১ হাজার গোলের মাইলফলক ছোঁয়া ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অর্জনগুলোর মধ্যে একটি। পেলে, রোমারিও, তুলিও মারাভিলিয়া...খুব কম ফুটবলারই ক্যারিয়ারে হাজার গোল করতে পেরেছেন।
তবে যদি বলা হয় এই পৃথিবীতে এখনো একজন জীবিত আছেন, যিনি তাঁর ক্যারিয়ারে ৯ হাজার গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন এবং এখনো খেলে যাচ্ছেন, তাহলে অবিশ্বাসের ঘোর লেগে যাওয়াই স্বাভাবিক। বিশ্বাস করুন বা না করুন, এমন একজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে টেলিভিশন নেটওয়ার্ক ইপিটিভি। চ্যানেলটি ব্রাজিলের শীর্ষ সংবাদমাধ্যম ও গ্লোবোর মালিকানাধীন।
৯ হাজার গোল করা এই ফুটবলারের নাম সিও গেরালদো কস্তা। ৮২ বছর বয়সী এই ভদ্রলোক থাকেন ব্রাজিলের বৃহত্তর শহর সাও পাওলোর পৌর এলাকা ভালিনিওসে।
ইপিটিভি সম্প্রতি তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছে। সাক্ষাৎকারের চুম্বকাংশ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ও গ্লোবো। প্রতিবেদনের শুরুতেই তারা গেরালদোকে নিয়ে লিখেছে, ‘বয়স ৮২ বছর। ক্যারিয়ারে ৯ হাজার গোল করেছেন। খুব সম্ভবত তিনিই বিশ্বের সেরা সক্রিয় গোলদাতা।’
সত্যি কি তা–ই? প্রশ্নটা গেরালদোকে করা হলে তিনি রসিকতা করে বলেন, ‘আমি একজন ঘাতক। আমি এমন একজন, যে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেয়।’
বুঝতেই পারছেন, গেরালদো যে ৯ হাজার গোল করেছেন, তা পেশাদার বা স্বীকৃত কোনো ফুটবল প্রতিযোগিতায় নয়। বন্ধু, সহকর্মী ও স্থানীয়দের সঙ্গে খেলে তিনি এ ‘রেকর্ড’ গড়েছেন।
সে যা-ই হোক, গোল তো গোলই। গেরালদোর এই গোল করা এবং তা টুকে রাখার ‘ভূত মাথায় চাপে’ ২০০২ সালে, তখন তাঁর বয়স ৬০ বছর। এক সহকর্মীর রসিকতা করে বলা কথাটাই গুরুত্বসহকারে নেন।
গেরালদোর প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল পেলের ১২৮৩ গোল ছাড়িয়ে যাওয়া। তিনি এই অভিযানকে এতটাই গুরুত্বসহকারে নেন যে নোটবই সংগ্রহ করে গোলসংখ্যা টুকে রাখতে শুরু করেন। সম্প্রতি সেগুলো কম্পিউটারে (মাইক্রোসফট স্প্রেডশিটে) আরও বিস্তারিতভাবে লিখে রেখেছেন।
তাঁর কাছে এখন একেকটা গোল মানেই একেকটা নতুন রেকর্ড, ‘২০০২ সালের অক্টোবরে এক সহকর্মী এ ধারণা নিয়ে আমার কাছে আসে। আমি পেলের গোলসংখ্যাকে মাথায় নিয়ে খেলতে শুরু করি। আমি ঠিক করি, ২০১০ সালের মধ্যে আমাকে ১০০২ গোল করতে হবে। তাই খেলা শেষ হওয়ার পরপরই আমি গোলসংখ্যা গণনা করে রাখতে থাকি। আমি মাঠে এতটাই ধারাবাহিকতা দেখিয়েছি যে হাজার গোল (২০১০ সালের) অনেক আগেই করে ফেলেছি।’
মাইলফলকগুলোকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতি ৫০০ গোল পরপর স্মারক জার্সি উপহার পেয়েছেন গেরালদো। ৯ হাজার গোল করার পরও স্মারক জার্সি পেয়েছেন। সেটি পরেই ইপিটিভিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। কীভাবে এতগুলো গোল করলেন—এ প্রশ্নে রসিক গেরালদোর উত্তর, ‘গ্রুপের কয়েকজনকে পেলেই আমি সপ্তাহে পাঁচটি ম্যাচ খেলি। এই বয়সেও আমি এতটাই প্রাণবন্ত যে টানা দুই ঘণ্টা খেললেও ক্লান্ত হই না। শালীনতা বজায় রেখে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা আমাকে নিয়ে বিশদ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে পারে (হাসি...)।’
৯ হাজার গোলের মাইলফলক ছোঁয়ার পর ভালিনিওস পৌরবাসী গেরালদোকে যেভাবে অভিনন্দনে সিক্ত করেছেন, তাতে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন, ‘৯ হাজার গোল করার পর সবাই দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে আমাকে সম্মান জানিয়েছে। আমার জন্য মুহূর্তটা ছিল আবেগঘন। স্কুলে থাকতে (ফুটবলে) আমার কোনো ভিত্তি ছিল না। আমি রাস্তায় খেলা শিখেছি।’
এই বয়সেও কেন খেলে যাচ্ছেন, সেটাও জানিয়েছেন তিনি, ‘গোলসংখ্যা গণনা করে রাখি মনকে তৃপ্তি দেওয়ার জন্য। আর ফুটবল খেলি শরীর ভালো রাখার জন্য। আমি একজন ডায়াবেটিক রোগী। ক্যালরি পুড়িয়ে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতেই খেলে যাচ্ছি।’
গেরালদো সত্যি সত্যিই এত গোল করতে পারেন কি না, তা নিশ্চিত হতে ইপিটিভির একটি দল তাঁর একটি ম্যাচ মাঠে বসে দেখেছে। একটি-দুটি নয়, ওই ম্যাচে তিনি সাত-সাতটি গোল করেছিলেন।
ম্যাচ শেষে ৭ গোলের তথ্য নোট করে রেখেছেন গেরালদো, এবার নতুন এক লক্ষ্য নিয়ে। লক্ষ্যটা তাঁর ১০ হাজার গোলের কীর্তি গড়া। এর আগে থামার ইচ্ছা নেই, ‘১০ হাজারে পৌঁছানো ঐতিহাসিক ব্যাপার হবে। জানি, কাজটা কঠিন। তবে সেখানে পৌঁছাতে চাই। প্রতিবছর আমি গড়ে ৫০০টি গোল করি।’
আর ২ বছর ৫০০টি করে গোল করতে পারলেই ২০২৬ সাল নাগাদ ১০ হাজারে পৌঁছে যাবেন গেরালদো। ভালিনিওসবাসী নিশ্চয় সেদিনের অপেক্ষাতেই আছেন!