রবিনিও
রবিনিও

ধর্ষণ-মামলায় ব্রাজিলেই রবিনিওর কারাদণ্ড চান ইতালির আদালত

ঘটনা বহু আগের। ২০১৩ সালে ইতালির এক নৈশক্লাবে আলবেনিয়ার এক নারীকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে ব্রাজিলের সাবেক ফরোয়ার্ড রবিনিওর বিরুদ্ধে। তখন তিনি এসি মিলানের খেলোয়াড়। ইতালির আদালত সেই ধর্ষণের মামলায় ২০১৭ সালে রবিনিও ও তাঁর বন্ধু রিকার্ডো ফ্যালকাওকে ৯ বছর কারাবাসের রায় দিয়েছিলেন।

জেলে যাওয়ার ভয়ে এরপর আর ইতালিতে যাননি রবিনিও। তাই বলে ইতালি সরকারও তাঁকে ছেড়ে দিচ্ছে না। ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম ইউওএল ও গ্লোবো জানিয়েছে, রবিনিওর এই শাস্তি ব্রাজিলেই কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছেন ইতালিয়ান বিচারপতি।
ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করেছে ইতালিয়ান সরকার।

রবিনিওর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার কাগজপত্রও ইতালি থেকে ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। গ্লোবো জানিয়েছে, জননিরাপত্তা ও বিচারিক মন্ত্রণালয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে সেসব কাগজপত্র হস্তান্তর করেছে ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

রবিনিওকে ইতালিতে পাঠাতে গত বছর অক্টোবরে অনুরোধ করেছিল ইতালিয়ান সরকার। কিন্তু নভেম্বরে সেই অনুরোধ প্রত্যাখান করেন ব্রাজিলের আদালত। কারণ, ব্রাজিলের সংবিধানে এমন কোনো নিয়মের অনুমোদন নেই। অপরাধী নিয়ে ১৯৮৯ সালে দুই দেশের বিচারিক চুক্তি অনুযায়ী, ব্রাজিলেই রবিনিওর শাস্তি কার্যকর করার সুযোগ নেই।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে ব্রাজিলের বিচারমন্ত্রী ফ্লাভিও দিনো এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, দেশটির আইনে রবিনিওকে গ্রেপ্তার করার সুযোগ থাকতেও পারে। গত জানুয়ারিতে ব্যান্ড নিউজ রেডিওকে দিনো বলেছিলেন, ‘এটি আইনি ব্যাপার, রাজনৈতিক কিছু নয়। ব্রাজিলের সংবিধান অনুযায়ী (বিচারের জন্য) কোনো ব্রাজিলিয়ানকে অন্য দেশে পাঠানোর বিধান নেই। কিন্তু এখন তত্ত্বীয়ভাবে এটা কার্যকর হতে পারে। তবে তার আগে বিষয়টি ভালোভাবে যাচাই এবং প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে হবে।’

ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম ইউওএল জানিয়েছে, রবিনিওকে ইতালিতে পাঠানোর অনুরোধপত্রে সই করেছেন ইতালির বিচারমন্ত্রী কার্লো নর্দিও। ২৪ জানুয়ারি এই অনুরোধপত্রে সই করে কূটনৈতিক সংযোগের মাধ্যমে তা পাঠিয়েছেন ব্রাজিলে। সেখানে ইতালির বিচারমন্ত্রী অনুরোধ করেছেন, ‘ব্রাজিলের দক্ষ বিচারিক কর্তৃপক্ষের কাছে এই মামলা হস্তান্তর করা হলো, যেন ব্রাজিলের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে।’

মিলানে থাকতে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর ইতালি ছেড়ে নিজ দেশ ব্রাজিলের লিগ, চায়নিজ লিগ ও তুর্কি লিগে খেলেছেন রবিনিও

২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারি মিলানের আদালত রবসন ডি সউজাকে (রবিনিওর পুরো নাম) ৯ বছরের সাজা দিয়েছিল, যা ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি চূড়ান্ত হয়। অমিত প্রতিভা নিয়ে পেশাদার ফুটবলে আসা রবিনিও প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি। রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার সিটি ও এসি মিলানের মতো ক্লাবে খেললেও কখনো চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে পারেননি।

রিয়ালের হয়ে দুবার জিতেছেন লিগ এবং মিলানের হয়ে লিগ জিতেছেন একবার। মিলানে থাকতে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর ইতালি ছেড়ে নিজ দেশ ব্রাজিলের লিগ, চায়নিজ লিগ ও তুর্কি লিগে খেলেছেন রবিনিও। তুরস্কের দল ইস্তাম্বুল বাশাকশেহির থেকে ২০২০ সালে তৃতীয়বারের মতো সান্তোসে ফিরেছিলেন রবিনিও। তখন যে চুক্তিতে ফিরেছিলেন, সেটি ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর সুযোগ ছিল।

কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় সান্তোসের এক পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান। রবিনিওর সঙ্গে চুক্তি করাটা ‘নারীদের প্রতি অসম্মানজনক’ জানিয়ে দেয় সেই পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান। সান্তোস বাধ্য হয়ে ৩৯ বছর বয়সী রবিনিওর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে।২০০৩ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ব্রাজিলের হয়ে ১০০ ম্যাচ খেলে ২৮ গোল করেছেন রবিনিও।