দেশের ফুটবলে একসময় ‘জায়ান্ট কিলার’ হিসেবে পরিচিত ছিল তারা। ১৯৮৮ সালে সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রথম খেলার সুযোগ পেয়ে মাঝারি শক্তির ক্লাব হয়ে উঠেছিল ইয়াংমেন্স ক্লাব ফকিরেরপুল। নব্বইয়ের দশকে আবাহনী, মোহামেডান, মুক্তিযোদ্ধা, ব্রাদার্স ইউনিয়নের মতো ক্লাবগুলোর সঙ্গে টক্কর দিয়ে লিগে চতুর্থ হয়েছিল দলটি।
মাঝখানে নানা কারণে দৃশ্যপট থেকে প্রায় হারিয়ে যেতে বসা সেই ইয়াংমেন্সই দীর্ঘদিন পর আবার ফিরছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে। আজ কমলাপুরের শহীদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে (বিসিএল) পিডব্লুডি স্পোর্টস ক্লাবকে ২-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা নিশ্চিত করেছে তারা।
২০১৯ সালে ক্যাসিনো-কাণ্ডে যে কয়েকটি ক্লাবের নাম এসেছিল, ইয়াংমেন্স ছিল তাদের একটি। দীর্ঘদিন সিলগালা ছিল তাদের ক্লাব টেন্ট। এর আগে ২০১৭ সালে বিসিএলের শিরোপা জিতে প্রিমিয়ার লিগে উঠেও অর্থাভাবে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিল তারা। ৭০ বছরের পুরোনো এই ক্লাব এবার প্রিমিয়ার লিগকে পাখির চোখ করে আবারও সফল।
আজ সন্ধ্যায় পিডব্লুডির বিপক্ষে ম্যাচে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থেকেই নেমেছিল ইয়াংমেন্স। শিরোপা জিততে ড্র করলেই চলত। ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটে ডালিম বর্মনের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল ইয়াংমেন্স। প্রথমার্ধে স্কোরলাইন ছিল ১-০। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে (৪৭ মিনিটে) পিডব্লুডিকে সমতায় ফেরান জয়ন্ত লাল। ৭৯ মিনিটে ইয়াংমেন্সকে জয়সূচক গোল উপহার দেন ইরফান হোসেন।
প্রিমিয়ার লিগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে খুশির সঙ্গে অবশ্য কিছুটা দুশ্চিন্তাও আছে ইয়াংমেন্স ক্লাব ফকিরেরপুলের। দুশ্চিন্তাটা প্রিমিয়ার লিগের দল গঠনের জন্য অর্থের জোগান নিয়েই।
ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মাইনু বলেছেন, ‘এবার আমরা যে খুব বড় বাজেটের দল নিয়ে বিসিএলে খেলেছি, ব্যাপারটা তা নয়। কিন্তু লিগ যত গড়িয়েছে, আমরা ভালো করেছি। শেষ পর্যন্ত ভালো লাগছে প্রিমিয়ারে যোগ্যতা অর্জন করে। তবে একই সঙ্গে ভাবনা হচ্ছে, প্রিমিয়ারের দলটা গঠন করব কীভাবে। অনেক টাকা লাগবে। তবে আমরা এবার প্রিমিয়ারে যে করেই হোক খেলব। অর্থ বাধা হবে না।’
ক্যাসিনো-কাণ্ড ক্লাবের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে যথেষ্টই। মাইনু বললেন সেটিই, ‘ইয়াংমেন্স মহল্লাভিত্তিক ক্লাব। এই ক্লাব চলে মহল্লার মানুষের টাকায়। কিন্তু ক্যাসিনো আমাদের ইমেজের ক্ষতি করেছে। সেটিই পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করছি। প্রিমিয়ারে যোগ্যতা অর্জন আমাদের সেই লক্ষ্যে বড় পদক্ষেপ।’
বিসিএল থেকে শীর্ষ দুই দল প্রিমিয়ারে খেলার যোগ্যতা লাভ করে। আজকের ম্যাচের আগপর্যন্ত ইয়াংমেন্সের সঙ্গে পিডব্লুডি ও ঢাকা ওয়ান্ডারার্সও ছিল দৌড়ে।
ইয়াংমেন্সের কাছে হেরে পিডব্লুডির সম্ভাবনা কিছুটা ফিকে হয়ে গেছে। তবে তাদের সুযোগ এখনো আছে। আগামীকাল বিকেলে বাফুফে এলিট একাডেমি ও ওয়ান্ডারার্সের ম্যাচ। সে ম্যাচে ওয়ান্ডারার্স ৩-০ গোলে হেরে গেলে তাদের টপকে পিডব্লুডিই প্রিমিয়ারে ইয়াংমেন্সের সঙ্গী হবে। তবে এখন পর্যন্ত গোল পার্থক্যে এগিয়ে থাকায় ইয়াংমেন্সের সঙ্গী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ওয়ান্ডারার্সেরই।