বিশ্বকাপ হাতে আগুয়েরোর উদ্‌যাপন
বিশ্বকাপ হাতে আগুয়েরোর উদ্‌যাপন

মেসিকে কাঁধে নিয়ে আগুয়েরো বুঝেছেন...

সের্হিও আগুয়েরো সেদিন রবার্তো চেহাস বনে গিয়েছিলেন। শুধু ১৯৮৬ বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখতে মেক্সিকোর আজতেকা স্টেডিয়ামে গিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন ফুটবল ফেডারেশনের কর্মচারী চেহাস। আর্জেন্টিনার জয়ের পর পুলিশের চোখ এড়িয়ে ঢুকে পড়েছিলেন মাঠে। মিশে গিয়েছিলেন খেলোয়াড় এবং অন্যদের উদ্‌যাপনের ভিড়ে। পাশেই ছিলেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। আর্জেন্টাইন ‘ফুটবল–ঈশ্বর’ চাইছিলেন কেউ তাঁকে কাঁধে তুলে নিক।

তারপর দুই হাত ছড়িয়ে উদ্‌যাপন করবেন। ম্যারাডোনার চোখের ভাষা বুঝতে পেরে চেহাস তাঁকে কাঁধে তুলে নেন। এরপর যে ছবিটা তোলা হয়েছিল, সেটি আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসের অংশ হয়ে যায়। সেই ছবিটা, ভিড়ের দঙ্গলে বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরেছেন ম্যারাডোনা। এই তো কদিন আগেই কাতারে চেহাসের ভূমিকা নিতে হয়েছে আগুয়েরোকে।

আগুয়েরো অসুস্থতার জন্য ২০২১ সালের ডিসেম্বরেই ফুটবল থেকে অবসর নেন। কিন্তু কাতার বিশ্বকাপে মেসিদের সঙ্গে তাঁকে দেখা গেছে। হোটেল থেকে ড্রেসিংরুম এমনকি গত ১৮ ডিসেম্বর ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালে আর্জেন্টিনার জয়ের পর লুসাইল স্টেডিয়ামের মাঠেও ছিলেন আগুয়েরো। খেলোয়াড়দের উদ্‌যাপনের অংশ ছিলেন।

তখনই মেসিকে কাঁধে তুলে নেন ম্যানচেস্টার সিটির সাবেক স্ট্রাইকার। আগুয়েরোর কাঁধে চেপে ম্যারাডোনোর সেই উদ্‌যাপনকে ফিরিয়ে এনেছিলেন মেসি। সবাই ম্যারাডোনা ও মেসির এই উদ্‌যাপনই মনে রাখবে। কিন্তু কেউ কি রবার্তো চেহাস কিংবা আগুয়েরোর কাছে জানতে চেয়েছেন, কিংবদন্তিদের কাঁধে তুলতে কী পরিমাণ শারীরিক ধকল গেছে?

মেসি–আগুয়েরোর সেই ঐতিহাসিক ছবি

ফাইনালে ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে হারিয়ে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জেতার পর উদ্‌যাপনের অংশও হয়েছিলেন আগুয়েরো। টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনার জয় নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মাঠে ঢুকে খেলোয়াড়দের সঙ্গে বিশ্বকাপ জয়ের উৎসবে মাতেন ম্যানচেস্টার সিটি ও বার্সেলোনার সাবেক এই তারকা। মেসিকে কাঁধে তুলে নেন তিনি।

তবে মেসিকে কাঁধে চড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আগুয়েরো বুঝতে পারেন কী ভুল করেছেন তিনি। এমনিতেই হৃদ্‌রোগ থেকে সেরে ওঠা, তার ওপর পিঠের ব্যথাটা সব সময়ই পিছু তাড়া করে ফেরে আগুয়েরোকে। মেসিকে কাঁধে চড়িয়েই তিনি বুঝতে পারেন পিঠটা তাঁর গেছে।

বিশ্বকাপ ফাইনালের সেই মুহূর্তের বর্ণনা তিনি দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের একটি টুইটে, ‘আমি বিশ্বের ১ নম্বর খেলোয়াড়তে কাঁধে তোলার সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারি, আমার পিঠ শেষ। মেসির যে এত ওজন, সেটি আমি আগে বুঝতে পারিনি। মেসি আমার কাঁধে চেপে উদ্‌যাপন করছিল, ব্যাপারটা আমার পিঠকে যথেষ্টই ভুগিয়েছে।’

তিনি বলেছেন, ‘একটা পর্যায়ে আমি সহ্য করতে পারছিলাম না মেসির ওজন। তবে আমি ওকে নিয়ে সোজা চলেছি, এদিক-ওদিক হলেই আমাকে হয়তো হাসপাতালে যেতে হতো।’

বিশ্বকাপ ট্রফিতে চুমু খাচ্ছেন আগুয়েরো

বিশ্বকাপ জেতার পর নিজের উদ্দাম উদ্‌যাপন নিয়েও বলেছেন আগুয়েরো, ‘আমি প্রচুর পান করেছি। তবে আমি কিছু খাইনি। এটা নিয়ে মেসি খুব রাগ করেছে। আমরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, আমি পান করব না! মেসি আমাকে মদ্যপান থামাতে বলেছিল। কিন্তু আমরা তো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, আমার আনন্দের সীমা নেই। আমার শরীরের কথা চিন্তা করেই মেসি আমাকে মদ্যপান বন্ধ করতে বলেছিল।’

বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা দলের অংশ হয়ে পড়াটা দারুণ উপভোগ করেছেন বলেছেন সে কথাও, ‘আর্জেন্টিনা দলের খেলোয়াড়েরা আমাকে দলের সঙ্গে নিতে চেয়েছিল। ওদের কথা ছিল, তুমি খালি বিমানে এসে ওঠো। বাকিটা পরে দেখা যাবে। আমি সেটিই করতাম। কিন্তু বাড়িতে আমার কাছে আমার বাচ্চা ছিল। ওকে ফেলে কীভাবে যাই। আমি আমার স্ত্রীকে ফোন করে বলি, তুমি তাড়াতাড়ি এসো, আমি আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ দলের সঙ্গে কাতারে যাচ্ছি। আমার মাথা এলোমেলো হয়ে পড়েছিল। আমি কী করব, বুঝে উঠতে পারছিলাম না।’