লিভারপুলের দুই গোলদাতা সালাহ ও নুনিয়েজ
লিভারপুলের দুই গোলদাতা সালাহ ও নুনিয়েজ

চ্যাম্পিয়নস লিগ

নাপোলিকে প্রথম হারের স্বাদ দিল লিভারপুল

নাপোলিও তবে হারতে জানে! এ মৌসুমে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে অপরাজেয় এক দলে পরিণত হয়েছিল ইতালিয়ান এ ক্লাবটি। চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং ঘরোয় লিগ কোথাও নাপোলিকে হারাতে পারেনি কেউ। অবশেষে সেই নাপোলিকে এবার হারের স্বাদ দিল লিভারপুল।

মোহাম্মদ সালাহ ও দারউইন নুনিয়েজের লক্ষ্যভেদে চ্যাম্পিয়নস লিগে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে ২-০ ব্যবধানে জয় পেয়েছে লিভারপুল। হেরেও অবশ্য গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নাপোলি।

আগেই নকআউট পর্ব নিশ্চিত করায় এই ম্যাচটি ছিল দুই দলের জন্য নিয়মরক্ষার। তবে এই ম্যাচেও ছিল ভিন্ন এক লড়াই। মৌসুমে এখন পর্যন্ত কোনো ম্যাচ না হারার রেকর্ড নিয়ে মাঠে নেমেছিল নাপোলি। সেটি ধরে রাখায় ছিল তাদের লক্ষ্য। যা তারা পারেনি।

সালাহদের গোল উদ্‌যাপন

আর লিভারপুলের জন্য এ ম্যাচ ছিল প্রতিশোধের। প্রথম লেগের ম্যাচে নাপোলির মাঠে গিয়ে ৪-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। এটি ছিল চ্যাম্পিয়নস লিগে ক্লপের ১০০তম ম্যাচ। ঘরের মাঠে এমন ম্যাচে শেষ পর্যন্ত জয় পেয়েছে লিভারপুল।

নিজেদের সর্বশেষ ম্যাচ থেকে ৪ পরিবর্তন নিয়ে এদিন মাঠে নামে নাপোলি। ঘরের মাঠে অবশ্য অতিথিদের শুরু থেকে চাপে রাখার চেষ্টা করে লিভারপুল। ৫ মিনিটে সুযোগও তৈরি করে অ্যানফিল্ডের দলটি। তবে কার্টিস জোন্সের সেই প্রচেষ্টা থেকে গোল পায়নি স্বাগতিকেরা।

ম্যাচের শুরুর দিকে লিভারপুল প্রচুর বল পেলেও নাপোলি ডি-বক্সে ঢুকতে বেশ বেগই পেতে হচ্ছিল সালাহ-ফিরমিনোদের। বিপরীতে প্রতি-আক্রমণে হুমকি তৈরির চেষ্টা করছিল নাপোলি। নতুন ম্যারাডোনা খ্যাত খিচা কাভারাস্কেইয়া একাধিকবার আক্রমণে গিয়ে চাপে ফেলেছিল লিভারপুল ডিফেন্সকে। যদিও সেসব আক্রমণ লিভারপুলের জমাট রক্ষণ ভাঙার জন্য যথেষ্ট ছিল না।

প্রথমার্ধে লিভারপুলের আক্রমণগুলো গুছানো হলেও, সেগুলো বারবার খেই হারাচ্ছিল নাপোলির অ্যাটাকিং থার্ডে গিয়ে। আর নাপোলি ব্যর্থ হচ্ছিল বল নিয়ন্ত্রণে রাখতে। নিজেদের অর্ধ ছেড়ে বেরোতে গেলেই চাপে পড়ছিল তারা।

শেষ মুহূতেৃ গোল করেন নুনিয়েজ

এর মাঝে ম্যাচের ২৯ মিনিটে দুই দলই দারুণ দুটি সুযোগ পেয়েছিল। নাপোলির এনদম্বেলে ভালো জায়গায় বল পেয়েও তুলে দেন লিভারপুল গোলরক্ষক আলসিন বেকারের হাতে।

পাল্টা আক্রমণে মোহাম্মদ সালাহর অসাধারণ এক থ্রু বল পেয়ে দারুণ একটি শটও নিয়েছিলেন থিয়াগো আলকান্তারা। তবে নাপোলি গোলরক্ষক অ্যালেক্স মেরেট ঝাঁপিয়ে পড়ে রুখে দেন সেই প্রচেষ্টা। একটু পর রবার্তো ফিরমিনোর অসাধারণ এক পাসে বল পেয়ে কার্টিস জোন্স বারের ওপর দিয়ে মারায় গোল পাওয়া হয়নি লিভারপুলের।

প্রথমার্ধে কিছুটা বৃত্তবন্দি হয়ে থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে লিভারপুলের ওপর চাপ প্রয়োগ করে খেলতে শুরু কর নাপোলি। এর ফল পেতেও অবশ্য খুব বেশি সময় লাগেনি। ৫০ মিনিটে কাছাকাছি গিয়ে মিস করলেও, ভুল হয়নি ম্যাচের তিন মিনিট পর।

কাভারাস্কেইয়ার অসাধারণ এক ফ্রি কিকে হেডে লক্ষ্যভেদ করেন লিও অস্টিগার্ড। তবে লম্বা সময় ভিএআর চেক করে অফসাইডের কারণে গোল বাতিল করেন রেফারি। ৬০ মিনিটে কাছাকাছি গিয়েও সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি ‘কাভারাডোনা’ খ্যাত জর্জিয়ান তারকা কাভারাস্কেইয়া।

ম্যাচের উইং ধরে আক্রমণে গিয়ে আরও একাধিকবার গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল নাপোলি। তবে এদিন দলটির ভাগ্যে যেন গোল লেখা ছিল না। সুযোগ আসছিল লিভারপুলের সামনেও। তবে কখনো ফিনিশিংয়ের দুর্বলতা আবার কখনো প্রতিপক্ষের জমাট রক্ষণের কারণে আটকে যাচ্ছিল লিভারপুলের সব আক্রমণ।

ফিরমিনোর দুর্দান্ত পাস

ম্যাচ যখন গোলশূন্য শেষে প্রহর গুণছিল তখনই দেখা মেলে সালাহ জাদুর। ম্যাচের ৮৫ মিনিটে সিমিকাসের দারুণ এক কর্নারে প্রথমে হেড নেন নুনিয়েজ। সেটি প্রথমবার মেরেট ফিরিয়ে দিলেও ফিরতি শটে গোল নিশ্চিত করেন মোহাম্মদ সালাহ। এর গোলে চ্যাম্পিয়নস লিগে লিভারপুলের হয়ে স্টিভেন জেরার্ডের ৪১ গোলের মাইলফলক ছুঁলেন সালাহ।

এটুকুতেই অবশ্য থামেনি লিভারপুল। যোগ করা সময়ের শেষ মুহূর্তে লিভারপুলের হয়ে দ্বিতীয়বার লক্ষ্যভেদ করেন নুনিয়েজ। প্রিমিয়ার লিগের সর্বশেষ ম্যাচে হারের পর দারুণ খেলতে থাকা নাপোলিকে হারিয়ে জয়ে ফিরল ক্লপের দল।