২০১৭ সালে ২২ কোটি ইউরোতে সবচেয়ে দামি ফুটবলার হিসেবে পিএসজিতে আসেন নেইমার। নেইমারকে পেতে সে সময় মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছিল পিএসজি। বার্সা চেষ্টা করেও নেইমারের পিএসজি যাওয়া আটকাতে পারেনি। নেইমার যোগ দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই প্যারিসের ক্লাবটিতে আসেন কিলিয়ান এমবাপ্পেও। নেইমার আসার পর পিএসজিতে সবচেয়ে বড় তারকা ছিলেন এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডই।
ক্লাবও শুরু থেকেই নেইমারকে সেই অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছে। এরপর একই পথ ধরে প্রথমে আনহেল দি মারিয়া এবং ২০২১ সালে পিএসজিতে আসেন লিওনেল মেসিও। পিএসজিতে এমবাপ্পে-মেসির মতো তারকাদের আগমন মূলত নেইমারের কারণে হয়েছে বলে মনে করেন ব্রাজিলের বিখ্যাত এজেন্ট আন্দ্রে কারি। এ সময় ১০০ মিলিয়ন বা এর চেয়ে বেশি অঙ্কের দলবদলগুলোর ব্যর্থতাকেও সামনে এনেছেন কারি।
নেইমারের জন্য বিপুল অঙ্কের অর্থ খরচ করলেও মাঠে তার প্রতিদান অবশ্য সামান্যই পেয়েছে পিএসজি। বিশেষ করে, পিএসজির চাওয়া ছিল ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা। নেইমার-এমবাপ্পে-মেসি ত্রয়ীকে দিয়েও সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনি তারা। তবে মাঠের খেলায় তেমন কিছু না পেলেও মাঠের বাইরে নেইমারের কারণে পিএসজি অবিশ্বাস্য সুবিধা পেয়েছে বলে মনে করেন কারি।
এমনকি নেইমারের কারণেই মেসি-এমবাপ্পের মতো তারকারা পিএসজিকে বেছে নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন এই এজেন্ট, ‘নেইমার পিএসজিকে যা দিয়েছে, তা অমূল্য। বিপণনের দিক থেকে নেইমারের কাছ থেকে পিএসজি যা পেয়েছে, সে হিসেবে সে ক্লাবটির ইতিহাসের সবচেয়ে সস্তা খেলোয়াড়। আপনি পৃথিবীর যে প্রান্তেই যান, সেখানে একটা ছেলেকে দেখবেন পিএসজির জার্সি পরা। অথচ তারা আগে এই ক্লাব সম্পর্কে কেউ কিছু জানতই না। শেষ পর্যন্ত এখানে মেসি, এমবাপ্পে ও দি মারিয়াসহ অন্যরা এসেছে।’
এমবাপ্পের পিএসজিতে যাওয়ার ক্ষেত্রে নেইমারের সরাসরি সম্পৃক্ততা না থাকলেও মেসির পিএসজিতে নাম লেখানোর সিদ্ধান্তে অবশ্য ভূমিকা ছিল ব্রাজিলিয়ান তারকার। মেসি বার্সা ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার পর নেইমারই তাঁকে প্যারিসের ক্লাবটিতে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন বলে সেই সময় অনেক খবর এসেছিল ইউরোপের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।
দলবদলের বাজারে বড় নাম কারি এ সময় কথা বলেছেন বড় অঙ্কের দলবদলগুলোর পরিণতি নিয়েও। ২০০৩ সালে রোনালদিনিওর বার্সেলোনায় যাওয়া এবং ২০১৩ সালে নেইমারকে বার্সেলোনায় নিয়ে আসার এই কারিগর বলেছেন, ‘এমবাপ্পে এবং নেইমারকে বাদ দিলে আমরা ১০০ মিলিয়ন বা তার বেশি খুব কম দলবদলই দেখব, যা কাজ করেছে। বেশির ভাগ এমন দলবদল (১০০ মিলিয়ন বা তার বেশি) কাজ করেনি। বার্সেলোনায় (উসমান) দেম্বেলে, আঁতোয়ান গ্রিজমান, (ফিলিপে) কুতিনিও, রিয়াল মাদ্রিদে (এডেন) হ্যাজার্ড, অনেক ক্ষেত্রে (গ্যারেথ) বেলের দলবদল কিন্তু কাজ করেনি। আবার আতলেতিকো মাদ্রিদ জোয়াও ফেলিক্সের জন্য ১২ কোটি ৬০ লাখ ইউরো খরচ করেছে এবং ৮ বা ৯ কোটি ইউরো দিয়েছে টমাস লেমারের জন্য। আর চেলসিও অনেক টাকা খরচ করেছে কিন্তু কিছুই পায়নি।’
কয়েক দিন আগে মেসি-নেইমার-এমবাপ্পে তথা এমএনএম ত্রিফলার ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলেছেন নেইমারও। রিয়াল মাদ্রিদে গ্যালাকটিকোর ব্যর্থতার উদাহরণ টেনে নেইমার বলেছিলেন, ‘গ্যালাকটিকোও রিয়াল মাদ্রিদকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতাতে পারেনি। সুতরাং এমন হতেই পারে। আমাদের তিনজনকেই বিশ্বসেরা বলা হয়। পিএসজিতে আমাদেরকে নিয়ে একটা দুর্দান্ত দল গড়া হয়েছিল। আমাদের ব্যর্থতাটা পুরোপুরি ফুটবলীয়।’
নিজেদের ব্যর্থতার দায় অবশ্য দুর্ভাগ্যের ওপর চাপিয়ে নেইমার আরও বলেছেন, ‘দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের দলে সমন্বয়টা ঠিক হয়নি। আমরা সবকিছুই জিততে চেয়েছি, কিন্তু আসল জিনিসই জিতিনি। আমরা নিজেরা ঠিক ছিলাম। কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু ফুটবলে অনেক সময় অনেক কিছুই ঘটে, যেটা প্রত্যাশিত নয়। আমাদের ব্যর্থতাটা তেমনই একটা জিনিস। ফুটবল তো আর কেক তৈরির রেসিপি নয়।’
মেসির বিদায়ে এমএনএম ত্রিফলা এরই মধ্যে ভেঙে গেছে। এমবাপ্পেও এখন পিএসজি ছাড়ার পথে। ধারণা করা হচ্ছে আগামী মৌসুমে নেইমারের কাঁধেই থাকবে পিএসজির দায়িত্ব।