লিওনেল মেসি-জ্বরে কাঁপছে যুক্তরাষ্ট্র। মেসি ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলে যেন নতুন প্রাণ লেগেছে। মাঠে ও মাঠের বাইরে দুই জায়গাতেই এখন চলছে মেসি-ম্যানিয়া। এমনকি মেসির অটোগ্রাফ নিতে গিয়ে চাকরি হারাতেও লোকে এখন দুবার ভাবছেন না! হ্যাঁ, তেমন ঘটনাই ঘটেছে ইন্টার মায়ামির মাঠ ডিআরভি পিএনকে স্টেডিয়ামে।
ঘটনাটি মূলত লিগস কাপে অরল্যান্ডো সিটির বিপক্ষে মেসিদের ম্যাচের দিন। ক্রিস্টিয়ান সালামাঞ্চা নামের কলম্বিয়ান এক নাগরিক সে সময় স্টেডিয়াম এলাকায় ক্লিনারের কাজ করছিলেন সেখানে। চুক্তি অনুযায়ী, সেদিনই ছিল তাঁর চাকরিতে প্রথম দিন। কিন্তু কে জানত, সেটিই তাঁর শেষ দিনও হতে যাচ্ছে। কিন্তু মাঝের সময়টাতে যা ঘটল, তা হয়তো সালামাঞ্চা কখনোই ভুলতে পারবেন না। তিনি যেখানে কাজ করছিলেন, সেখানে মেসিকে দেখেই আর পেশাদার চরিত্র ধরে রাখতে পারেননি। আবেগে ভেসে গিয়ে ডাক দিয়ে বসেন মেসিকে।
মেসিও তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে এগিয়ে এসে অটোগ্রাফ দিয়েছেন পরনে থাকা আর্জেন্টিনার জার্সিতে। ঘটনাটির বর্ণনা দিতে গিয়ে সালামাঞ্চা বলেছেন, ‘যেখানে বাস পার্ক করে, সেখানে আমাকে বাথরুম পরিষ্কার করতে হয়েছিল। সৌভাগ্যবশত, আমি যখন সেখানে গিয়েছিলাম, তখন বাসটা এসেছিল এবং সব খেলোয়াড় বেরিয়ে আসছিলেন। সবার শেষেই বেরিয়ে আসেন মেসি।’
মেসিকে দেখে নিজেকে আর আটকাতে পারেননি সালামাঞ্চা। ডাক দিয়ে কী বলেছেন, তা জানালেন এভাবে, ‘তাঁকে চিৎকার করে বললাম, “এই যে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন!” শুনে তিনি ফিরে তাকালেন। আমি ওপরের ইউনিফর্মটি ওপরে তুলে ধরি, যার নিচে আর্জেন্টিনার জার্সি ছিল এবং আমার সঙ্গে একটা মার্কারও ছিল। তিনি আমাকে অটোগ্রাফ দিলেন।’
তবে এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া সালামাঞ্চার জন্য মোটেই ভালো ফল বয়ে আনেনি। পরবর্তী সময় কী হয়েছিল, তা জানিয়ে এই কলম্বিয়ান নাগরিক বলেছেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে নিরাপত্তারক্ষীরা সেখানে চলে এলেন। তাঁরা আমাকে বাইরে নিয়ে গেলেন এবং চাকরি থেকে বরখাস্ত করলেন। কিন্তু এর প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান ছিল।’
ইউরোপীয় একাধিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ডিআরভি পিএনকে স্টেডিয়ামে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের সবাইকে বলা হয় পেশাদার আচরণ বজায় রাখতে। ক্লাবের কর্মী হোক কিংবা বাইরের কোনো কোম্পানির নিয়োগ করা কর্মী হোক, সবার জন্য একই নিয়ম প্রযোজ্য। তাঁদের বলা হয়, মাঠে আসা কোনো খেলোয়াড়কে বিরক্ত করা যাবে না। কিন্তু মেসিকে দেখে সেই নিয়ম মানতে পারেননি এই কলম্বিয়ান।
সালামাঞ্চার মেসির কাছ থেকে অটোগ্রাফ নেওয়াটা ইন্টার মায়ামির নিয়ম অনুযায়ী পুরোপুরিভাবেই অপেশাদার আচরণ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধও বটে। তবে সালামাঞ্চা অবশ্য চাকরি বাঁচানোর চেয়ে এ ক্ষেত্রে নিজের আবেগকেই বেশি মূল্য দিয়েছেন। মেসিকে এমন সামনে থেকে পাওয়ার সুযোগ হয়তো আর কখনোই আসত না। যে কারণে চাকরি হারিয়েও খুব একটা মন খারাপ হচ্ছে না তাঁর। এরপরও অনেকে অবশ্য শাস্তির মাত্রা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী, সালামাঞ্চার কাণ্ডটা চাকরি হারানোর মতোই ছিল। সালামাঞ্চার স্ত্রীও একই স্টেডিয়ামে কাজ করেন। পরে তাঁকে স্বামীর চাকরি হারানোর খবরও দেওয়া হয়, যেন সালামাঞ্চার জিনিসপত্রগুলো স্টেডিয়ামের বাইরে নিয়ে আসতে পারেন।
লিগস কাপে সেদিনের ম্যাচে অরল্যান্ডো সিটিকে ৩-১ গোলে হারিয়েছিলেন মেসি। যেখানে জোড়া গোল করেছিলেন বিশ্বকাপজয়ী এই আর্জেন্টাইন তারকা। আগামী সোমবার ভোরে লিগস কাপের শেষ ষোলোর লড়াইয়ে মাঠে নামবেন মেসিরা। টয়োটা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ম্যাচটিতে ইন্টার মায়ামির প্রতিপক্ষ এফসি ডালাস। মেজর লিগ সকারে মেসিকে দেখার জন্য অবশ্য আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে। ২১ আগস্ট শার্লটের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে মেসির লিগযাত্রা।