারবেন, সে–ই এই কথা বলেছে। সে তো এখন দূর দেশ সৌদিতে বসে আছে, ম্যানচেস্টার থেকে অনেক দূরে। প্রত্যেকেরই নিজস্ব মত প্রকাশের অধিকার আছে। তবে তার (রোনালদোর) কথা আমাকে প্রভাবিত করে না।’
২০১৩ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কিংবদন্তি কোচ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন অবসরে যান। দলটি এরপর আর প্রিমিয়ার লিগে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। টেন হাগের অধীনে তারা দুটি শিরোপা (এফএ কাপ ও লিগ কাপ) জিতলেও প্রিমিয়ার লিগে ভালো করতে পারছে না। গত মৌসুমে নিজেদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন অবস্থান আট থেকে লিগ শেষ করায় এ মৌসুমে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা করতে পারেনি। এবারের মৌসুমের শুরুটাও ভালো হয়নি। আন্তর্জাতিক বিরতিতে যাওয়ার আগে লিগে প্রথম তিন ম্যাচের দুটিতেই হেরেছে টেন হাগের দল। এফএ কমিউনিটি শিল্ডেও হেরে গেছে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার সিটির কাছে।
ইউনাইটেডের এমন বেহাল হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হলে টেন হাগ পুরোনো কথাগুলোই ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে বলেন, ‘আমি প্রক্রিয়া ঠিক রাখায় বিশ্বাসী। আমি জানি এই মুহূর্তে আমরা কোথায় আছি, আমরা কী করছি, আমাদের কী করতে হবে। আমি আগেও বলেছি আমরা এখনো পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। অনেক তরুণ খেলোয়াড়কেও আমাদের সুযোগ দিতে হবে। আমাদের এখনো চোটের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে। চোটে পড়া খেলোয়াড়দের দলে ফেরাতে হবে। কেউ অজুহাত দাঁড় করানোর আগে আমাদের প্রতিটি ম্যাচ জিততে হবে। কে খেলতে পারল–কে পারল না, সেটা কোনো ব্যাপার নয়। প্রতিটি ম্যাচেই আমাদের মনোযোগী হতে হবে এবং জয়ের মানসিকতা নিয়ে খেলতে হবে।’
চোট থেকে সেরে না ওঠায় আগামীকালের ম্যাচেও ডিফেন্ডার লুক শ ও স্ট্রাইকার রাসমুস হইলুন্দ খেলতে পারবে না বলে নিশ্চিত করেছেন টেন হাগ। তবে উরুগুয়ের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার মানুয়েল উগার্তের কাল ইউনাইটেডের জার্সিতে অভিষেক হতে পারে বলে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন।