প্রথমবারের মতো ইস্পাহানি-প্রথম আলো আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজনের ঘোষণা এসেছে আগেই। আজ ঢাকার একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল টুর্নামেন্টের ড্র ও সংবাদ সম্মেলন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক তারকা ফুটবলার, ফুটবল কোচ এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা।
কথা ছিল, নকআউটভিত্তিক এই টুর্নামেন্টে মোট ৩২টি দল অংশ নেবে। কিন্তু দল বেড়ে হয়েছে ৩৩টি। শেষ সময়ে ঢাকা অঞ্চলে দুটি দল একই সঙ্গে নিবন্ধন করায় কোনো দলকেই বাদ দেওয়া হয়নি। যে কারণে ঢাকা অঞ্চলে ২০টির জায়গায় দল হয়েছে ২১টি। ৮টি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে দলগুলোকে। কুমিল্লা অঞ্চলের ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি গ্রুপ, চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৮টিকে নিয়ে ২টি। বাকি ৫টি গ্রুপ ঢাকা অঞ্চলের। গ্রুপ পর্ব শেষে কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল ও ফাইনালও হবে ঢাকায়। প্রতি গ্রুপ থেকে একটি করে দল উঠে আসবে কোয়ার্টার ফাইনালে। প্রতিটি ম্যাচের সময়সীমা ৭০ মিনিট।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের খেলা দিয়ে টুর্নামেন্টটি শুরু ১৪ জুলাই। এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে খেলা হবে ১৫ জুলাইও। কুমিল্লার ভাষাসৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে কুমিল্লা অঞ্চলের খেলা ১৬ জুলাই। ঢাকায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ) ক্যাম্পাসের মাঠে ঢাকা অঞ্চলের গ্রুপ পর্বের খেলা হবে ১৮ থেকে ২৩ জুলাই। ২৭-২৯ জুলাই কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ফাইনালও ঢাকায়।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে আজকের অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইস্পাহানি গ্রুপের পরিচালক জাহিদা ইস্পাহানি এবং প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। বক্তব্য দেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) উপাচার্য প্রফেসর ড. এম লুৎফর রহমান, টুর্নামেন্ট কমিটির প্রধান সাবেক ফুটবলার ও জাতীয় দলের কোচ গোলাম সারোয়ার টিপু, টুর্নামেন্ট কমিটির সদস্য ও টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান সাবেক ফুটবলার আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু, ইস্পাহানি টি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক ( বিপণন) ওমর হান্নান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করা প্রথম আলোর প্রধান ক্রীড়া সম্পাদক উৎপল শুভ্র শুরুতেই টুর্নামেন্টের বিস্তারিত সবাইকে জানিয়ে দেন।
জমজমাট ড্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাবেক ফিফা রেফারি, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের হেড অব রেফারিজ ও টুর্নামেন্ট কমিটির সদস্য আজাদ রহমান। ড্রয়ের সময় কুপন তোলেন গোলাম সারোয়ার টিপু, আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু, ইমতিয়াজ সুলতান জনি, শফিকুল ইসলাম মানিক, কায়সার হামিদ, সাইফুল বারী, ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব, আলফাজ আহমেদ, পাক্ষিক ক্রীড়াজগত-এর সম্পাদক দুলাল মাহমুদ, ক্রীড়া লেখক ইকরামউজ্জমান এবং অন্য অতিথিরা।
অনুষ্ঠানে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) উপাচার্য ড. এম লুৎফুর রহমান বলেন, ‘এত বড় টুর্নামেন্ট আমাদের ক্যাম্পাসে হচ্ছে। আমরা গর্বিত। খেলাধুলার জন্য আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করি। ফুটবল, ক্রিকেটসহ বিভিন্ন ইনডোর গেমস খেলি। টুর্নামেন্ট সফল করতে আমাদের পক্ষে যতটা করা সম্ভব, আমরা তা করব।’
বাংলাদেশের খেলাধুলায় ইস্পাহানি বিরাট ভূমিকা রাখছে অনেক আগে থেকেই। সেটা মনে করিয়ে দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক জাহিদা ইস্পাহানি বলেন, ‘আমরা সব ভালো কাজের সঙ্গেই থাকতে চাই। তরুণদের পাশে থাকতে চাই।’
তরুণসমাজকে এগিয়ে নিতে খেলাধুলার বড় ভূমিকার কথা মনে করিয়ে দেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। সাংবাদিকতার বাইরেও প্রথম আলোর এমন নানা উদ্যোগ সম্পর্কেও বিস্তারিত বলেন তিনি। প্রতিশ্রুতি দেন, ‘এবার আমরা এই টুর্নামেন্টটি শুরু করেছি। সবার সহযোগিতা কামনা করছি। আগামীতে এই টুর্নামেন্ট আরও বড় আকারে আয়োজন করতে চাই আমরা।’
এমন আয়োজনের জন্য গোলাম সারোয়ার টিপু ইস্পাহানি ও প্রথম আলোকে ধন্যবাদ জানান। ক্রীড়াসুলভ মনোভাব নিয়ে টুর্নামেন্টে অংশ নিতে তিনি আহ্বান জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের। সঙ্গে বলেছেন, ‘এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে আমরা একটা বার্তা দিতে চাই যে তরুণসমাজ পড়াশোনার পাশাপাশি যেন সুস্থ বিনোদনের মাধ্যমে সুশিক্ষিত হয়ে উঠতে পারে।’
নিজের শিক্ষাজীবনে দেশে মাত্র ৭টি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল জানিয়ে আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু বলেছেন, ‘এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েছে অনেক। আমরা আশা করব, এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা খেলাধুলার প্রতি আরও উৎসাহী হয়ে উঠবে।’ আর তাতে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইস্পাহানির কর্মকর্তা ওমর হান্নান।
অনুষ্ঠান শেষ হয় কবির বকুলের লেখা, ইবরার টিপুর সুর ও সংগীত পরিচালনায় আসিফ আকবরের গাওয়া টুর্নামেন্টের থিম সং গোল ...গোল..গোল, গ্যালারিতে শোরগোল। গোল...গোল..গোল, পায়ে-পায়ে ছুটছে তরুণ দল...গানটি দিয়ে। গানটির সঙ্গে ফ্লাশ মব আয়োজন করে নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল দলকে সমর্থন জানাতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।
একনজরে কারা কোন গ্রুপে
ঢাকা অঞ্চল
গ্রুপ ‘এ’
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স), আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
গ্রুপ ‘বি’
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি), ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (আইইউবি), বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউএফটি), আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (এআইইউবি)।
গ্রুপ ‘সি’
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ), ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ, গণবিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি।
গ্রুপ ‘ডি’
ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব), ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ), ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
গ্রুপ ‘ই’
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
চট্টগ্রাম অঞ্চল
গ্রুপ ‘এফ’
বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি চট্টগ্রাম, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।
গ্রুপ ‘জি’
চট্টগ্রাম ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
কুমিল্লা অঞ্চল
গ্রুপ ‘এইচ’
ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।