বদলি নেমেই ‘হিরো’ সাদউদ্দিন
বদলি নেমেই ‘হিরো’ সাদউদ্দিন

বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব

বদলি নেমেই বাংলাদেশকে হার থেকে বাঁচালেন সাদউদ্দিন

সাদ উদ্দিন নিজেকে ‘সুপারসাব’ বলতেই পারেন। ৮৬ মিনিটে গোল খেয়ে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশকে যে হারের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন বদলি নামা সাদই। ম্যাচের যোগ করা সময়ে রাকিবের ক্রস থেকে সাদের গোলেই ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের প্রাথমিক রাউন্ডে মালেতে মালদ্বীপের সঙ্গে অ্যাওয়ে ম্যাচ ১–১ গোলে ড্র করেছে হাভিয়ের কাবরেরার দল। ১৭ অক্টোবর ঢাকার বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনার হোম ম্যাচে জিতলেই বিশ্বকাপের মূল বাছাইপর্বে জায়গা করে নেবে বাংলাদেশ।

মালদ্বীপ থেকে বাংলাদেশ অবশ্য জয় নিয়েই ফিরতে পারত। বাংলাদেশের ফুটবলে চিরকালীন যে সমস্যা—‘গোল করতে না পারা’, সেটিই আজ বাংলাদেশের জয়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ফরোয়ার্ড ফয়সাল আহমেদ ফাহিম আজ রাতে কীভাবে ঘুমাবেন, কে জানে! ৪০ মিনিটে তিনি নিশ্চিত সুযোগ নষ্ট করেন, ৬৯ মিনিটে রাকিবের ক্রস থেকে মালদ্বীপের গোলপোস্টের সামনে থেকে যে মিসটি করেন, সেটির জন্য নিজেকে ক্ষমা করবেন কীভাবে! এর আগে ৫৬ মিনিটে রাকিবের থ্রু থেকেই মালদ্বীপের গোলকিপারকে একা পেয়েও বাইরে মারেন ফাহিম। সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে আজ তাঁর হ্যাটট্রিকও হয়ে যেতে পারত।

গোলের সুযোগ নষ্ট করেছেন ফাহিম

গোল মিসের খেসারত বাংলাদেশ দিয়েছিল ৮৬ মিনিটে। মালদ্বীপের হাসান নাজিম বাংলাদেশের রক্ষণকে বোকা বানিয়ে গোল করেন পরিকল্পিত আক্রমণ থেকে। নিশ্চিত হারের ম্যাচটিই শেষ দিকে মাঠে নামা সাদ উদ্দিন গোল করে বাঁচিয়েছেন।

দুই দলই খেলেছে প্রায় সমানে–সমান। বুটে-বুটে ঠোকাঠুকি যাকে বলে। ব্যক্তিগত স্কিলে মালদ্বীপ দল এগিয়ে থাকলেও বাংলাদেশও কম যায়নি। তবে বাংলাদেশের আক্রমণগুলো পরিণতি পায়নি গোল মিসের কারণে। প্রথমার্ধের ২৫ মিনিটে বাংলাদেশ গোল পেতে পারত। কিন্তু একটি রাকিবের শট অল্পের জন্য বার ঘেঁষে চলে যায়।

রাকিবের ক্রস থেকেই গোল করেন সাদউদ্দিন

৩৫ মিনিটে সোহেল রানার কর্নার থেকে রাকিবের হেড আবারও বাইরে দিয়ে চলে যায়। ৪০ মিনিটে একটি আক্রমণ থেকে মালদ্বীপের বক্সে বল পেয়ে গিয়েছিলেন ফাহিম। কিন্তু খুব কাছ থেকে নেওয়া তাঁর শট জাল খুঁজে পায়নি। পরের মিনিটেই ফাহিম আবারও প্রায় একক প্রচেষ্টায় বল নিয়ে মালদ্বীপ সীমানায় ঢুকে যে শটটি নেন, তা সাইডবার ঘেঁষে বাইরে চলে যায়। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে মালদ্বীপের ডি–বক্সের বাইরে ফ্রি–কিক পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু জামাল ভূঁইয়ার শট সরাসরি চলে যায় মালদ্বীপ গোলকিপার হুসেইন শরীফের হাতে।

শেষ পর্যন্ত ড্রটাই এসেছে জয়ের সমান আনন্দ নিয়ে

দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ আক্রমণ করেছে বারবারই। কিন্তু মালদ্বীপের আক্রমণগুলোর ধার বেশি ছিল। ৫৬ মিনিটে ফাহিমের মিসের পর ৬৫ মিনিটে মালদ্বীপ গোল পেতে পারত। কিন্তু গোলকিপার মিতুল মারমা কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন মালদ্বীপ অধিনায়ক আলী ফাসিরের প্রচেষ্টা। ৬৬ মিনিটে মালদ্বীপ আরও একটি গোলের সুযোগ নষ্ট করে। দ্বিতীয়ার্ধে মালদ্বীপের কোচ মোহাম্মদ সুজাইন কয়েকটি পরিবর্তন করে মালদ্বীপের আক্রমণের ধার বাড়ান। ৬৯ মিনিটে ফাহিম রাকিবের ক্রস থেকে করেন সেই মিসটি।

মাঠে নেমেই গোল করলেন সাদ

বাংলাদেশ কোচ কাবরেরাও দ্বিতীয়ার্ধে পরিবর্তন আনেন একাদশে। জামাল ভূঁইয়ার বদলে নামান রবিউল হাসানকে। আর ফাহিমের জায়গায় মজিবর রহমান জনিকে। মাঠে নেমেই রবিউল দারুণ একটা শট নিয়েছিলেন মালদ্বীপের গোলে। কিন্তু গোলকিপার কোনোমতে সেটি কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন। ৭৬ মিনিটে মালদ্বীপ আরও একটি নিশ্চিত সুযোগ নষ্ট করে। শেষ দিকে মোহাম্মদ হৃদয়ের জায়গায় নামানো হয় জায়েদ আহমেদকে। ৮৬ মিনিটে ১–০ গোলে এগিয়ে যায় মালদ্বীপ। ৮৯ মিনিটে বিশ্বনাথ ঘোষের জায়গায় মাঠে নামেন সাদ উদ্দিন। রাকিবের ক্রস থেকে সহজেই পোস্টে বল ঠেলে সাদ মহামূল্যবান গোলটি করেন যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে।

মালদ্বীপের মাটিতে এর আগে কখনোই জিততে পারেনি বাংলাদেশ। সেই রেকর্ডের পরিবর্তন আজও হয়নি। মালের মাঠে আবারও জয়হীন বাংলাদেশ। কিন্তু ৮৬ মিনিটে গোল খেয়ে সেই গোল শোধ করা দলটি আজ মালে থেকে হোম ম্যাচের অনুপ্রেরণা নিয়েই ফিরছে।