লা লিগার নতুন মৌসুম শুরু হচ্ছে আজ। আগামীকাল রায়ো ভায়োকানোর বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে নতুন মৌসুম শুরু করবে বার্সেলোনা। প্রশ্ন উঠেছিল, নতুন মৌসুম শুরুর আগে নতুন খেলোয়াড়দের লিগে নিবন্ধিত করাতে পারবে তো বার্সা? তার উত্তর খোঁজার পথে চতুর্থ ইকোনমিক লেভার চালু করে আশার আলো পেয়েছে কাতালান ক্লাবটি। স্প্যানিশ সময় আজ সকালে এই লেভার চালু করে অরফিউস মিডিয়ার কাছে নিজেদের স্টুডিওর ২৪.৫ শতাংশ বিক্রি করেছে বার্সা। এখান থেকে আসবে ১০ কোটি ইউরো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অন্যান্য মাধ্যমের জন্য কনটেন্ট তৈরি, বিশ্বজুড়ে সমর্থকদের জন্য উপহার ও স্মারক তৈরি ও বিক্রির কাজটা করে বার্সা স্টুডিও।
‘ইকোনমিক লেভার’ ব্যাপারটা কী, সেটা আগে জেনে নেওয়া যাক। হুয়ান লাপোর্তা আবার বার্সেলোনার সভাপতি হয়ে ফেরার পর এই শব্দ যুগল অনেকবার শোনা গেছে তাঁর মুখে। এটা একটা পদ্ধতি, যার মাধ্যমে ক্লাবের বিভিন্ন স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির আংশিক বা পুরোটা বিক্রি করে ত্বরিত নগদ অর্থ জোগার করা হয় দেনা শোধ করা ও অন্যান্য দায় মেটোনোর জন্য। এই মৌসুমে বার্সেলোনা যাবতীয় দেনা মেটানোর জন্য বেশ কয়েক দফায় এই ইকোনমিক লেভার পদ্ধতি বেছে নিয়েছে।
লিগের নতুন মৌসুমে এখনো সাত খেলোয়াড়কে নিবন্ধিত করতে পারেনি বার্সা। ইএসপিএন জানিয়েছে, চতুর্থ ও শেষ ইকোনমিক লেভার চালুর পর বার্সা এখন খেলোয়াড়দের নিবন্ধিত করানোর আশা করছে। লা লিগা কর্তৃপক্ষের কাছে ইকোনমিক লেভার চালুর কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে বার্সার পক্ষ থেকে। স্পেনের শীর্ষ লিগটির কর্তৃপক্ষ এখন এসব কাগজ ও হিসাব যাচাই করে দেখবে। রাফিনহা, রবার্ট লেভানডফস্কি, আন্দ্রেয়াস ক্রিস্টেনসেন, ফ্রাঙ্ক কেসি ও জুলস কুন্দেকে নতুন মৌসুমের জন্য কিনেছে ক্লাবটি। তাঁদের বাইরেও আছেন নতুন করে সই করানো কিন্তু অনিবন্ধিত ওসমান দেম্বেলে ও সের্হি রবার্তো। এই সাত খেলোয়াড়কে নিবন্ধিত করা যাবে কি না, সেটাই এখন খতিয়ে দেখবে লা লিগা কর্তৃপক্ষ।
তবে রায়ো ভায়েকানোরর মুখোমুখি হওয়ার আগেই সবাইকে নিবন্ধিত করাতে আরও একটা পদক্ষেপ নিতে হতে পারে বার্সাকে। খেলোয়াড়দের বেতন কিছুটা কমানোর দরকার হতে পারে। বর্ষীয়ান ডিফেন্ডার জেরার্দ পিকের সঙ্গে এ নিয়ে কথা চলছে বার্সার। পিকের বেতন কমাতে রাজি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
এর আগে বার্সা স্টুডিওর ২৪.৫ শতাংশ সোসিওস ডটকমের কাছে বিক্রি করেছে ক্লাবটি। এ ছাড়া সিক্সথ স্ট্রিটের কাছে ঘরোয়া টিভি স্বত্বের ২৫ শতাংশ ২৫ বছরের জন্য বিক্রি করে—এ দুই আলাদা চুক্তির মূল্য ৫০ কোটি ইউরোর বেশি। আরেকটি প্রতিষ্ঠান জিডিএ লুমার কাছে স্টুডিওর আরও ২৪.৫ শতাংশ বিক্রির বিষয়ে কথা হচ্ছিল এত দিন ধরে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আলোচনা থেমে যাওয়ার পর অরফিউস মিডিয়ার কাছে স্বত্ব বিক্রি করেছে বার্সা। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক কাতালান ব্যবসায়ী জউমে রোউরেস। লাপোর্তার বার্সা সভাপতি হওয়ায় সরাসরি সমর্থন ছিল তাঁর।
লেভানডফস্কি, রাফিনহা, জুলস কুন্দে, ফ্রাঙ্ক কেসি ও ক্রিস্টেনসেনকে কিনতে ১৫ কোটি ইউরোর বেশি খরচ করেছে বার্সা। তাঁদের নিবন্ধিত না হওয়ার দৃশ্যপট গত মৌসুমের সঙ্গে মিলে যায়। এরিক গার্সিয়া ও মেম্ফিস ডিপাইকে গত মৌসুমে কেনার পর মৌসুম শুরুর একদম শেষ মুহূর্তে নিবন্ধিত করাতে পেরেছিল বার্সা, সেটাও পিকে বেতন কমাতে রাজি হওয়ার পর। এবারও পরিস্থিতি অভিন্ন।
লা লিগার বেঁধে দেওয়া খরচের সীমার মধ্যে অবশ্যই থাকতে হবে বার্সাকে। গত মৌসুম শেষে এই খরচ সীমা ছিল মাইনাস ১৪ কোটি ৪০ লাখ ইউরো। স্প্যানিশ ফুটবলে এটাই একমাত্র নেতিবাচক খরচ সীমার নজির। কিন্তু নিজেদের সম্পদ বিক্রি করে এই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর পথে আছে বার্সা। চতুর্থ ইকোনমিক লেভার চালুর আজ স্থানীয় সময় সকালেই খেলোয়াড়দের কাগজপত্র লা লিগা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম স্পোর্ত এর আগে জানিয়েছে, লা লিগার নতুন মৌসুমের জন্য মাত্র ১৭ জন খেলোয়াড় নিবন্ধিত রয়েছে বার্সার। চতুর্থ ইকোনমিক লেভার চালু করলেও নতুন আসা সবাইকে নিবন্ধিত করতে পারবে না ক্লাবটি। সমস্যা হলো, একাদশের ১১ জন এবং বদলি আরও ৫ জন মিলিয়ে মোট ১৬ খেলোয়াড় তো ম্যাচে লাগবেই। চাইলেই তো আর একই পজিশনের দুজনকে মাঠে নামানো যায় না—নতুন খেলোয়াড়দের নিবন্ধিত করাতে না পারলে এ নিয়ে জটিলতায় পড়তে হবে বার্সা কোচ জাভি হার্নান্দেজকে।
বার্সার পক্ষ থেকে জাভিকে বলা হয়েছিল, নতুন খেলোয়াড়দের অনুশীলনে নিয়ে লা লিগার নতুন মৌসুমের জন্য তৈরি করে রাখতে। জাভি সে কাজটা করলেও রায়ো ভায়োকানোর বিপক্ষে ম্যাচের আগে সবার নিবন্ধন না হলে তাঁকে সম্ভবত ‘প্ল্যান বি’র পথে হাঁটতে হবে। বার্সা থেকে বিদায়ের পথে থাকা মেম্ফিস ডিপাই, পিয়েরে এমেরিক অবামেয়াংদের অন্তত রায়োর বিপক্ষে ম্যাচের জন্য ফিরিয়ে আনা হতে পারে। রক্ষণে দেখা যেতে পারে জেরার্দ পিকেকেও। বার্সা সব নতুন খেলোয়াড়কে সই করাতে পারবে যদি চতুর্থ ইকোনমিক লেভার চালুর সঙ্গে খেলোয়াড়দের বেতনের অঙ্ক কমায়।
লা লিগায় বার্সার যে ১৭ খেলোয়াড়কে নিবন্ধিত করা আছে, তাঁদের মধ্যে তিনজনের আবার জার্সি নম্বর নেই—নিকো গঞ্জালেস, স্যামুয়েল উমতিতি ও মার্টিন ব্রাথওয়েট। নিকোকে আগেই ভ্যালেন্সিয়ায় ধারে পাঠিয়েছে বার্সা। উমতিতি ও ব্রাথওয়েটকে মৌসুম নিয়ে নিজের পরিকল্পনার বাইরে রেখেছেন জাভি। দলবদলের মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই উমতিতি ও ব্রাথওয়েটের বার্সা ছেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।
নিবন্ধিত মোট ১৭ খেলোয়াড় হলেন টের স্টেগেন (১), সের্হিনো দেস্ত (২), জেরার্দ পিকে (৩), রোনাল্ড আরাউহো (৪), জর্দি আলবা (১৮), এরিক গার্সিয়া (২৪), স্যামুয়েল উমতিতি (জার্সি নম্বর নেই), বুসকেটস (৫), পেদ্রি (৮), পিয়ানিচ (১৬), ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং (২১), নিকো গঞ্জালেস (জার্সি নম্বর নেই), ফেরান তোরেস (১১), আনসু ফাতি (১০), মেম্ফিস ডিপাই (১৪), অবামেয়াং (১৭) এবং ব্রাথওয়েট (জার্সি নম্বর নেই)। গাভিকে রাখা হয়েছে চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য রিজার্ভ দলে।
সহসভাপতি রাফায়েল ইউয়েস্তে, পরিচালক মাতেও অ্যালেমানিকে নিয়ে বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসেছিলেন বার্সার সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা। তারপর আজ শেষ ইকোনমিক লেভার চালু করে আশার আলো খুঁজে পেল বার্সা।