মেলবোর্নের ফেড স্কয়ার বিশ্বকাপজুড়ে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষকে আতিথেয়তা দিয়েছে। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচটি দেখানোর পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে তারা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে কিছু সমর্থকের উগ্র আচরণের কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খবরটি নেতিবাচকই বটে। তবে এবারের নারী বিশ্বকাপ অস্ট্রেলীয়দের আগ্রহের চূড়া ছুঁয়েছে। টেলিভিশন দর্শকের নতুন রেকর্ডও গড়েছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার ৩-১ গোলে হারা ম্যাচটি।
নতুন রেটিং পদ্ধতি আসার পর থেকে অস্ট্রেলিয়ার আর কোনো টেলিভিশন অনুষ্ঠান এত মানুষ দেখেনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি দেখতে টেলিভিশন খুলেছেন প্রায় ১ কোটি ৫ লাখ অস্ট্রেলিয়ান। ২ কোটি ৫০ লাখ মানুষের দেশে সংখ্যাটি যে বিশাল, সেটি বোঝাই যায়। ৯০ মিনিট ব্যাপ্তির ম্যাচটিতে একসঙ্গে প্রায় ৭১ লাখ ৩০ হাজার দর্শক খেলা দেখছেন।
অস্ট্রেলিয়ার ফ্রি-টু-এয়ার চ্যানেল সেভেন বলছে, ২০০১ সালে এখনকার নতুন রেটিং পদ্ধতি আসার পর এটি নতুন রেকর্ড। সেটি শুধু খেলাধুলা নয়, যেকোনো অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে। চ্যানেল সেভেনের হেড অব নেটওয়ার্ক স্পোর্ট লুইস মার্টিন বলেছেন, মাটিলডাসদের (অস্ট্রেলিয়ান নারী ফুটবল দল) পারফরম্যান্স অস্ট্রেলীয়দের আগ্রহ এমনভাবে জাগিয়েছে, কয়েক দশকে যেমনটি দেখা যায়নি। তাঁর মতে, মাটিলডাসদের হৃদয় উজাড় করে খেলা অস্ট্রেলিয়াকে বিমোহিত করেছে। মাটিলডাসরা ইতিহাস লিখেছে নতুন করে।
এর আগে অস্ট্রেলিয়ার টেলিভিশন ইতিহাসের মাইলফলক ধরা হয় ২০০৩ সালের পুরুষ রাগবি বিশ্বকাপের ফাইনাল এবং ২০০০ সালে অলিম্পিকে স্প্রিন্টার ক্যাথি ফ্রিম্যানের সোনা জয়ের ইভেন্ট। তবে রাগবি বিশ্বকাপের ওই ফাইনাল দেখেছিলেন ৪০ লাখ মানুষ, ফ্রিম্যানের ইভেন্ট দেখেছিলেন ৮০ লাখের বেশি। দুটিকে পরিষ্কার ব্যবধানে ছাড়িয়ে গেছে গতকালের সেমিফাইনাল।
সেভেন বলছে, তাদের অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম সেভেনপ্লাসে ম্যাচটি দেখেছেন প্রায় ৯ লাখ ৫৭ হাজার মানুষ। এমনিতে সেভেন মানুষ ফ্রিতেই দেখতে পারেন। সাবস্ক্রাইবারভিত্তিক অপ্টাস স্পোর্ট বলছে, তাদের স্ট্রিমিং সাইটে এ ম্যাচের রেটিং চতুর্থ সর্বোচ্চ। ঠিক আগেই আছে ফ্রান্সের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার কোয়ার্টার ফাইনাল, ২০ শটের টাইব্রেকার সেই ম্যাচ। অবশ্য ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি তারা সবার জন্য ফ্রিতে উন্মুক্ত করে দিয়েছিল।
অবশ্য অপ্টাসের হেড অব কনটেন্ট ক্লাইভ ডিকেন্স বলছেন, সব মিলিয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালটিই এগিয়ে থাকবে। সেটির কারণ তিনি ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, ‘ফ্রান্সের বিপক্ষে ম্যাচে ১৩০ মিনিটের কনটেন্ট ছিল। কারণ, ৩০ মিনিট অতিরিক্ত সময়ের পর টাইব্রেকার ছিল। অন্যদিকে গত রাতের ম্যাচটিতে কনটেন্ট ছিল ৯৬ মিনিটের। এটা আসলে পরিমাণের ভিত্তিতে, ফলে (আগের ম্যাচে) বেশি কনটেন্ট ছিল।’
ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হলেও আগামী শনিবার ব্রিসবেনে সুইডেনের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচেও ‘বিশাল’ দর্শক আশা করছেন ডিকেন্স। তাঁর মতে, ‘দুর্দান্ত এক টুর্নামেন্টকেই লোকে উদ্যাপন করতে চায়। আমাদের সব প্ল্যাটফর্মে মাটিলডাসদের শেষ ম্যাচ ফ্রি করে দেওয়া এটিকে অবিশ্বাস্য এক উদ্যাপনে পরিণত করেছে।’
অবশ্য এতবার দেখা হলেও সেটি যে আর্থিক দিক দিয়ে টেলিভিশনের জন্য আকাশচুম্বী লাভ এনে দিয়েছে, তা নয়। সেই দিক থেকে এএফএলের (রুলস ফুটবল) ফরম্যাটকে বেশি বিজ্ঞাপন-সহায়ক মনে করেন ডিকেন্স। তবে মাটিলডাসদের পারফরম্যান্স ঘিরে পাওয়া মোমেন্টাম ধরে রাখতে চান তাঁরা।
এদিকে গতকালের সেমিফাইনালটি বিবিসিতে দেখেছেন প্রায় ৭৩ লাখ মানুষ, এ বিশ্বকাপে যেটি সর্বোচ্চ।