আবাহনীর ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ওয়াশিংটনের সঙ্গে বল দখলের লড়াইয়ের সময় সংঘর্ষ হয়েছিল তাঁর। সেটা ভোলেননি ববুরবেক ইউলদাসোভ। কিংসের উজবেক ডিফেন্ডার শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে ছাপার অযোগ্য গালি দেন ওয়াশিংটনসহ আবাহনীর একাধিক খেলোয়াড়কে উদ্দেশ করে। যার পরিণতিতে রেফারি নাসির উদ্দিন তাঁকে লাল কার্ড দেখান ম্যাচ শেষে।
এ নিয়ে মাঠে খানিক উত্তেজনা। বড় ম্যাচে এক–আধটু উত্তেজনা না হলে কি চলে! সেটাই যেন মনে করিয়ে দিল আজকের আবাহনী-কিংস ম্যাচের পরিবেশ। কিন্তু সেদিকে আর দর্শকদের মনোযোগ দিয়ে লাভ কী! গোপালগঞ্জের ফজলুল হক মনি স্টেডিয়ামে বসুন্ধরা কিংসের সমর্থকেরা ততক্ষণে উতলা হয়ে ওঠেন খেলোয়াড়দের সঙ্গে সেলফি তুলতে। কেউ পেরেছেন কেউ পারেননি। ড্রেসিংরুমে যাওয়ার আগে তপু বর্মণ সেলফি তোলেন সমর্থকদের সঙ্গে। কোচ অস্কার ব্রুজোনও একই আবদার মেটান। তাঁদের সঙ্গে একটু হাত মেলাতে কিংস সমর্থকদের সে কী চেষ্টা!
আজকের পড়ন্ত বিকেলটা কিংসের খেলোয়াড়–কোচদের কাছে বড় এক প্রাপ্তিই হয়ে রইল। প্রিমিয়ার লিগ ম্যাচে নিজেদের প্রথম বড় ম্যাচে যে আবাহনী লিমিটেডকে হারানো গেল ২-০ গোলে। লিগের প্রথম ৫ ম্যাচ শেষে কিংসের পয়েন্ট যেখানে ১৫, আবাহনী মাত্র ৭। কিংসের কাছে এটি অবশ্য শুধুই একটি জয় নয়। নিজেদের বীরত্ব আর শক্তি দেখানোর জয়ও। কিংস যেন ঘোষণা করল, ‘তোমরা দেখো, আমাদের শক্তি কত।’ বিশেষ করে তিন ব্রাজিলিয়ানে যেন উড়ছে কিংস। তুলনায় আবাহনীর বিদেশিরা পিছিয়েই। ফলে যা হওয়ার তা–ই হয়েছে।
ড্রেসিংরুমে যাওয়ার আগে মাঠে পাওয়া গেল কিংস কোচ ব্রুজোনকে। জয়ের উচ্ছ্বাসের মধ্যেই বললেন, ‘বলার আসলে কিছু নেই। কঠিন ম্যাচ ছিল। আমরা তাদের বিল্ডআপ করতে দিইনি। তার আগেই থামিয়ে দিয়েছি। আমরা তুলনামূলক আজকে লম্বা বল খেলেছি। কারণ, মাঠ এবং আবাহনীর মাঝমাঠ। মাঝমাঠে ওদের হৃদয়, ফার্নান্দেজরা ছিল। আমরা বল দখলের লড়াইয়ে জিতেছি এবং পরিকল্পনা কাজে এসেছে। জানতাম, আবাহনীর রক্ষণে কিছু সমস্যা আছে। সেটা আমরা কাজে লাগাতে পেরেছি।’
আবাহনীর ম্যানেজার নজরুল ইসলাম বিষণ্ন মনে দাঁড়িয়ে ছিলেন মাঠের এক কোণে। তাঁর মানতে দ্বিধা নেই, এই কিংসকে হারানো কঠিন। নিজেই বললেন, ‘ওদের বিদেশি আর আমাদের বিদেশি দেখুন। পার্থক্যটা এখানেই পরিষ্কার। মানের দিক থেকে ওরা অনেক এগিয়ে।’
একটু দূরে আবাহনীর ড্রেসিংরুমে উঁকি দিয়ে দেখা গেল, ভেতরে কিছুটা থমথমে অবস্থা। কারও মুখে কথা নেই। এভাবে ম্যাচ হেরে লিগের শিরোপা–দৌড়ে অনেকটা পিছিয়ে পড়ার বাস্তবতা তাদের মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। ড্রেসিংরুম থেকে একটু বেরিয়ে আবাহনীর সহকারী কোচ প্রাণতোষ কুমার বললেন, ‘আসলে বলার কিছু নেই। বাস্তবতা মানতে হবে। মানের দিক থেকে কিংসের বিদেশিরা এগিয়ে। আমাদের কোচও একই কথা বলেছেন।’
তপু বর্মণের জন্য ম্যাচটা ফিরে আসার উপলক্ষও বলা যায়। অনেক দিন পর বড় ম্যাচ খেললেন। দলের জয়ে খুশি কিংসের সেন্টারব্যাক বলে গেলেন, ‘এটি আমাদের জন্য ফাইনাল ম্যাচ ছিল। আমরা একটা টিম হিসেবে খেলেছি। আর আমরা ওদের চেয়ে এগিয়ে।’ কিংসের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর আবু জোবায়েরও বললেন একই কথা, ‘আমরা যে এগিয়ে, সেটা আবার প্রমাণ হলো। আসলে কোয়ালিটিই আসল।’ মাঠে আসা কেউই হয়তো এর সঙ্গে দ্বিমত করবেন না।