জয়সূচক গোলের পর নিকো সেনসোলিকে অভিনন্দন জানাতে ছুটে আসেন সতীর্থরা
জয়সূচক গোলের পর নিকো সেনসোলিকে অভিনন্দন জানাতে ছুটে আসেন সতীর্থরা

২০ বছর ধরে ১৪০ ম্যাচ জয়হীন থাকার পর জিতল সান মারিনো

এ জয়ের মাহাত্ম্য তাঁদের কাছে কতখানি, তা খেলোয়াড়দের উদ্‌যাপন দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। রেফারি শেষ বাঁশি বাজাতেই মাঠে খেলোয়াড়দের ছোটাছুটি দেখে কে! এরপর যে যাঁকে সামনে পেয়েছেন, তাঁকেই জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

গত রাতে উয়েফা নেশনস লিগে লিখটেনস্টানকে ১-০ গোলে হারিয়ে যে দল এমন বাঁধনহারা উদ্‌যাপনে মেতেছে, সেই দলটির নাম সান মারিনো। বিশ্ব মানচিত্রে ইতালির মাঝখানে অবস্থিত ছোট্ট দেশটি কোনো ম্যাচ জিতেছে ২০ বছর পর, যা প্রতিযোগিতামূলক আসরে তাদের প্রথম জয়ও। সর্বশেষ ২০০৪ সালের ২৮ এপ্রিল এই লিখটেনস্টাইনের বিপক্ষেই জিতেছিল সান মারিনো। সেই ম্যাচেরও ফল ছিল ১-০। তবে সেটি ছিল আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ।

৩৩ হাজার জনসংখ্যা ও ৬১ বর্গকিলোমিটারে দেশ সান মারিনোই বর্তমানে ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ের একদম তলানির দল (২১০)। গত রাতে জয়ের মধ্যে দিয়ে সবচেয়ে বেশি ১৪০ ম্যাচ জয়হীন থাকার বিব্রতকর বিশ্ব রেকর্ড আর বাড়তে দেয়নি তারা।

২০ বছর পর প্রথম জয়ের পর সান মারিনো দলের বাঁধনহারা উচ্ছ্বাস

নিজেদের জাতীয় স্টেডিয়াম সেরাভাল্লেতে কাল ম্যাচের ৫৩ মিনিটে জয়সূচক গোল করেছেন নিকো সেনসোলি। দুই দশক আগে সান মারিনো যখন আগের জয়টি পেয়েছিল, তখন তাঁর জন্মই হয়নি! তরুণ এ মিডফিল্ডার পৃথিবীর আলো দেখেছেন ২০০৫ সালের ১৪ জুন; আগের জয়টির প্রায় ১৪ মাস পর।

বোঝাই যাচ্ছে, সান মারিনোর পুরো একটা প্রজন্মকে দুই দশক ধরে জয়ের অপেক্ষা করতে হয়েছে। এত দিন তারা বড় কোনো প্রতিযোগিতায় মাঠে নামা মানেই হার একরকম অবধারিত ছিল। শুধু দেখার বিষয় ছিল, তারা কয়টি গোল হজম করে। ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে অপেক্ষাকৃত নিচের দিকের দলের বিপক্ষেও ড্র করেছে কালেভদ্রে।

জাতীয় স্টেডিয়াম সেরাভাল্লের দর্শক ধারণক্ষমতা সাড়ে ৬ হাজারের কিছু বেশি হলেও তাই কাল আরেকটি ড্র কিংবা হার ধরে নিয়ে খেলা দেখতে গিয়েছিলেন মাত্র ৯১৪ জন। কারণ, র‍্যাঙ্কিংয়ে সান মারিনোর চেয়ে ১১ ধাপ এগিয়ে থাকা লিখটেনস্টাইনকেই এ ম্যাচে ফেবারিট ভাবা হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত অনেককেই ভুল প্রমাণ করেছেন সেনসোলি। তাঁর সৌজন্যে ঐতিহাসিক জয়ের সাক্ষী হয়েছেন ওই ৯১৪ জন দর্শক।

সান মারিনোর স্মরণীয় জয়ের রাতে ৯০০ গোলের কীর্তি গড়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ফুটবল–বিষয়ক অ্যাপ ফোরথ্রিথ্রি জানিয়েছে, ২০ বছর আগে সান মারিনো যখন লিখটেনস্টাইনকে হারায়, তখন শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলে রোনালদোর গোল ছিল মাত্র ৯টি। দুই দশক পর কাল সান মারিনো যখন আন্তর্জাতিক ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ জয়খরা কাটাল, তখন রোনালদোর ওই ৯-এর পাশে বসেছে আরও দুটি শূন্য।

কালকের রাতটা সান মারিনোর জন্য ছিল স্বপ্নের চেয়েও সুন্দর

২০ বছর আগে যাঁর গোলে সান মারিনো জিতেছিল, সেই অ্যান্ডি সেলভা ক্যারিয়ারে ৮ গোল নিয়ে দেশটির সর্বোচ্চ গোলদাতা। আর রোনালদো ১৩১ গোল নিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবল ইতিহাসেরই সর্বোচ্চ গোলদাতা।

নিজেদের পরবর্তী ম্যাচে আগামী মঙ্গলবার রাতে মলদোভার মুখোমুখি হবে সান মারিনো।