ফাইনাল শেষে শামসুন্নাহার, রুপনা চাকমারা যখন ট্রফি জয় উদ্যাপন করছিলেন, তখন নীরবেই মাঠ ছেড়ে যান গোলকিপার কোচ মাসুদ আহমেদ। অথচ গতকাল সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে কমলাপুর স্টেডিয়ামের ডাগআউটে সারাক্ষণ তিনি প্রধান কোচ গোলাম রব্বানীর পাশেই ছিলেন!
মেয়েদের জাতীয় দল থেকে শুরু করে বয়সভিত্তিক সব দলের গোলকিপার কোচ মাসুদ। বাফুফের বেতনভুক্ত কোচদেরও একজন। বাফুফের পুরুষ দলের গোলকিপার কোচ বিপ্লব ভট্টাচার্য চাকরি ছেড়ে দেওয়ায় বয়সভিত্তিক পুরুষ দলগুলোর দায়িত্বেও আছেন মাসুদ। রুপনা চাকমার কাছ থেকে একের পর এক টুর্নামেন্টে সেরাটা বের করে আনার কৃতিত্বও তাঁর। কিন্তু স্বীকৃতির প্রশ্নে রইলেন উপেক্ষিত।
বাংলাদেশ দল যখন শিরোপা উৎসব করেছে মঞ্চে, তখন একরকম অপমানই হতে হয় তাঁকে। বাফুফে কর্মকর্তাদের মঞ্চে ওঠার সুযোগ করে দিতেই কেটে দেওয়া হয় মাসুদের নাম।
এবারের বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ নারী দলটির কর্মকর্তাদের তালিকা বেশ লম্বা। ২৩ সদস্যের ফুটবলারদের সঙ্গে কোচ ও কর্মকর্তা মিলিয়ে ১৪ জন। দলের টিম লিডারও দুজন। পুরস্কার বিতরণীর সময় দেখা গেল, পদক তালিকায় উঠে গেছে টিম লিডার জাকির হোসেন চৌধুরী ও দুই সহকারী ম্যানেজার টিপু সুলতান এবং নুরুল হোসেনের নাম। অথচ মাসুদের নামটা রাখা হয়নি! লজ্জায়-অপমানে মাঠ ছেড়ে গেলেও পরে ফুটবলারদের অনুরোধে ফিরেছেন পুরস্কার বিরতণী শেষ হওয়ার পর।
মাসুদ ভাবতে পারেননি এমন আনন্দের রাতেও এভাবে অপমানিত হবেন, ‘এত দিন রুপনাকে কঠোর অনুশীলন করিয়েছি। আমার স্ত্রী অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে থেকেছে। তাকে সময় না দিয়ে এদের পেছনে সময় দিয়েছি। এমন আনন্দের রাতে কোচ হিসেবে ওর সঙ্গে পুরস্কারের মঞ্চে উঠতে পারিনি। এতে কষ্ট পেয়েছি।’
তবে রুপনা ঠিকই খেলা শেষে ছুটে যান কোচের কাছে। সবার আগে ট্রফিসহ ছবি তোলেন কোচের সঙ্গে।
পদকমঞ্চে গোলকিপার কোচ থাকতে পারবেন না, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না সাফের পক্ষ থেকে। কিন্তু তারপরও কেন গোলকিপার কোচকে মঞ্চে ডাকা হয়নি, তা নিয়ে বিস্মিত সাফের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক, ‘সাধারণত আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, দলের প্রধান কোচ ও ম্যানেজারের নাম যেন অবশ্যই পদক তালিকায় থাকে। এর বাইরে কারও নাম চাইলে সেই দেশ রাখতে পারে, আবার তালিকা থেকে বাদও দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে আমাদের দিক থেকে কোনো বাধ্যবাধকতা থাকে না। যেহেতু সে কোচিং স্টাফের সদস্য, তাঁর নাম কেন তালিকায় রাখা হলো না, সেটা আমিও বুঝতে পারছি না।’
গোলরক্ষক রুপনাকে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা তৈরি করার পেছনে বড় অবদান কোচ মাসুদের। রুপনার গোলকিপিংয়ে এক ধরনের কৌশলগত ঘাটতি ছিল। ডিফেন্ডারদের ওপর আস্থা রাখতে পারতেন না। হুটহাট করেই জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে আসতেন। আর এমন অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে ভুগতে হতো বাংলাদেশ দলকে।
সেই রুপনাই বদলে যান গত সেপ্টেম্বরে নেপালে অনুষ্ঠিত মেয়েদের সাফে। পুরো টুর্নামেন্টে মাত্র একটি গোল হজম করেন তিনি। যার স্বীকৃতি হিসেবে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো জেতেন সাফে সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার। এবার ঢাকাতেও জিতেছেন সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার।
কাল ফাইনাল শেষে রুপনার মুখে ছিল কোচের প্রতি কৃতজ্ঞতা, ‘সাফে যখন আমি সেরা হই, এরপর আগের নিয়মেই উজ্জ্বল স্যার (গোলকিপিং কোচ মাসুদ আহমেদ) আমাকে অনুশীলন করিয়েছেন, এ জন্যই আবারও সেরা হয়েছি। স্যার বলেছেন, “তোমার সামনে দ্বিতীয়বার সেরা হওয়ার সুযোগ আছে। সুযোগটি কাজে লাগাতে হবে।” স্যারের আস্থার প্রতিদান দিতে পেরে আমি খুশি।’