লিওনেল মেসিকে গত ১৬ জুলাই বরণ করে নেয় ইন্টার মায়ামি। পিএসজিতে অম্লমধুর সময় পার করে আসা মেসিকে তখন থেকেই প্রাণোচ্ছল দেখাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলে তাঁর শুরুটাও হয়েছে দুর্দান্ত। তিনি আসার আগে যে মায়ামি সর্বশেষ ১০ ম্যাচে মাত্র ১টি জিতেছিল, সেই দলই তাঁর ছোঁয়ায় জিতেছে টানা ৬ ম্যাচ। মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) ক্লাবটির হয়ে এখন পর্যন্ত সব ম্যাচেই গোল করেছেন মেসি। ৬ ম্যাচে তাঁর গোল ৯টি, গোলে সহায়তা একটি।
মেসির আগমনে শুধু মায়ামিই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রীড়াঙ্গনেই নতুন দিনের সূচনা হয়েছে। কিন্তু যিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন, যাঁর কারণে দেশটির ফুটবলীয় বাজারে বাঁকবদল হয়েছে, সেই মেসির অনুভূতি জানার সুযোগ হচ্ছিল না। হবে কী করে, মায়ামিতে যোগ দেওয়ার পর যে এত দিন একবারও সংবাদ সম্মেলনে আসেননি মেসি! সংবাদমাধ্যমগুলোর সেই অপেক্ষাও অবশেষে ফুরিয়েছে।
রোববার লিগস কাপের ফাইনালে নাশভিলের মুখোমুখি হবে ইন্টার মায়ামি। ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে ক্লাবটি তাদের প্রতিনিধি হিসেবে মেসিকে পাঠিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলে নাম লেখানোর পর এটাই তাঁর প্রথম সংবাদ সম্মেলন। সেটা শেষ করেই স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ‘মায়ামি হেরাল্ড’কে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মেসি।
সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপচারিতায় মেসি মার্কিন ফুটবলের বাঁকবদল, তাঁকে ঘিরে সমর্থকদের উন্মাদনা ও প্রত্যাশা এবং ক্যারিয়ারে প্রাপ্তি নিয়ে যেমন কথা বলেছেন, তেমনি মায়ামিতে নতুন জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারেও অল্পবিস্তর আলোচনা করেছেন। জানিয়েছেন, নতুন ক্লাবে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই আছেন।
মেসির মায়ামিপ্রীতি অবশ্য আরও আগে থেকেই ছিল। ছুটি কাটানোর জন্য তাঁর পছন্দের জায়গাগুলোর একটি এই শহর। সেখানকার পোরশে ডিজাইন টাওয়ারে ২০১৯ সালে ৯০ লাখ ডলারের একটি বাড়ি কিনে রেখেছিলেন। বাল হারবার ও অ্যাভেনচুরার মাঝামাঝি বিলাসবহুল ৬০ তলার সেই টাওয়ার ইন্টার মায়ামির মাঠ ডিআরভি পিএনকে স্টেডিয়াম থেকে ২৫ মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত।
তবে ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেওয়ার আগে এই শহরে তিনি ঠিক কতবার এসেছেন, এখন আর স্পষ্ট করে মনে করতে পারছেন না, ‘মায়ামিতে আমি বহুবার এসেছি। প্রথমবার কবে এসেছি, নির্দিষ্ট করে বলতে পারছি না। সম্ভবত একটা প্রীতি ম্যাচ খেলতে এসেছিলাম। পরিবার নিয়েও এখানে অনেকবার এসেছি।’
মায়ামির অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণে। ফ্লোরিডার মহানগরীগুলোর মধ্যে মায়ামিই আয়তনে সবচেয়ে বড়। নতুন শহরে গাড়ি চালাতে কোনো বেগ পেতে হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নে মেসি বলেছেন, ‘বড় শহরে যানজট লেগেই থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। প্যারিসেও যানজটের মধ্যে পড়তে হয়েছে। বুয়েনস এইরেস ও বার্সেলোনাতেও তাই। যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হলে আপনাকে একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বেরোতে হবে। ধৈর্যও থাকতে হবে। অস্থিরতা দেখালে চলবে না।’
দক্ষিণ ফ্লোরিডায় লাতিন আমেরিকার একটি বিশাল জনগোষ্ঠী বাস করে। স্প্যানিশ ভাষাভাষীর মানুষের তাই অভাব নেই। তবে ব্যাপারটি মেসিকে মোটেও বিস্মিত করেনি, ‘আমি মোটেও অবাক হইনি। জানতাম, এখানে বহু লাতিন বাস করে, তাদের মধ্যে থাকতে পারাটা দারুণ। তারা আমার খেলা দেখতে মাঠে আসে। এখন তাদের সঙ্গে থাকতে পারা, খেলা উপভোগ করতে পারা দারুণ ব্যাপার। আমরা লাতিনরা নিজেদের পছন্দের ব্যাপারে খুব আবেগপ্রবণ এবং প্রতিদিনের কর্মকাণ্ডেও সেই আবেগের তীব্র প্রকাশ ঘটে। এখানে তাই নিজেকে বাইরের কেউ মনে হচ্ছে না।’
যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ব্যাপারে মেসি বলেছেন, ‘এখানে আসার আগে দেড় মাস ছুটি কাটিয়েছি। শুরুর দিকে অনুশীলন করা ও খেলার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া খুব কঠিন ছিল। এখানে প্রচণ্ড গরম ও আর্দ্রতা বেশি। আমার যেসব বন্ধু এখানেই পুরো জীবন কাটিয়েছে, তাদের সঙ্গেও এ নিয়ে নিয়ে কথা হয়েছে। তাদেরও এ ধরনের আবহাওয়ায় ভুগতে হয়। সত্যি বলতে আমাকে পরিস্থিতির সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিতে হয়েছে। এখানে টিকে থাকার সেরা উপায় হলো এখানকার আবহাওয়ার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে পড়া। এখন বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই আছি।’
ইউরোপে জীবন্ত ঘাসের মাঠে খেলে অভ্যস্ত। যুক্তরাষ্ট্রে এসে কৃত্রিম ঘাসে (আর্টিফিশিয়াল টার্ফ) খেলতে হচ্ছে। এ ধরনের মাঠের সঙ্গে কীভাবে মানিয়ে নিলেন? মেসির উত্তর, ‘তরুণ বয়সে কৃত্রিম ঘাসের মাঠে খেলেছি। অনেক দিন পর আবার খেলছি। টার্ফে খেলতে আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’