এ যেন রাজার মতো ফেরা! শেখ মোরছালিনের ক্ষেত্রে ‘ফেরা’ শব্দটার ব্যবহার একটু দ্রুতই হয়ে গেল। যে খেলোয়াড়ের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার মাত্র ৮ ম্যাচের, তাঁর আবার ফেরা কী!
বিতর্কিত এক কাণ্ডে জড়িয়ে জাতীয় দল থেকে মাঝে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন মোরছালিন। গত সেপ্টেম্বরে নিজ ক্লাব বসুন্ধরা কিংসের হয়ে এএফসি কাপ খেলতে মালদ্বীপ গিয়ে কয়েকজন সতীর্থের সঙ্গে তিনিও পড়ে গিয়েছিলেন শৃঙ্খলাজনিত সমস্যায়। অপরাধের মাত্রা কম হওয়ায় নিষেধাজ্ঞাটা দীর্ঘ হয়নি। জাতীয় দলে ফিরেছেন মেলবোর্নে গত সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচেই, তবে সে ম্যাচে একাদশে সুযোগ পাননি। বদলি হিসেবে নামলেও ঝলক দেখাতে পারেননি সেভাবে।
আজ ঘরের মাঠে সেই মোরছালিন যেন প্রায়শ্চিত্ত করলেন সবকিছুর। লেবাননের বিপক্ষে কিংস অ্যারেনায় দারুণ এক গোলে বাংলাদেশ দলকে এক পয়েন্ট এনে দারুণভাবেই দিলেন ফিরে আসার বার্তা।
গত জুনে বেঙ্গালুরুতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে মালদ্বীপের বিপক্ষে গোল করে নিজেকে চিনিয়েছিলেন মোরছালিন। দুর্দান্ত গোল করেছেন ভুটানের বিপক্ষে গ্রুপ পর্যায়ের শেষ ম্যাচেও। গত সেপ্টেম্বরে ঢাকার কিংস অ্যারেনায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে আরও এক গোল। অনেক দিন পর দেশের ফুটবল যেন খুঁজে পেল দারুণ সম্ভাবনাময় ফুটবলার।
কিন্তু এর পরপরই ছন্দপতন। মালদ্বীপে এএফসি কাপ খেলে ফেরার সময় সিনিয়র সতীর্থদের সঙ্গে মদকাণ্ডে জড়িয়ে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলেন। সেই মোরছালিনই আজ লেবাননের বিপক্ষে জাতীয় দলের একাদশে ফিরে দূরপাল্লার শটে আবারও করলেন অসাধারণ এক গোল। মোরছালিন আগেই বলেছিলেন, দেশের হয়ে অনেক গোল করতে চান। একের পর এক গোল করে সেই সামর্থ্যেরই যেন জানান দিয়ে যাচ্ছেন ২৫ নভেম্বর ১৮–তে পা দিতে যাওয়া এই তরুণ।
আজ লেবাবনের বিপক্ষে পুরো ম্যাচেই দুর্দান্ত খেলেছে বাংলাদেশ দল। ড্র নয়, এমন ম্যাচে জয়টাই প্রাপ্য ছিল জামাল ভূঁইয়ার দলের। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ৭৯ ধাপ (বাংলাদেশ ১৮৩, লেবানন ১০৪) এগিয়ে থাকা লেবাননকে রুখে দিয়েও তাই পুরোপুরি তৃপ্ত হতে পারছেন না মোরছালিন। ম্যাচের দুই অর্ধে যে নিজেই নষ্ট করেছেন দুটি গোলের সুযোগ! ম্যাচ শেষে তবু সান্ত্বনা, তাঁর গোলেই হার এড়াতে পেরেছে দল, ‘আলহামদুলিল্লাহ সবকিছুর জন্য। আমরা আজ আমার গোলে ড্র করে মাঠ ছেড়েছি, এটাতেই খুব ভালো লাগছে।’
নিষিদ্ধ থাকায় বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের প্রাথমিক রাউন্ডে মালদ্বীপের বিপক্ষে খেলতে পারেননি দুটি ম্যাচ। এখন আর সেই দুঃসহ সময়টা মনে করতে না চাইলেও দারুণভাবে ফিরে আসার শপথটা নিয়েছিলেন ওই সময়েই, ‘খেলতে না পেরে খারাপ লেগেছে। তবে আমি নিজেকে মানসিকভাবে তৈরি রেখেছিলাম। আমার লক্ষ্য ছিল যখনই জাতীয় দলের জার্সিতে মাঠে নামার সুযোগ পাব, নিজের শতভাগ উজাড় করে খেলব।’
দুই হলুদ কার্ডের কারণে আজ খেলতে পারেননি রাকিব হোসেন। দলের অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ডের অনুপস্থিতি মোরছালিন আর ফয়সাল আহমেদের দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। মোরছালিন ছিলেন লেবাননের রক্ষণের মূর্তিমান আতঙ্ক। নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্বটা ঠিকভাবে পালন করতে পেরে মোরছালিন খুশি, ‘রাকিব ভাই না থাকায় আমাদের ওপর বাড়তি দায়িত্ব ছিল। আমরা সবাই সচেতন ছিলাম। দলের অন্যরাও আজ শতভাগের বেশি দিয়েছে।’
পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পাওয়া মোরছালিন পড়াশোনা ও খেলাধুলা দুটিতেই ছিলেন ক্ষুরধার। বৃত্তির টাকায় বুট কিনেই তাঁর ফুটবলার হয়ে ওঠা। কোনো বয়সভিত্তিক দলে খেলেননি। বিকেএসপি থেকে তাঁকে খুঁজে আনে বসুন্ধরা কিংস। এরপর একেবারে জাতীয় দলে। মাঝে প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডানের জার্সিতে খেলেছেন কিছুদিন। যখনই সুযোগ পেয়েছেন চেষ্টা করেছেন নিজেকে চেনাতে। আজ জাতীয় দলের জার্সিতে আরও একবার সেই চেষ্টায় সফল মোরছালিন।