চেলসির সাবেক মালিক রোমান আব্রামোভিচ ও বর্তমান মালিক টড বোয়েলি
চেলসির সাবেক মালিক রোমান আব্রামোভিচ ও বর্তমান মালিক টড বোয়েলি

কোচ ছাঁটাইয়ের সেই পুরোনো সংস্কৃতিতে চেলসির নতুন মালিকও

ফুটবল কোচদের চাকরি নিয়ে ‘সকার ইন সান অ্যান্ড শ্যাডো’ বইয়ে আক্ষেপ করে এদোয়ার্দো গালেয়ানো লিখেছিলেন, ‘আজ যে কোচকে নিয়ে সমর্থকেরা উল্লাস করে তার অমরত্ব চাইছে, পরের রোববারে সেই একই কোচকেই তারা মরতে বলবে।’

গালেয়ানোর এই আক্ষেপের সঙ্গে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি একাত্ম বোধ করবেন ইংলিশ ক্লাব চেলসির কোচরা। স্টামফোর্ড ব্রিজে কোচদের পরিণতি যেন যখন তখন ছাঁটাই হওয়া। টমাস টুখেল তার সর্বশেষ শিকার।

পুরোনো মালিক রোমান আব্রামোভিচের কোচ ছাঁটাইয়ের সংস্কৃতি ধরে রেখে একই পথে হেঁটেছেন নতুন মালিক টড বোয়েলিও। দায়িত্ব নেওয়ার ৫৯০ দিনের মাথায় চাকরি হারালেন টুখেল। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ চেলসির নতুন মালিকের নাম দিয়েছেন, টড বোয়েলিভিচ!

চেলসি কোচ থেকে বরখাস্ত হয়েছেন টুখেল

২০০৩ সালে প্রথম চেলসির মালিকানা বুঝে নেন আব্রামোভিচ। রাশিয়ান এই ধনকুবের দায়িত্ব নেওয়ার আগপর্যন্ত বলার মতো কোনো সাফল্যই ছিল না পশ্চিম লন্ডনের ক্লাবটির। প্রথম শ্রেণির লিগ জেতার স্মৃতিতেও তত দিনে ৫০ বছরের পুরোনো ধুলা জমে গেছে। তাই চেলসি কেনার পর সাফল্যের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন আব্রামোভিচ। দায়িত্ব নেওয়ার বছরে অবশ্য চেলসির অবস্থা একেবারে খারাপ ছিল না। ‘অপরাজিত’ থেকে লিগ জেতা আর্সেনালের পরে দুইয়ে থেকে ২০০৩–০৪ মৌসুম শেষ করে চেলসি।

তবে এটুকুতেই সন্তুষ্ট ছিলেন না ক্লাবমালিক। পরের মৌসুমের শুরুতেই প্রথমবারের মতো তাঁর খড়্গের নিচে পড়েন কোচ ক্লদিও রানিয়েরি। লেস্টারের হয়ে পরে ইতিহাস গড়া রানিয়েরিই ছিলেন আব্রামোভিচ যুগে চেলসির ছাঁটাই হওয়া প্রথম কোচ।
রানিয়েরির পর চেলসি নিয়ে আসে পোর্তোকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতানো জোসে মরিনিওকে। নিজেকে ‘স্পেশাল ওয়ান’ ঘোষণা করে পরের দুই মৌসুমে টানা দুটি লিগ শিরোপা এনে দেন মরিনহো। তাতেও অবশ্য খুব একটা লাভ হয়নি।

ক্লাব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় সমঝোতা করে চেলসি ছাড়েন মরিনহো। আব্রামোভিচের অধীনে তৃতীয় কোচ হিসেবে আসা অ্যাব্রাহাম গ্রান্ট অবশ্য এক বছরও পুরো থাকতে পারেননি। চেলসির হয়ে চাকরি হারানো পরবর্তী কোচের নামও বেশ হেভিওয়েট। ব্রাজিলকে ২০০২ সালের বিশ্বকাপ জেতানো লুইস ফিলিপ স্কলারিকেও ব্যর্থতার দায়ে চেলসি ছাড়তে হয়।

কার্লো আনচেলত্তিরও বরখাস্ত হওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে চেলসিতে

রিয়াল মাদ্রিদকে গত মৌসুমে লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতানো কার্লো আনচেলত্তি ছিলেন চেলসির ছাঁটাই হওয়া পঞ্চম কোচ। ‘ব্লুজ’দের প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপ জেতানো আনচেলত্তি ছাঁটাই হয়েছিলেন এভারটনের বিপক্ষে ১–০ গোলে ম্যাচ হারের মাত্র দুই ঘণ্টার মাথায়। এরপর একে একে চেলসির কোচ হিসেবে চাকরি হারাতে হয়েছে আন্দ্রে ভিয়াস বোয়াস, রবার্তো ডি মাত্তেও, রাফায়েল বেনিতেজ, দ্বিতীয় মেয়াদে জোসে মরিনহো, গাস হিডিংক, আন্তোনিও কন্তে এবং ঘরের ছেলে ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডকে। আব্রামোভিচের সময়কালে একমাত্র কোচ হিসেবে কেবল মরিজিও সারি অন্য ক্লাবের দায়িত্ব নিয়ে নিজ থেকে চাকরি ছাড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। ২০১৯ সালে চেলসি ছেড়ে জুভেন্টাসে যোগ দেন সারি।

ল্যাম্পার্ডকে সরিয়েই টুখেলকে মাঝ মৌসুমে নিয়ে এসেছিলেন আব্রামোভিচ। আর টুখেল আস্থার প্রতিদান দিয়েছিলেন চেলসিকে চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জিতিয়ে। এরপর ইউক্রেনে রাশিয়ান আগ্রাসনের জেরে চেলসির মালিকানা ছাড়তে হলো আব্রামোভিচকে। তবে বোয়েলির অধীনে যাত্রাটা একেবারেই ভালো হয়নি চেলসির।

ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড

লিগে ৬ ম্যাচে ৩ জয়, ১ ড্র ও ২ হারে টেবিলের ছয়ে অবস্থান করছে স্টামফোর্ড ব্রিজের ক্লাবটি। এরপর গতকাল রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজেদের প্রথম ম্যাচে চেলসি ১–০ গোলে হেরে বসে দিনামো জাগরেবের কাছে। সেই হারই কাল হয়েছে এই জার্মান কোচের। চেলসির হয়ে শততম ম্যাচ শেষেই বিদায় নিতে হচ্ছে তাঁকে। আর এর মধ্য দিয়ে ভবিষ্যৎ কোচদেরও বার্তা দিয়ে রাখলেন বোয়েলি। মালিকানা বদলালেও কোচদের প্রতি পুরোনো দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে না চেলসি।