মাঠের মানুষ সর্বোচ্চ কত দিন মাঠের বাইরে থাকতে পারেন—এ নিয়ে একটা প্রতিযোগিতা হলে নেইমার নিশ্চিতভাবেই ওপরের সারিতে থাকতেন! গত এক দশকে ৩৩ বার চোটে পড়েছেন পিএসজির ব্রাজিলিয়ান তারকা। সে সব চোট তাঁকে ৮৮০ দিন খেলা থেকে দূরে রেখেছে।
সর্বশেষ ফরাসি লিগ আঁতে লিলের বিপক্ষে নতুন করে অ্যাঙ্কেলের চোটে পড়ে মৌসুমই শেষ হয়ে গেছে নেইমারের। চোট থেকে সেরে উঠতে সম্প্রতি অস্ত্রোপচার করিয়েছেন ৩১ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড।
মাঠের সঙ্গে নেইমারের দূরত্ব যতই বাড়ুক, ক্রীড়াসামগ্রী প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে তিনি চাহিদার তুঙ্গে। বুটের চুক্তিতে তো তাঁর ধারেকাছেও কেউ নেই।
২০২০ সালে বিশ্বের শীর্ষ ক্রীড়াসামগ্রী প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নাইকির সঙ্গে ১৫ বছরের চুক্তি শেষ হয় নেইমারের। এরপর তিনি চুক্তি করেন জার্মান প্রতিষ্ঠান পিউমার সঙ্গে। বর্তমানে পিউমার বুট পায়ে দিয়ে বছরে নেইমার ২ কোটি ৫৯ লাখ ইউরো বা ২৯০ কোটি টাকা আয় করেন; যা ক্রীড়া ইতিহাসে পৃষ্ঠপোষক কোম্পানির সঙ্গে সবচেয়ে বড় ব্যক্তিগত চুক্তি। চুক্তিপত্রে আরও বেশি আয়ের সুযোগ আছে নেইমারের। চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে পারলে বছরে ৩৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বোনাস পাবেন তিনি।
বুটের এই চুক্তিতে নেইমারের ধারেকাছে কেউ নেই। তিন যুগ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আর্জেন্টিনাকে তৃতীয় বিশ্বকাপ ট্রফি এনে দেওয়া লিওনেল মেসি বুটের চুক্তি থেকে বছরে পান ২ কোটি ৩ লাখ ইউরো বা ২২৬ কোটি টাকা। মানে, পিএসজি সতীর্থ নেইমারের চেয়ে ৬৪ কোটি টাকা কম পান মেসি। তাঁর সঙ্গে আজীবনের চুক্তি করেছে আরেক জার্মান প্রতিষ্ঠান অ্যাডিডাস। শীর্ষ ক্রীড়াসামগ্রী প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের তালিকায় নাইকির পরেই অ্যাডিডাসের অবস্থান।
তালিকার তিনে আছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। নাইকির সঙ্গে পর্তুগিজ মহাতারকার চুক্তিও চিরকালের। নাইকির বুট পরে খেলতে নেমে বছরে ১ কোটি ৬৯ লাখ ইউরো বা ১৮৯ কোটি টাকা পান সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসরে যোগ দেওয়া রোনালদো, যা নেইমারের চেয়ে ১০১ কোটি টাকা কম।
হালের অন্যতম সেরা কিলিয়ান এমবাপ্পের পৃষ্ঠপোষক হতে ২০১৯ সালে উঠেপড়ে লেগেছিল নাইকি ও অ্যাডিডাস। শেষ পর্যন্ত প্রথমটিকেই বেছে নেন এমবাপ্পে। যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিটির বুট পরায় বছরে তাঁর অ্যাকাউন্টে জমা হয় ১ কোটি ৫৮ লাখ ইউরো বা ১৭৬ কোটি টাকা। তাদের সঙ্গে ১০ বছরের চুক্তি আছে বিশ্বকাপজয়ী তারকার। তবে এ মুহূর্তে তালিকার চারে থাকলেও পিএসজির হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে বারবার ব্যর্থ হওয়ায় তাঁর চাহিদা পড়তির দিকে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল জানিয়েছে, পিএসজির হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে না পারলে অথবা রিয়াল মাদ্রিদে যোগ না দিলে এমবাপ্পের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে নাইকি।
বুটের চুক্তিতে এমবাপ্পের চাহিদা পড়তির দিকে থাকলেও সম্প্রতি সবচেয়ে বড় চমক দেখিয়েছেন জ্যাক গ্রিলিশ। ম্যানচেস্টার সিটির ইংলিশ উইঙ্গার নাইকির সঙ্গে পাট চুকিয়ে পিউমার সঙ্গে ১০ বছরের চুক্তি করেছেন। তাদের বুট পায়ে দিয়ে বছরে ১ কোটি ১২ লাখ ইউরো বা ১২৬ কোটি টাকা আয় করবেন তিনি।
বর্তমানে এটাই কোনো পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্রিটিশ খেলোয়াড়ের সবচেয়ে লাভজনক চুক্তি। এত দিন বছরে ৪৫ লাখ ১৬ হাজার ইউরো বা ৫০ কোটি টাকা নিয়ে ব্রিটিশ ফুটবলারদের মধ্যে যৌথভাবে শীর্ষে ছিলেন হ্যারি কেইন ও সম্প্রতি ফুটবলকে বিদায় জানিয়ে দেওয়া গ্যারেথ বেল।
২৭ বছর বয়সী গ্রিলিশের সঙ্গে পিউমার চুক্তির পথটা সহজ করে দিয়েছেন পেপ গার্দিওলা। সিটি কোচ অনেক দিন হলো প্রতিষ্ঠানটির দূত হিসেবে কাজ করছেন। সিটিজেনদেরও চার বছর ধরে ক্রীড়াসামগ্রী সরবরাহ করে যাচ্ছে পিউমা।
রবার্ট লেভানডফস্কি, আর্লিং হলান্ড, করিম বেনজেমাদের মতো তারকাদের ছাপিয়ে কীভাবে বুটের চুক্তিতে শীর্ষ পাঁচে উঠে এলেন গ্রিলিশ? পিউমাই বা কেন তাঁর দিকেই ঝুঁকল? এর ব্যাখ্যায় ব্লিচার রিপোর্ট জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব খেলোয়াড়ের অনুসারী বেশি, ক্রীড়াসামগ্রী প্রস্তুতকারক ব্র্যান্ডগুলো এখন তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতা করতে বেশি আগ্রহী। ব্র্যান্ডগুলো মনে করে, এসব খেলোয়াড়ের ভক্ত ধরে রাখার শক্তি আছে। যাঁদের অনুসারী বেশি, তাঁদের একটা পোস্ট মানেই ওই ব্র্যান্ডের ব্যাপক প্রচার।
এ ব্যাপারে ক্রীড়া বিপণন এজেন্ট এহসেন শাহ বলেছেন, ‘কোনো ব্র্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি করার সময় ফুটবলাররা আগে শুধু টাকার কথা ভাবতেন। তবে এখন তাঁরা যথেষ্ট সচেতন। বর্তমানে খেলোয়াড়েরা বুটের মান পরীক্ষা করেন। তাঁরা জুতার তলি এবং ওজন ভালোভাবে যাচাই করেন। এরপর তাঁরা ব্র্যান্ডের সুযোগ–সুবিধা নিয়ে ভাবেন। তবে যে ব্র্যান্ডের জুতা পরে তাঁরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন ও নিজের সেরাটা খেলতে পারেন, সেটাকেই বেছে নেন। এ ছাড়া তাঁদের হাতে এখন অনেক বিকল্প।’
মেসি–রোনালদোরা অ্যাডিডাস ও নাইকির সঙ্গে আজীবন চুক্তি করে ফেলায় চাইলেই ব্র্যান্ড পরিবর্তন করতে পারবেন না। এখান থেকে বাড়তি আয়েরও সুযোগ নেই তাঁদের। তবে বর্তমানে ফুটবলাররা বুটের চুক্তিতে মেসি–রোনালদোর পথে হাঁটেন না। তাঁরা কয়েক বছরের চুক্তি করায় মেয়াদ শেষে ব্র্যান্ড পাল্টাতে পারেন। এ ছাড়া মাঠে ভালো পারফরম্যান্সের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুসারী বেশি হলে তাঁদের পৃষ্ঠপোষক হতে ক্রীড়াসামগ্রী প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো অঢেল অর্থ ঢালতেও কার্পণ্য করে না।