লিভারপুল সমর্থকেরা আশায় ছিলেন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। থাকবেনই–না কেন? চলতি মৌসুমে এ দলটাই তো হেরে যাওয়া অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ২৭ পয়েন্ট তুলেছে। ঘরের মাঠে লিগের খেলায় টানা ২৮ ম্যাচ অপরাজিতও তো এ দলটাই।
কিন্তু সমর্থকদের আশাবাদ কিংবা পক্ষে থাকা ইতিহাস—কোনোটাই আজ লিভারপুলের কাজে আসেনি। অ্যানফিল্ডে ক্রিস্টাল প্যালেসের কাছে ১–০ গোলে হেরে গেছে লিভারপুল। এই হারে লিগ শিরোপা জয়ের স্বপ্নে বড় ধাক্কা খেল ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। ৩২ ম্যাচে লিভারপুলের পয়েন্ট ৭১, পয়েন্ট তালিকায় অবস্থান তৃতীয়। সমান ম্যাচ খেলে ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট ৭৩, আর ৩১ ম্যাচে আর্সেনালের ৭১।
দীর্ঘ সময় ধরে লিগ পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকা লিভারপুলের দুঃসময়ের শুরু গত সপ্তাহে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে ওল্ড ট্রাফোর্ডে ২–২ ড্র, এর চার দিন পর ইউরোপা লিগের ম্যাচে আতালান্তার কাছে ৩–০ গোলে হার। তবে এরপরও যে লিভারপুল ক্রিস্টালের কাছে হারতে পারে, এমন শঙ্কিত সমর্থক ছিলেন খুব কমই।
কারণ, অ্যানফিল্ড তো বটেই, এই ক্রিস্টালের বিপক্ষে ২০১৭ সালের এপ্রিলের পর কোনো ম্যাচই হারেনি লিভারপুল (১৩ ম্যাচের ১১টি জয়, ২টি ড্র)। আর পয়েন্ট তালিকার ১৫ নম্বরে থাকা প্যালেস লিগে সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচই জয়শূন্য।
কিন্তু অ্যানফিল্ডে রয় হজসনের দল নিজেদের জয়ে ফিরিয়েছে লিভারপুলের সবচেয়ে কঠিন সময়টাতেই। ম্যাচে ১৪ মিনিটেই প্যালেস এগিয়ে যায় এবেরেসি এজের গোলে। এবারের লিগে লিভারপুলের জন্য আগে গোল হজম করা নতুন কিছু নয়, নয় ঘুরে দাঁড়ানোও। কিন্তু আতালান্তার কাছে হারের স্মৃতি নিয়ে মাঠে নামা লিভারপুল প্রথমার্ধে খুব বেশি সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। বল দখলে ছিল বেশি, প্যালেস রক্ষণে হানাও হয়েছে বারবার, কিন্তু গোলের মুখ খোলা যায়নি।
বিরতির পর মোহাম্মদ সালাহ, দারউইন নুনিয়েজ, দিলেগো জোতারা আক্রমণের ধার বাড়ান। এ সময় গোলের জন্য ১৪টি শট নিয়েছে লিভারপুল, তিনটি লক্ষ্যেও ছিল। এর মধ্যে ৫৫ মিনিটে সুযোগ মিস করেন নুনিয়েজ। ভার্জিল ফন ডাইকের কর্নার থেকে পাওয়া বল নুনিয়েজ হয়ে গোলের দিকেই যাচ্ছিল। কিন্তু প্যালেস গোলকিপার ডিন হেন্ডারসন হাঁটু বাড়িয়ে দিয়ে সেটি প্রতিহত করে দেন।
৭৩ মিনিটে আরও সহজ সুযোগ নষ্ট করেন দিয়েগো জোতা। গোলকিপারকে প্রায় একা পেয়েও তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বল তাঁর গায়েই মেরে বসেন দিয়াজের বদলি নামা এই ফরোয়ার্ড। দুই মিনিট পর আরেকটি সুযোগ নষ্ট হয় কার্টিস জোনসের মাধ্যমে। অরক্ষিত জোনস সামনে পেয়েছিলেন শুধু হেন্ডারসনকে। ডান কোনা দিয়ে বল জালে পাঠাতে চাইলেও বল বারের পাশ দিয়ে চলে যায়। অবিশ্বাস্য এই মিসে পুরো অ্যানফিল্ডই রীতিমতো স্তব্ধ হয়ে পড়ে।
অবশ্য প্যালেসও গোল মিস না করলে আরও বাজেভাবেই হারত লিভারপুল। ১৭ মিনিটে ফন ডাইন পা পিছলে পড়ে গেলে প্যালেস স্ট্রাইকার জ্যাঁ–ফিলিপে মাতেতা অ্যালিসনকে একা পেয়ে গিয়েছিলেন। বল গোলকিপারের মাথার ওপর দিয়ে পাঠিয়ে দিলেও শেষ মুহূর্তে গোললাইন থেকে বল ফেরান অ্যান্ড্রু রবার্টসন। ৭৪ মিনিটে মাতেতার কাছ থেকে নেওয়া শট প্রতিহত হয় আলিসনের হাতে।
তবে গোল ব্যবধান শেষ পর্যন্ত যেমনই হোক, লিভারপুলের কাছে হারটাই সবচেয়ে বড় যন্ত্রণার। শিরোপা–দৌড়ের লাগাম যে এখন নিজেদের হাতে নেই!