একে তো ঠাসা সূচিতে দম ফেলার সুযোগ নেই, তার ওপর টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন দলের প্রাইজমানি (অর্থ পুরস্কার) মোহাম্মদ সালাহর এক সপ্তাহের বেতনের অর্ধেকেরও কম! ইংলিশ লিগ কাপের (কারাবাও কাপ নামেও পরিচিত) সফলতম দল হয়েও তাই বরাবরই প্রতিযোগিতাটিকে গুরুত্বহীন বলে এসেছেন লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ।
তবে এ মৌসুমে লিগ কাপ নিয়ে ক্লপের দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। কদিন আগে জানিয়েছিলেন, এবারের মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, উয়েফা ইউরোপা লিগ, এফএ কাপের মতো লিগ কাপের শিরোপা জিততেও আটঘাট বেঁধে নামবে তাঁর দল।
কাল রাতে ক্লপের অবিচল লক্ষ্যে বিশাল এক ধাক্কা লাগতে যাচ্ছিল। ঘরের মাঠ অ্যানফিল্ডে ফুলহামের বিপক্ষে লিগ কাপ সেমিফাইনালের প্রথম লেগের ৬৭ মিনিট পর্যন্তও যে পিছিয়ে ছিল লিভারপুল! শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলে জিতেছে ক্লপের দল।
লিভারপুল আসল খেলাটা দেখিয়েছে এরপরেই। ৪ মিনিটের ব্যবধানে কার্টিস জোন্স ও কোডি গাকপোর গোলে এগিয়ে যায় লিভারপুল। শেষ পর্যন্ত এ ব্যবধান ধরে রেখে ফাইনালে এক পা দিয়ে রেখেছে। ২৪ জানুয়ারি ফুলহামের মাঠে ফিরতি লেগে হার এড়াতে পারলেই দশম লিগ কাপ শিরোপার পথে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে লিভারপুল।
আফ্রিকান কাপ অব নেশনসে খেলতে জাতীয় দল মিসরের ক্যাম্পে যোগ দিয়েছেন সালাহ। তাঁর অভাব কাল ভালোই টের পাচ্ছিল লিভারপুল। সালাহর অভাব যাঁকে দিয়ে পূরণ করবেন ক্লপ, সেই দারউইন নুনিয়েজও ছন্দহীনতায় ভুগছিলেন। তবে কাল বদলি নুনিয়েজই লিভারপুলের ত্রাতা হয়ে উঠেছেন। অলরেডদের দুটি গোলেই বলের জোগান দিয়েছেন এই উরুগুইয়ান ফরোয়ার্ড। লিভারপুলকে এগিয়ে দেওয়া গাকপোও নুনিয়েজের সঙ্গে বদলি নেমেছিলেন।
চোট ও জাতীয় দলে যোগ দেওয়া মিলিয়ে স্কোয়াডে ৯ খেলোয়াড় কম নিয়ে খেলতে হচ্ছে লিভারপুলকে। কিন্তু বদলি খেলোয়াড়েরা একের পর এক গোল করে ও করিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন বেঞ্চের শক্তিতেও কোনো অংশে কম নয় লিভারপুল। প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর মধ্যে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এ মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোলে অবদান লিভারপুলের বদলি খেলোয়াড়দের। কাল গাকপোর গোল আর নুনিয়েজের জোড়া অ্যাসিস্টের পর সেটা বেড়ে হয়েছে ৩০ গোল, এ তালিকায় দ্বিতীয় দলের চেয়ে যা ১২ গোল বেশি!
ছন্দে না থাকায় নুনিয়েজকে বেশ কয়েকটি ম্যাচে বসিয়ে রেখেছিলেন ক্লপ। সেই নুনিয়েজই বেঞ্চ থেকে উঠে এসে ৭ গোলে অবদান রেখেছেন (৩টি গোল নিজে করেছেন, ৪টি সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন)। এবারের মৌসুমে যা প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবে খেলা ফুটবলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। কালকের জয়ে লিভারপুলের রেকর্ডে আরেকটি ‘লাকি নম্বার সেভেন’ যুক্ত হয়েছে। ২০২৩-২৪ মৌসুমে এ নিয়ে পিছিয়ে পড়েও ৭ ম্যাচ জিতল অলরেডরা, যা ইংল্যান্ডের শীর্ষ চার স্তরে (প্রিমিয়ার লিগ, চ্যাম্পিয়নশিপ, লিগ ওয়ান, লিগ টু) খেলা ৯২ দলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি!
কাল আরেকটি ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প লেখার পর সংবাদ সম্মেলনে ক্লপ বলেছেন, ‘ছেলেরা গোল করুক বা না করুক, শুরুর একাদশে থাকুক বা না থাকুক, ওদের ওপর আমার অফুরন্ত বিশ্বাস আছে। ওরা যেভাবে খেলেছে, জয়টা প্রাপ্যই ছিল।’
নুনিয়েজকে আলাদা করে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন ক্লপ, ‘ওর জন্য প্রথম বছরটা ছিল মানিয়ে নেওয়ার। অনিয়মিতভাবে হলেও গোল পেয়েছে। তবে এখন সে সব ম্যাচেই অবদান রাখছে। বলতেই হবে, সে অসাধারণ খেলছে। ওর খেলার মধ্যে এমন অনেক কিছু আছে, যা আমি পছন্দ করি।’
ফুলহামের বিপক্ষে গত রাতের ম্যাচ দিয়ে ১০ দিনের বিরতিতে গেছে লিভারপুল। কাল সংবাদ সম্মেলনে তাঁর কাছে সাংবাদিকদের শেষ প্রশ্ন ছিল শীতকালীন বিরতি নিয়েই। টানা খেলার মধ্যে থাকায় এই বিরতির জন্য কতটা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন, সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে উত্তরটা রসিকতা করেই দিয়েছেন, ‘আমার ইংরেজি এটা বোঝানোর জন্য যথেষ্ট নয় (হাসি)।’