‘ওয়ান ব্রিংগস অ্যানাদার’ বলে ইংরেজিতে একটা কথা প্রচলিত আছে। রাফিনিয়ার আজকের পারফরম্যান্সকে সেই কথাটির সঙ্গে মেলানো যেতেই পারে।
এ ম্যাচের আগে চ্যাম্পিয়নস লিগে কোনো গোল ছিল না রাফিনিয়ার। ব্রাজিলের ২৭ বছর বয়সী উইঙ্গার ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের শীর্ষ এ প্রতিযোগিতায় আজ শুধু গোলবন্ধ্যাত্ব কাটালেন না, পেয়ে গেলেন নিজের দ্বিতীয় গোলও। তাঁর ঝলকের রাতে বদলি আন্দ্রেয়াস ক্রিস্টেনসেন বলে প্রথম স্পর্শেই করলেন আরেক গোল। তাতে পিছিয়ে পড়েও পিএসজিকে স্তব্ধ করে দিল বার্সেলোনা। প্যারিসের পার্ক দে প্রিন্সেসে জাভি হার্নান্দেজের দল পাঁচ গোলের থ্রিলার জিতল ৩–২ ব্যবধানে।
আগামী মঙ্গলবার কোয়ার্টার ফাইনালের ফিরতি লেগ হবে বার্সেলোনার মাঠ এস্তাদি অলিম্পিকে। প্যারিস থেকে জয় নিয়ে ফিরতে চলায় সেই ম্যাচে বেশ আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থাকবে জাভির জয়, তা অনুমান করাই যায়।
পিএসজির মাঠে এটি বার্সার ৯ বছর পর প্রথম জয়। সর্বশেষ জয়টি এসেছিল ২০১৫ সালে এই এপ্রিল মাসেই। সেটিও ছিল কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে। মেসি–নেইমার–সুয়ারেজদের বার্সা ম্যাচটি জিতেছিল ৩–১ ব্যবধানে। সে সময় কাতালান ক্লাবটির দায়িত্বে ছিলেন পিএসজিরই বর্তমান কোচ লুইস এনরিকে।
চেনা মঞ্চে নিজেদের দর্শকদের সমর্থন পাওয়া পিএসজি শুরু থেকে চেপে ধরে ধরেছিল বার্সাকে। কাং লি ইন ও মার্কো আসেনসিও গোলের সুযোগও সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু বার্সা গোলকিপার মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেন তাঁদের প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দেন।
তবে দ্রুতই ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে ওঠার পর গোছানো ফুটবল খেলতে শুরু করে বার্সা। রবার্ট লেভানডফস্কি তো অতিথিদের প্রায় এগিয়েই দিয়েছিলেন। নুনো মেন্দেস গোললাইনের কাছাকাছি জায়গা থেকে বল ক্লিয়ার করলে সে যাত্রায় বেঁচে যায় পিএসজি।
তবে বার্সাকে বেশিক্ষণ আটকে রাখা যায়নি। ৩৭ মিনিটে রাফিনিয়ার গোলে এগিয়ে যায় কাতালান ক্লাবটি। নিজেদের বক্সে ব্যস্ত সময় পার করতে থাকা পিএসজি গোলকিপার দোন্নারুমা লামিনে ইয়ামালের ক্রস রুখে দিলে বল পেয়ে বাঁ পাশে অরক্ষিত থাকা রাফিনিয়া। সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে কোনো ভুল করেননি তিনি।
পিছিয়ে পড়া পিএসজি দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া হয়ে ওঠে। কোচ এনরিকে প্রথম কৌশলগত পরিবর্তন আনেন বিরতির পরপরই। আসেনসিওকে তুলে নিয়ে নামান ব্র্যাডলি বারকোলাকে। এনরিকের চালটা লেগেও যায়। বারকোলা নামতেই আক্রমণভাগের গতি বাড়ে পিএসজির। সেটার ফল পায় হাতেনাতেই। ৪৮ মিনিটে জোরাল শটে দারুণ এক গোলে ম্যাচে সমতা আনেন উসমান দেম্বেলে। সাধারণত নিজের সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে গোল পেলে উদ্যাপন করতে দেখা যায় না। তবে বার্সা ছেড়ে এ মৌসুমেই পিএসজিতে যোগ দেওয়া দেম্বেলে উদ্যাপন করতে একটুও কার্পণ্য করেননি।
দেম্বেলের গোলের মিনিট দুয়েক পরেই এগিয়ে যায় পিএসজি। ফাবিয়ান রুইজের পাস থেকে বল পেয়ে ব্যবধান ২–১ করেন ভিতিনিয়া। কিলিয়ান এমবাপ্পেকে আজ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ‘বোতলবন্দী’ করে রেখেছিলেন বার্সার ডিফেন্ডাররা। তবে দেম্বেলে–ভিতিনিয়াদের সুবাদে এগিয়ে যাওয়ায় জয়ের ব্যাপারে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিল পিএসজি।
কিন্তু বার্সা বোধহয় আজ ঘুরে দাঁড়ানোর পণ করেই মাঠে নেমেছিল। আর এই ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পে জাভির ট্রাম্পকার্ড হয়ে উঠেছেন পেদ্রি ও ক্রিস্টেসেন। ৬১ মিনিটে অধিনায়ক সের্হি রবের্তোর বদলি নামেন পেদ্রি। পরের মিনিটে তাঁর পাস থেকেই নিজের দ্বিতীয় গোল করে সমতা ফেরান রাফিনিয়া।
আরেক বদলি ক্রিস্টেনসেনের ম্যাচের ব্যবধান গড়ে দেওয়া গোলটা তিনি মাঠে নামার ৭১ সেকেন্ড পরেই, সেটাও বলে তাঁর প্রথম স্পর্শেই! ম্যাচের ৭৭ মিনিটে ইলকাই গুন্দোয়ানের নেওয়া নিখুঁত এক কর্নার কিক থেকে মাথা ছুঁয়ে বার্সাকে এগিয়ে দেন ক্রিস্টেনসেন।
এমন পরিস্থিতি থেকে অতীতে বেশ কয়েকবার পিএসজিকে টেনে তুলেছেন আশরাফ হাকিমি। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগের এ মৌসুমে পাঁচটি হলুদ কার্ড দেখায় এ ম্যাচে নিষিদ্ধ ছিলেন হাকিমি। তাঁর জায়গায় নেমেছিলেন রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে বিশ্রামে থাকা দলের অধিনায়ক মার্কিনিওস। কিন্তু ব্রাজিলিয়ান এই ডিফেন্ডার ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেননি। বরং সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হাকিমির অভাব আরও বেশি টের পেয়েছে পিএসজি। বাকিটা সময় অনেক চেষ্টা করলেও বার্সার রক্ষণভাগের দৃঢ়তায় হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় প্যারিসিয়ানদের।