৮১৫।
অন্তত গোলের হিসেবে এই সংখ্যার মধ্যেই লিওনেল মেসির ক্যারিয়ারের সব অর্জন। আবার এটাও ঠিক, ইন্টার মায়ামিতে মেসির পারফরম্যান্সও বুঝিয়ে দেওয়া যায় এই সংখ্যাতেই। কীভাবে? ভালো করে সংখ্যাটা দেখুন। মায়ামিতে মেসি এখন পর্যন্ত ৫ ম্যাচ খেলে গোল করেছেন ৮টি, সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন আরও ১ গোল। মায়ামিতে মেসির পারফরম্যান্সকে যদি এভাবে পাশাপাশি বসাই, গোল, অ্যাসিস্ট (গোল করানো) ও ম্যাচ, তাহলেই ওই সংখ্যাটা চলে আসে—৮১৫! ওহ, একটা বলাই হয়নি। এই ‘৮১৫’ আবার মেসির ক্যারিয়ারের মোট গোলসংখ্যা।
মেসির গোলের প্রসঙ্গ উঠলে অবধারিতভাবেই উঠে আসে আরেকটি নাম—ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। গোলের প্রতিযোগিতায় বর্তমান খেলোয়াড়দের কেউ এই দুজনের ধারে-কাছেও নেই।
ফুটবল ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতার দৌড়টা দুই কিংবদন্তি মেসি–রোনালদোর মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাঁদের কাছাকাছি থাকা পেলে, রোমারিও, জোসেফ বাইকানরা এখন অতীত। বর্তমান ফুটবলারদের মধ্যে পেশাদার ফুটবলে গোলসংখ্যায় মেসি ও রোনালদোর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শুধু রবার্ট লেভানডফস্কি। অবশ্য লেভাকে তাঁদের ‘নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী’ বলাটা কারও কারও বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে।
৬০০ গোল করা লেভা মেসির সঙ্গে ২১৫ গোল ও রোনালদোর সঙ্গে ২৪২ ব্যবধানে পিছিয়ে। নাহ, ‘নিকটতম’ বলাটা আসলেই বাড়াবাড়ি হয়ে যায়।
আপাতত ফুটবলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটা রোনালদোর। প্রীতি ম্যাচ বাদে পেশাদার ফুটবলে গতকাল রাতের ম্যাচটির আগ পর্যন্ত ১১৭৩ ম্যাচে ৮৪২ গোল করেছেন রোনালদো। প্রতি ১১৩ মিনিটে একটি করে গোল করেছেন সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসরের এই পর্তুগিজ কিংবদন্তি।
মেসি ১০৩৩ ম্যাচে ৮১৫ গোল করার পথে প্রতি ১০৪ মিনিটে একটি করে গোল করেছেন। গোলের এই দৌড়ে রোনালদোর চেয়ে মেসি এখনো ২৭ গোলে পিছিয়ে। ব্যবধানটা বেশ বড় মনে হলেও মেসির বর্তমান ফর্ম দেখে উল্টোটাও মনে হতে পারে কারও কারও। রোনালদোকে ধরতে আর বুঝি বেশি দেরি নেই!
রোনালদোও বেশ ভালো ফর্মে আছেন। আল নাসরের হয়ে সর্বশেষ ৪ ম্যাচে ৪ গোল করেছেন ৩৮ বছর বয়সী রোনালদো। মেসির বয়স যেহেতু ৩৬ বছর, তাই সাধারণভাবে বিষয়টি আন্দাজ করে নেওয়াই যায়—খেলার জন্য পর্তুগিজ তারকার চেয়ে বেশি সময় পাবেন মেসি। সে হিসেবে গোলের এই ব্যবধান একটি ঘুচে যাওয়াই স্বাভাবিক। আর মেসি এই বয়সেও ইন্টার মায়ামির হয়ে যেভাবে পারফর্ম করে চলছেন, তাতে ধারণাটা আরও শক্ত হয়।
ইন্টার মায়ামিতে অভিষেকের দিন থেকে আর্জেন্টাইন তারকা যেন গোলের মালা গেঁথে চলছেন! ৫ ম্যাচের মধ্যে প্রথম ও পঞ্চম ম্যাচে করেছেন ১টি করে গোল। মাঝে ৩ ম্যাচেই করেছেন জোড়া গোল। লিগস কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে শার্লট এফসির বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয়ে পেনাল্টিও পেয়েছিল মায়ামি। মেসি পেনাল্টি নেননি। এ নিয়ে মোট দুটি পেনাল্টি সতীর্থদের ছেড়ে দিলেন। সেটি না করলে কে জানে, রোনালদোর সঙ্গে তাঁর গোলের ব্যবধান আরও কমতে পারত।
মেসি-রোনালদোর পারফরম্যান্সের বিভিন্ন পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে ‘মেসিভিএসরোনালদো.অ্যাপ’। টুইটারে তারা জানিয়েছে, মেসি মাঠে থাকা অবস্থায় এ নিয়ে ৪৮তম বার তাঁর কোনো সতীর্থ পেনাল্টি শট নিলেন। এর মধ্যে ৩৫ বার গোল হয়েছে, ১৩ বার মিস করেছেন সতীর্থরা। পেনাল্টিগুলো মেসি নিলে রোনালদোর সঙ্গে তাঁর গোলের ব্যবধান অবশ্যই আরও কমে আসত। আর হ্যাঁ, এই যে মেসির সতীর্থরা পেনাল্টি নিয়েছেন, এর মধ্যে ৭ বার ম্যাচে ২ গোল করেছিলেন মেসি। অর্থাৎ ওই সাতবার পেনাল্টি নিলে তাঁর হ্যাটট্রিকসংখ্যাও বাড়ত। আপাতত মেসির হ্যাটট্রিক ৫৭টি, রোনালদোর ৬২।
যা হয়নি তা নিয়ে আর কথা বলে লাভ নেই। যা হতে পারে সেসব নিয়ে বরং কথা হোক। চাইলে মেসির ক্লাব ফুটবলের গোলসংখ্যায় একবার তাকানো যায়। ক্লাব ক্যারিয়ারে এ পর্যন্ত তাঁর গোলসংখ্যা ৭১২ (৮৫৮ ম্যাচ)।
বার্সেলোনার হয়ে ৬৭২ গোল করেছেন, পিএসজিতে ৩২ আর মায়ামির হয়ে এ পর্যন্ত ৮ গোল। ক্লাব ক্যারিয়ারে গোলসংখ্যায় রোনালদোকে পেছনে ফেলতে মেসির চাই আরও ৮ গোল। ৯৭৩ ম্যাচে ৭১৯ গোল করেছেন রোনালদো। গোলসংখ্যা বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ তাঁরও আছে।