বিনা মেঘে বজ্রপাত বুঝি একেই বলে!
দল ভালো অবস্থানে থাকার পরও ছাঁটাই হয়েছেন বায়ার্ন মিউনিখ কোচ ইউলিয়ান নাগলসমান। চ্যাম্পিয়নস লিগে পিএসজিকে বিদায় করে শেষ আটের টিকিট পায় বায়ার্ন। বুন্দেসলিগার পয়েন্ট তালিকায় ২ নম্বরে থাকলেও শীর্ষে থাকা বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের সঙ্গে বায়ার্নের পার্থক্য শুধুই ১ পয়েন্টের।
দলের এমন অবস্থায় সাধারণত কোচ ছাঁটাই হওয়ার কথা নয়। তাই নাগলসমানের বিদায়ের পর বড় প্রশ্ন, কেন ছাঁটাই হলেন এই কোচ? আর প্রশ্নের জবাবে যে নামটি সবার আগে আসছে, সেটি হচ্ছে লিনা ভুরজেনবার্গার।
বায়ার্ন মিউনিখের দায়িত্ব নেওয়ার পর লিনার সঙ্গে প্রথম পরিচয় নাগলসমানের। জার্মানির বিখ্যাত সংবাদপত্র ‘বিল্ড’র বায়ার্ন মিউনিখ প্রতিনিধি ছিলেন লিনা। কাজের সূত্রেই এ দুজনের পরিচয়, যা পরের রূপ নেয় গভীর প্রেমে। লিনার প্রেমে নাগলসমান এতটাই ডুবে গিয়েছিলেন যে স্ত্রী ভেরেনার সঙ্গে ১৫ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করতে দ্বিধা বোধ করেননি।
কৈশোরে প্রেমে জড়ানোর পর ২০১৮ সালে বিয়ে করেছিলেন নাগলসমান–ভেরেনা। তাঁদের দুটি সন্তানও আছে। কিন্তু দুজনের সম্পর্কে লিনার আগমন সবকিছু উলটপালট করে দেয়। নাগলসমানের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ানোয় বায়ার্ন প্রতিনিধির দায়িত্বও ছাড়তে হয় লিনাকে। কিন্তু এরপরও বিতর্ক থেকে নিজেকে আলাদা রাখতে পারেননি লিনা। শেষ পর্যন্ত তাঁকে ঘিরেই নাকি যত সমস্যার সূত্রপাত।
নাগলসমানকে ছাঁটাইয়ের পর বায়ার্ন যদিও বলছে বিশ্বকাপের পর পাফরম্যান্সের গ্রাফ নিম্নগামী হওয়ার কারণে মূলত তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু ভেতরের সূত্র অন্য খবরই দিচ্ছে। লিনার সঙ্গে নাগলসমানের সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে নাকি অস্বস্তি ছিল বায়ার্নের ড্রেসিংরুমে।
খেলোয়াড়েরা দলের ভেতরকার খবর বাইরে বেরিয়ে আসা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। সাবেক বায়ার্ন মিউনিখ সেন্টার ব্যাক মার্কাস বাবেল বলেছেন, ‘আমি জানি যে বিল্ডের প্রতিবেদকের সঙ্গে নাগলসমানের সম্পর্কে বিষয়টি নিয়ে ড্রেসিং রুমে অনেক কথা হয়েছে। তাঁদের সম্পর্কের বিষয়টিকে ভালোভাবে দেখা হয়নি। বায়ার্নের জন্য তাঁর প্রেমিকা ছিল বড় সমস্যার কারণ। দলের মধ্যে আস্থার অভাব ছিল। অনেক খেলোয়াড় কোচের সঙ্গে ঠিকঠাক যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। কারণ, তাঁরা এই ভয়ে ছিল যে শেষ পর্যন্ত সব কিছু সংবাদপত্রে চলে আসবে।'
এর মধ্যে এই মাসের শুরুতে বায়ার্নের কৌশলগত পরিকল্পনা বিল্ডে প্রকাশিত হওয়ার পর ড্রেসিংরুমে গোপনীয়তা নষ্ট হওয়ার আতঙ্ক তৈরি হয়। লিনার কাছ থেকে এই পরিকল্পনা ফাঁস হয়েছে, এমন প্রমাণ না থাকলেও তাঁর সঙ্গে নাগলসমানের সম্পর্কের কারণে অনেকের মধ্যে সন্দেহ দানা বেঁধেছিল। বিল্ডে প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনে বায়ার্ন কীভাবে কৌশল বদলায়, তা তুলে ধরা হয়েছিল। সব মিলিয়ে দলের মধ্যে তৈরি হওয়া এই অনাস্থাই নাকি নাগলসমানের ছাঁটাই হওয়ার কারণ।
এদিকে নাগলসমানের ছাঁটাইয়ের পর প্রেমিকা লিনাও নাকি চাকরি ছাড়ার আবেদন করেছেন, যেটি গ্রহণ করেছে বিল্ড। এক বিবৃতি সংবাদপত্রটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘আমরা তার চলে যাওয়ার অনুরোধ মেনে নিয়েছি। ভবিষ্যতে সে যেন সফল হয়, সে জন্য শুভকামনা জানাচ্ছি।’