ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই উদ্যাপনে মেতেছিল বেঞ্চে থাকা আতালান্তার খেলোয়াড়েরা। বিপরীতে ম্যাচ শেষ হতেই মৌসুমে প্রথমবারের মতো হতাশার চিত্র দেখা গেল লেভারকুসেন শিবিরে। চলতি মৌসুমে এর আগে কোনো ম্যাচেই এমন অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়নি জাবি আলোনসোর দলকে।
আজও হয়তো এমন কিছুর প্রস্তুতি ছিল না আলোনসোর। শেষ বাঁশি বাজতেই আলোনসোর চোখে অদ্ভুত এক বিস্ময়। হয়তো মনে মনে ভাবছিলেন, একটুর জন্য হলো না! এত কাছে গিয়েও পাওয়া হলো না পুরো মৌসুম অপরাজিত থেকে ট্রেবল জেতার স্বাদ। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫১ ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর মৌসুমের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটাতেই কি না হেরে বসল লেভারকুসেন। ইউরোপা লিগের ফাইনালে আতালান্তার কাছে ৩-০ গোলে হেরেছে জার্মান চ্যাম্পিয়নরা।
লেভারকুসেনের ‘সিজন ইনভিন্সিবল’ থাকার স্বপ্ন ভেঙে আতালান্তার ইতিহাস গড়ার নায়ক আদেমোলা লোকমান। ম্যাচজুড়ে একক নৈপুণ্যের দুর্দান্ত প্রদর্শনীতে হ্যাটট্রিক করেছেন আতালান্তার এই নাইজেরিয়ান উইঙ্গার।
লেভারকুসেনকে মৌসুমের প্রথম হার উপহার দেওয়া ম্যাচটি ৬১ বছর পর শিরোপা স্বাদ এনে দিয়েছে আতালান্তাকে। যেটি ক্লাবটির প্রথম ইউরোপিয়ান শিরোপাও বটে। পাশাপাশি আতালান্তার দুর্দান্ত এ জয় জানিয়ে দিল যে লেভারকুসেনও হারতে জানে। নয়তো হারের স্বাদ কেমন সেটা তো ভুলেই গিয়েছিল চলতি মৌসুমে একের পর এক রেকর্ড ভাঙা ক্লাবটি।
আজ ম্যাচের ২৬ মিনিটের মধ্যেই ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে লেভারকুসেন। তখনও অবশ্য ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন হারায়নি ক্লাবটি। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এর আগে ৪ ম্যাচে দুই গোলে পিছিয়ে থেকে ম্যাচ বাঁচিয়েছিল লেভারকুসেন। যার একটিতে জয় এবং অন্য ৩ ম্যাচে ড্র করেছে তারা। এবারও সমর্থকদের আশা ছিল তেমন কিছুর। কিন্তু দিনটি ছিল কেবলই আতালান্তার, আরও বিশেষভাবে বললে লোকমানের। যা শেষ পর্যন্ত আর ম্যাচে ফিরতে দেয়নি এ মৌসুমে আলোনসোর ইতিহাস গড়া দলটিকে।
ডাবলিনের ফাইনালে এদিন ভিক্টর বোনিফেস ও প্যাট্রিক শিকের মতো তারকাদের বেঞ্চে রেখে একাদশ সাজান আলোনসো। দুই সেরা তারকাকে বাইরে রাখলেও কৌশলে কোনো পরিবর্তন আনেননি লেভারকুসেন কোচ।
ম্যাচের শুরু থেকে লেভারকুসেন স্বভাবসুলভ পজেশন ধরে রাখার চেষ্টা করলেও, আকস্মিক আক্রমণে গিয়ে চমকে দিচ্ছিল আতালান্তা। ইতালিয়ান ক্লাবটি অবশ্য বেশ আক্রমণাত্মক কৌশলে নিজেদের খেলা শুরু করে। প্রথম ১০ মিনিটে যদিও বলার মতো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি কেউই।
আতালান্তা নিজেদের মেলে ধরার পাশাপাশি চেষ্টা করছিল লেভারকুসেনের খেলাও নষ্ট করার। দুর্দান্ত প্রেসিংয়ে লেভারকুসেনের পজেশনভিত্তিক ফুটবলকে কঠিন করে তোলে জিয়ান পিয়েরো গাসপেরিনির শিষ্যরা। পাশাপাশি এ সময় কিছুটা শরীরী ফুটবলও খেলে দলটি। কোচ গাসপেরিনির এ মাস্টারক্লাস কৌশলে শুরু থেকে দারুণ সফল হয়েছে আতালান্তা।
ইতালিয়ান ক্লাবটি প্রেসিং ফুটবলের চূড়ান্ত ফল পায় ম্যাচের ১২ মিনিটে। দারুণ এক আক্রমণ থেকে ডাভিড জাপাকোস্তার পাস থেকে দারুণ ফিনিশিংয়ে আতালান্তাকে এগিয়ে দেন লোকমান।
গোল খেয়ে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখানোর চেষ্টা করে লেভারকুসেন। চেষ্টা করে নিজেদের পাসিংয়ের ছন্দও ফিরে পাওয়ার। দুই একবার কাছাকাছিও পৌঁছে যায় তারা। যদিও মেলেনি গোলের দেখা। অন্য দিকে আতালান্তাও প্রেসিং অব্যাহত রেখে ব্যবধান বাড়ানোর চেষ্টা করে যায়। নিজেদের এ প্রচেষ্টায় সফলও হয় তারা।
২৬ মিনিটে দারুণ প্রেসিংয়ে লেভারকুসেনের বক্সের কাছাকাছি বল আদায় করে নেন লোকমান। এরপর প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে দারুণ শটে নিজের ও দলের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন নাইজেরিয়ান এ উইঙ্গার। দুই গোলে এগিয়ে গিয়েও যেন সন্তুষ্ট ছিল না আতালান্তা। মৌসুমে ৫১ ম্যাচে অপরাজিত থাকা দলটির ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করতে থাকা তারা। ৩৫ মিনিটে দারুণ এক সুযোগ হাতছাড়া করে লেভারকুসেন। প্রথমার্ধের বাকি সময়েও দুই দল চেষ্টা করে গোল আদায়ের। শেষ পর্যন্ত অবশ্য কেউই আর সফল হয়নি। ২-০ গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় আতালান্তা।
বিরতির পর জোসেফ স্টানিসিকের বদলে বোনিফেসকে মাঠে নামান আলোনসো। আতালান্তা অবশ্য প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধেও একই কৌশল ও গতি ধরে খেলা চালিয়ে যায়। শুরুতে কয়েকবার গোলের কাছাকাছিও পৌঁছে যায় তারা। যদিও কাঙ্ক্ষিত গোলটি মেলেনি। বিপরীতে ধীরে ধীরে আক্রমণের ধার বাড়ানোর চেষ্টা করে লেভারকুসেনও।
কিন্তু জার্মান ক্লাবটিকে থিতু হতে দিচ্ছিল না আতালান্তার খেলোয়াড়েরা। এরপর ম্যাচের ৭৫ মিনিটে আরেকটি দারুণ গোলে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করে লেভারকুসেনের ম্যাচে ফেরার পথ বন্ধ করে দেন লোকমান। শেষ দিকে অবশ্য লেভারকুসেন চেষ্টা করেও পায়নি সান্ত্বনাসূচক গোলটি। শেষ পর্যন্ত ট্রেবল জয়ের স্বপ্ন ভাঙার হতাশা নিয়েই মাঠ ছেড়েছে তারা। আর লেভারকুসেনের হতাশার বিপরীতে ইতিহাস গড়ার আনন্দে মেতেছে আতালান্তা।
ট্রেবল জেতার সুযোগ হারালেও এখনো ডাবল জয়ের সুযোগ এখনো আছে লেভারকুসেনের। আগামী রোববার জার্মান কাপের শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে কাইজারস্লাটার্নের বিপক্ষে মাঠে নামবে তারা।