নেপাল দল সংবাদ সম্মেলন শেষ করার পরপরই কথা বলতে এসেছে বাংলাদেশ দল। বাফুফে ভবনে তৃতীয় তলায় সংবাদ সম্মেলন মঞ্চে বাংলাদেশের কোচ, অধিনায়কসহ অন্যদের চোখমুখে কোথাও যেন প্রাণের অভাব দেখা গেল।
অথচ গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর এই কক্ষেই আনন্দবন্যা বয়ে গিয়েছিল। নেপালকে হারিয়ে প্রথমবার নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে আসা বাংলাদেশ নারী ফুটবলের কোচ গোলাম রব্বানী, অধিনায়ক সাবিনা খাতুন প্রতিক্রিয়া দিতে বসেছিলেন। তাঁদের কাছে সেই সন্ধ্যাটা স্মরণীয়ই হয়ে থাকবে।
কমলাপুর স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-নেপাল দুই ম্যাচের ফিফা প্রীতি ম্যাচের প্রথমটি আগামীকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটায়। সাফ শেষে প্রায় ১০ মাস পর সাবিনা খাতুনরা মাঠে ফিরছেন। মাঝখানে তাঁদের অলিম্পিক বাছাই খেলতে পাঠায়নি বাফুফে। এ নিয়ে কত নাটক! শেষ পর্যন্ত ম্যাচ পাচ্ছেন মেয়েরা, এটাই স্বস্তির তাঁদের কাছে।
কিন্তু এই প্রথম মেয়েদের জাতীয় দলের সংবাদ সম্মেলনে নেই বাংলাদেশকে নারী ফুটবলে সাফল্য এনে দেওয়া কোচ গোলাম রব্বানী। গত মে মাসের শেষ দিকে পদত্যাগ করেছেন তিনি। এরই ফাঁকে সাফজয়ী দল থেকে বিদায় নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় সিরাত জাহান স্বপ্না, আঁখি খাতুনরা। দল থেকে বিদায় নিতে হতে হয়েছে আরও দুজনকে। ফলে একটা অস্থির সময় কেটেছে নারী ফুটবল দলের।
আগামীকাল তাই নতুন এক শুরুই করতে চলেছে বাংলাদেশ দল। কিন্তু সাবিনা খাতুন যেন কোথাও একটু দলের সামর্থ্য নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত। বাফুফে ভবনে আজকের সংবাদ সম্মেলনে শুরুতেই বললেন, ‘নতুন করে আসলে বলার কিছু নেই। ৮-৯ মাস পর মাঠে নামছি। সবার দোয়া চাই। যেন নেপালের সঙ্গে দুটি ম্যাচ ভালো করতে পারি।’
দলের পালাবদল ঘটেছে। সেটিকে অবশ্য পেশাদারির মোড়কেই দেখতে চাইলেন সাবিনা, ‘বাস্তবতা মানতে হব। পেশাদার হিসেবে বদলটা গ্রহণ করতে হবে। ছোটন স্যার অনেক যত্নবান ছিলেন। আমাদের পরিবারের মতো দেখতেন। শুরু থেকে লিটু স্যারও ছিলেন। তবে আমাদের জন্য এই সিরিজটা কঠিন হবে, যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন খেলোয়াড় নেই। নেপাল চাইবে আমাদের হারাতে। কারণ, গত সাফের ফাইনালে ওরা আমাদের কাছে হেরেছিল। তবে আমাদের যত সমস্যাই থাকুক, জিততে চাই। তবে মাঠে নামলে বোঝা যাবে আসলে কোথায় দাঁড়িয়ে আছি আমরা।’
নেপাল দলে তারকা ফরোয়ার্ড সাবিত্রী ভান্ডারি গত সাফের ফাইনালে শুরুর একাদশে ছিলেন না। ফলে বাংলাদেশ দল বাড়তি সুবিধা পেয়েছে। তবে এই সফরে শতভাগ ফিট হয়ে এসেছেন সাবিত্রী। নেপালের কোচ জানালেন, ঢাকায় প্রীতি ম্যাচ শেষে সাবিত্রী ইসরায়েলে ঘরোয়া ফুটবলে খেলতে যাবেন। বাংলাদেশের পক্ষে তাই জেতা কঠিন হবে ম্যাচ দুটি। দ্বিতীয় ম্যাচটি হবে ১৬ জুলাই।
এত দিন বাংলাদেশ নারী দলের অঘোষিত কোচ ছিলেন বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি। গোলাম রব্বানীর বিদায়ের পর ধারণা করা হয়েছিল পল কোচের দায়িত্বটা আনুষ্ঠানিকভাবেই নেবেন। কিন্তু পল এই সিরিজে দলের দায়িত্ব নেননি। এমনকি কোনো বিষয়েই যুক্তও হচ্ছেন না। যদিও পলের সঙ্গে বাফুফে সভাপতি আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এখন পর্যন্ত পল নিজে তো নেই-ই, তাঁর নির্দেশে ট্রেইনার ইভান রাজলকও নেই মেয়েদের সঙ্গে।
শেষমেশ এই সিরিজে প্রধান কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সহকারী কোচ মাহবুবুর রহমানকে। অনেক দিন ধরে দলের সঙ্গে থাকায় সাবিনাদের সবই জানেন মাহবুবুর। তবে তাঁর জন্য একটা চ্যালেঞ্জই যেন সামনে। সেটি মেনে নিয়েই মাহবুবুর বলেছেন, ‘প্রতি পরিবারেই দুঃসময় আসে। আমাদেরও এসেছে। তবে আস্তে আস্তে চেষ্টা করছি সেটা উতরাতে। চেষ্টা করেছি সবাইকে এক সুতায় গাঁথতে। মেয়েরা চেষ্টা করবে ১০০ ভাগ দিতে।’
মাহবুবুর বলেন, ‘অনেক দিন ধরে খেলতে পারছিলাম না। তাই আমিও ক্ষুধার্ত ছিলাম। আশা করি ভালো খেলবে দল। দলে কিছু চোট ছিল। এখন মোটামুটি ঠিক হয়েছে। ভালো ম্যাচ হবে আশা করি। সাফে আমাদের পরিপূর্ণ দল ছিল। এখন অনেকে নেই। তবে দেশে খেলা, মেয়েরা সবাই চেষ্টা করবে সেরাটা দিতে। সবার সমর্থন চাই।’
সাফজয়ী দলের স্বপ্না, আঁখি খাতুন ছাড়াও এই দল থেকে বিভিন্ন কারণে বিদায় নিয়েছেন সাজেদা খাতুন, আনুচিং মগিনি। আঁখি, স্বপ্না, শামসুন্নাহার নিয়মিত ছিলেন দলে। কৃষ্ণা, মাসুরার পায়ে ব্যথা। কৃষ্ণাকে কাল খেলানো না–ও হতে পারে। জাপানি বংশোদ্ভূত বাংলাদেশি সুমাইয়া মাতসুশিমা, শাহেদা আক্তার, আকলিমাসহ দলে এসেছেন নতুন ছয়জন। কোচ জানিয়েছেন, সুমাইয়াকে কাল বদলি নামালে তাঁর অভিষেক হতে পারে বাংলাদেশের জার্সিতে।
সিরিজ শুরুর আগে মেয়েদের একটা আবদার মিটিয়েছে বাফুফে। তাঁদের দাবি মেনে নেপাল দলের সঙ্গে একই হোটেলে তাঁদের তোলা হয়েছে আজ। যদিও হোটেলে রাখার টাকা জোগাড় হয়নি বলে জানিয়েছেন বাফুফের নারী কমিটির প্রধান মাহফুজা আক্তার, ‘মেয়েদের বলেছিলাম, নেব না হোটেলে। পরে দেখলাম ওরা মন খারাপ করবে। সে কারণে সিদ্ধান্ত বদল হয়েছে। তার মানে টাকার জোগাড় হয়েছে তা নয়। টাকা জোগাড় না করেই ওদের হোটেলে তোলা হয়েছে।’
হোটেলে থাকুক আর বাফুফে ভবনে, সাবিনা খাতুনদের জন্য একটা পরীক্ষাই—নেপাল সিরিজ।