এমনিতে তাঁদের মুখোমুখি হওয়ার খুব বেশি সুযোগ ছিল না এই মৌসুমে। একজনের দল খেলে প্রিমিয়ার লিগে, অন্যজনের দল চ্যাম্পিয়নশিপে। একটাই টুর্নামেন্ট ছিল, যেখানে এবার মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ ছিল গুরু-শিষ্যের। নিয়তিও সেই টুর্নামেন্টটাকেই বেছে নিয়েছে। এফএ কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে আজ রাতে মুখোমুখি হচ্ছে পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটি ও ভিনসেন্ট কোম্পানির বার্নলি।
ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে ১১ বছর খেলেছেন কোম্পানি। ৮ বছর দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, চারটি প্রিমিয়ার লিগ, দুটি এফএ কাপ, চারটি লিগ কাপের ট্রফি জিতেছেন। তবে এসব অর্জন ছাপিয়ে ভিনসেন্ট কোম্পানিকে ম্যানচেস্টার সিটির সমর্থকেরা মনে রাখবেন আরও একটা কারণে। তাঁর ওই সময়টাতেই ধীরে ধীরে ইংলিশ ফুটবলের পরাশক্তি হয়ে উঠেছে সিটি। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ‘গোলমেলে প্রতিবেশী’ থেকে হয়ে উঠেছে ইংলিশ ফুটবলের বড় নাম।
সিটিতে কোম্পানির সেই পথচলার গুরুত্বপূর্ণ একটা সময় কেটেছে কোচ পেপ গার্দিওলার অধীনে। সিটিতে গার্দিওলার অধীনে তিন মৌসুম অধিনায়কত্ব করেছেন বেলজিয়ান সেন্টারব্যাক, জিতেছেন দুটি প্রিমিয়ার লিগ, একটি এফএ কাপ ও দুটি লিগ কাপ। তবে শুধু কোচ-অধিনায়ক সম্পর্ক ছাপিয়ে এই সময়ে দুজন হয়ে উঠেছিলেন বন্ধু। কোম্পানি সব সময়ই তাঁর ক্যারিয়ারে গার্দিওলার বড় ভূমিকার কথা জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে গেছেন। গার্দিওলাও অনেকবারই বলেছেন, সিটিতে নিজের উত্তরসূরি হিসেবে কোম্পানিকেই সবচেয়ে বেশি পছন্দ।
খেলোয়াড়ি জীবন শেষে কোম্পানি কোচিং পেশাকেই বেছে নিয়েছেন। অ্যান্ডারলেখটের কোচ হিসেবে তিন মৌসুম ডাগআউটে দাঁড়ানোর পর কোম্পানি দায়িত্ব পেয়েছেন বার্নলির। তারপর বলতে গেলে চমকের পর চমক দেখিয়ে যাচ্ছেন। এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়নশিপে এখন পর্যন্ত ৩৭ ম্যাচ খেলে ৮৩ পয়েন্ট বার্নলির। দ্বিতীয় স্থানে থাকা শেফিল্ডের চেয়ে ১৩ পয়েন্ট এগিয়ে। চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে বার্নলি আগামী মৌসুমের প্রিমিয়ার লিগে উঠে আসবে বলেই মনে হচ্ছে। আর গার্দিওলা তো ২০২৫ পর্যন্ত সিটির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেই রেখেছেন। ফলে আগামী মৌসুমে লিগে গুরু-শিষ্য একে অন্যের প্রতিপক্ষ হতে যাচ্ছেন, এটা নিশ্চিত। তবে তার আগে আজ একটা মহড়া হয়ে যাবে দুজনের মুখোমুখি লড়াইয়ের।
তাঁর কোচ হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা যে গার্দিওলার, এটা কোম্পানি আগেই বলেছেন, ‘তিনি আমাকে খেলাটা অন্যভাবে দেখতে শিখিয়েছেন। আমার কাছে তিনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেমন গুরুত্বপূর্ণ আরও অনেক খেলোয়াড় ও কোচের কাছে।’
একসময়ের শিষ্যের এই সাফল্যে খুশি গার্দিওলাও। উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, একদিন সে (কোম্পানি) ম্যানচেস্টার সিটির কোচ হবে, এটা নিয়তি নির্ধারিত। ওর মতো ভালো, এই ক্লাবটাকে খুব কম খেলোয়াড়ই চেনে। এখানেই ওর নিয়তি লেখা।’
গুরুর এই প্রশংসায় আপ্লুত কোম্পানি। তবে খুব জলদি সিটির দায়িত্ব নেওয়ার মতো যোগ্য নিজেকে মনে করছেন না কোম্পানি, ‘আমি মনে করি সিটিতে সব সময় বিশ্বের সেরা কোচের থাকা উচিত এবং আমি সেই কোচ নই। আমি চাই সেরা কোচদের বিপক্ষে লড়ে নিজের পরীক্ষা দিতে।’
আজ রাতে তাহলে তো সে রকমই একটা পরীক্ষা দিতে যাচ্ছেন কোম্পানি। সেই পরীক্ষায় কোম্পানি পাস করে গেলে হয়তো গার্দিওলাই সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন!