কিলিয়ান এমবাপ্পে রিয়াল মাদ্রিদে খেলতে চান—এ–সম্পর্কিত নানা খবরে একসময় চাউর ছিল ইউরোপের ক্লাব ফুটবল। এমবাপ্পেই নিজেই একাধিকবার রিয়ালে যাওয়ার ইচ্ছার কথা বলেছিলেন। কিন্তু মুখে বললে কী হবে, শেষ পর্যন্ত পিএসজির সঙ্গেই নতুন চুক্তি করেছেন ফরাসি তারকা। রিয়াল ও তাঁকে ঘিরে গুঞ্জনটা তাই এখন মাটিচাপা।
এমবাপ্পেকে ১৭০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে রিয়াল মাদ্রিদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গিয়েছিল পিএসজির অনড় অবস্থানের কারণে। তারা কিছুতেই দলের ‘সেরা’ ফুটবলারকে ছাড়তে চায়নি। এমবাপ্পেকে না নিতে পেরে রিয়াল ঘোষণাই দিয়ে ফেলেছিল, এমবাপ্পের ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়েছে তারা। তাঁর বিষয়ে নতুন কোনো প্রস্তাব তোলার ব্যাপারটি স্থগিত হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, মাটিচাপা সেই গুঞ্জন আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এমবাপ্পেকে আবারও দলে নিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে রিয়াল। নিজেদের মধ্যে এমবাপ্পেকে দলে নেওয়া নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের নতুন ‘গ্যালাকটিকো’ প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারেন ফ্রান্সের হয়ে ২০১৮ বিশ্বকাপ জেতা এই তারকা।
টেলিগ্রাফের দাবি অনুযায়ী, রিয়াল এমবাপ্পেকে দলে নেওয়ার ভাবনা নতুন করে শুরু করেছে পিএসজির অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে। কয়েক দিন ধরেই পিএসজির ভেতর চলছে অস্থিরতা। চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলো থেকে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিদায় নেওয়ার পর থেকেই সবকিছু এলোমেলো পিএসজির।
কর্তৃপক্ষও তারকাসমৃদ্ধ দল বাদ দিয়ে তারকা তৈরি করার প্রকল্পের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সম্প্রতি লিওনেল মেসি পিএসজি কর্তাদের অনুমতি ছাড়াই সৌদি আরব সফরে গিয়ে ক্লাবের প্রতি আনুগত্যের ভিত নড়িয়ে দিয়েছেন। মেসিকে দলে রাখা না–রাখা নিয়েও পিএসজির মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গেছে। বিনা অনুমতিতে মেসির সৌদি সফরের পর পিএসজি তাঁর সঙ্গে চুক্তি বাড়ানোর আলোচনা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
যদিও অনেক কিছু বিবেচনা করে পিএসজি সেই পথ থেকে সরে এসেছে, কিন্তু সম্প্রতি মেসির সৌদি আরবের একটি ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার ব্যাপারে খবর ছড়িয়ে পড়ায় পিএসজির মেসি-সংক্রান্ত সমস্যা আরও বাড়াটাই স্বাভাবিক।
ক্লাবের সমর্থকদের দিক দিয়েও চাপে আছেন ক্লাবের কর্তারা। মেসির সৌদি সফরের পর তাঁকে ‘ভাড়াটে ফুটবলার’ বলা, আরেক তারকা নেইমারের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ—ক্লাবের সমস্যা শুধুই বেড়েই চলেছে। মোটকথা, ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় ক্লাব এখন অস্থির সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, রিয়াল এ মুহূর্তে এমবাপ্পেকে দলে ভেড়াতে এ অস্থিরতাকেই কাজে লাগাতে চায়।
এমবাপ্পে কিছুদিন আগে পিএসজির হয়ে অন্তত একবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার অভিপ্রায় ব্যক্ত করলেও ক্লাবের সমালোচনা করতে ছাড়েননি। সম্প্রতি পিএসজির একটি প্রচারণামূলক ভিডিওতে অনুমতি না নিয়ে তাঁর ছবি ও ফুটেজ ব্যবহার ও সেই ভিডিওতে তাঁর ছবির আধিক্য থাকায় নিজের ক্ষোভ ও বিরক্তিও গোপন রাখেননি, ‘এই ক্লাব অবশ্যই কিলিয়ান সেন্ট জার্মেইঁ নয়।’
গত বছর মে মাসে পিএসজির সঙ্গে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দুই বছরের চুক্তি সই করেছিলেন এমবাপ্পে। সেই চুক্তিতে চাইলে ২০২৫ পর্যন্ত চুক্তি বৃদ্ধির একটা ধারা ছিল। এ মৌসুম শেষে পিএসজির সঙ্গে আরেক মৌসুম চুক্তি বাকি থাকবে এমবাপ্পের। এই সময় পিএসজির ওপর রিয়ালের মতো ক্লাব এমবাপ্পের জন্য চাপ তৈরি করতেই পারে।
তবে পিএসজি এমবাপ্পেকে রেখে দিতে সম্ভব সবকিছুই করতে রাজি। ২০২২ সালেও এমনভাবেই পিএসজি এমবাপ্পেকে রেখে দিয়েছিল। মেসি বা নেইমার নন, এমবাপ্পেকে কেন্দ্রীয় চরিত্র বানিয়েই পিএসজি নতুন স্বপ্ন দেখতে চায়। তাঁর সঙ্গে ওয়ারেন জা রে এমিরে ও এল শাদিলে বিৎশিয়াবুদের মতো তরুণ প্রতিভাদের যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে চায় পিএসজি। সে কারণেই এই মৌসুমে এমিরে ও বিৎশিয়াবুদের বেশি করে ম্যাচ খেলাচ্ছে ফরাসি ক্লাবটি।
গত মৌসুমে রিয়াল এমবাপ্পেকে যখন নিতে পারেনি, তখন লা লিগা পিএসজির বিরুদ্ধে উয়েফার কাছে আর্থিক সংগতি নীতি ভঙ্গের অভিযোগ করেছিল। এমবাপ্পেকে যে পরিমাণ বেতন বাড়িয়ে পিএসজি রেখে দিয়েছিল, সেটিকে ‘কেলেঙ্কারি’ বলতেও দ্বিধা করেনি লা লিগা কর্তৃপক্ষ।
এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল যদি চ্যাম্পিয়ন হতে পারে, তবে সেটি হবে সর্বশেষ ৯ বছরে তাদের পঞ্চম ইউরোপসেরার খেতাব। সেমিফাইনাল প্রথম লেগে বার্নাব্যুতে তারা ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছে। সিটির মাঠে দ্বিতীয় লেগটা তাই তাদের অগ্নিপরীক্ষাই।