এই শতাব্দীতে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে সবচেয়ে বেশিবার কাঁদিয়েছে কোন দল? উত্তরটা অনেকেরই জানা—জার্মানি। ২০০৬, ২০১০, ২০১৪; টানা তিন বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে শোকের সাগরে ভাসিয়েছে জার্মানি। এর মধ্যে ২০১৪ সালের মারাকানার ফাইনালটা একটু বেশিই যন্ত্রণা দিয়েছে আর্জেন্টাইনদের।
এবার ছোটদের বিশ্বকাপেও আর্জেন্টাইনদের বড় যন্ত্রণা দিল জার্মানরা। জাভার মানাহান স্টেডিয়ামে টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনাকে ৪-২ ব্যবধানে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছে গেল জার্মানি। নির্ধারিত ৯০ মিনিট ও যোগ করা সময়ের রোমাঞ্চকর লড়াই ৩-৩ সমতায় শেষ হয়।
ফিফার নিয়মানুযায়ী, বয়সভিত্তিক এই বিশ্বকাপের নকআউট পর্বের ম্যাচে অতিরিক্ত সময় না থাকায় সরাসরি খেলা গড়ায় পেনাল্টি শুট আউটে। সেখানে পাঁচ শটের চারটিতে গোল করেন জার্মান যুবারা।
আর্জেন্টাইনদের নেওয়া চার শটের প্রথম দুটিই রুখে দেন জার্মান গোলরক্ষক কনস্টানটাইন হেইডে। এর মধ্যে একটি আবার কোয়ার্টার ফাইনালে হ্যাটট্রিক করে ব্রাজিলকে বিদায় করার নায়ক ক্লদিও এচেভেরির শট।
এ নিয়ে দ্বিতীয়বার অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল জার্মানি। দলটি প্রথমবার ফাইনালে উঠেছিল সেই ১৯৮৫ সালে, দুই জার্মানির (পূর্ব ও পশ্চিম) পুনর্মিলনের আগে। আর কখনোই ফাইনালে উঠতে না পারা আর্জেন্টিনা এ নিয়ে ছয়বার সেমিফাইনালের বাধা টপকাতে ব্যর্থ হলো।
‘মেসি ও ম্যারাডোনার মিশ্রণে’ বেড়ে উঠতে থাকা এচেভেরি আজ সেভাবে আলো ছড়াতে পারেননি। প্রায় পুরোটা সময় তাঁকে কড়া মার্কিংয়ে রেখেছিলেন জার্মানরা। তবে তাঁর ব্যর্থতা প্রায় ঢেকেই দিচ্ছিলেন অগুস্তিন রুবের্তো। রিভারপ্লেটের ১৭ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড হ্যাটট্রিক করে ম্যাচটাকে নিয়ে যান টাইব্রেকারে। কিন্তু দুর্দান্ত পারফরম্যান্স বৃথা গেছে জার্মান গোলরক্ষক হেইডের বীরত্বে।
গোল–উৎসবের এই সেমিফাইনালে ৯ মিনিটে প্যারিস ব্রুনারের গোলে এগিয়ে যায় জার্মানি। তবে বিরতিতে যাওয়ার আগে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় আর্জেন্টিনা। জোড়া গোল করে লাতিন আমেরিকার দলটিকে এগিয়ে দেন রুবের্তো।
৫৮ মিনিটে সেই ব্রুনারের গোলেই সমতায় ফেরে জার্মানি। বহু বাঁক বদলের ম্যাচে ম্যাক্স মোরস্টেটের গোলে আরেক দফা এগিয়েও যায়। নির্ধারিত ৯০ মিনিট পর্যন্তও ৩–২ ব্যবধান ধরে রাখলে মনে হচ্ছিল আর্জেন্টিনা বোধহয় তখনই বিদায় নিতে চলেছে।
কিন্তু যোগ করা সময়ে ম্যাচটা আবারও নাটকীয় মোড় নেয়। রেফারি শেষ বাঁশি বাজানোর কয়েক সেকেন্ড আগে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণের পাশাপাশি আর্জেন্টিনাকে সমতায় ফেরানো গোলটি করেন রুবের্তো। অথচ সেই রুবের্তোকে টাইব্রেকারে শট নিতে পাঠাননি আর্জেন্টাইন কোচ দিয়েগো প্লাসেন্তে! হয়তো সেই ভুলেরই খেসারত দিতে হলো ম্যাচ হেরে।
আজ সন্ধ্যায় আরেক সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে ফ্রান্স-মালি। আগামী শনিবার মানাহান স্টেডিয়ামেই শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ফ্রান্স অথবা মালির বিপক্ষে খেলবে জার্মানি।